ইসরায়েলের হামলায় গাজায় চিকিৎসক মায়ের ৯ শিশু সন্তান নিহত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:৩৩ এএম, ২৫ মে ২০২৫ রবিবার
দশ সন্তানের মধ্যে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু আদম (১১)
গাজায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় একজন নারী চিকিৎসকের দশ শিশু সন্তানের মধ্যে ৯ জনই মারা গেছে। ওই চিকিৎসক খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কাজ করতেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ডাঃ আলা আল-নাজ্জারের স্বামী ও তাদের এক সন্তান আহত অবস্থায় বেঁচে গেছে।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ব্রিটিশ সার্জন গ্রায়েমে গ্রুম বিবিসিকে বলেছেন, এটি অসহনীয় নিষ্ঠুরতা, বহু বছর ধরে শিশুদের জন্য কাজ করা একজন চিকিৎসক তার প্রায় সব সন্তান হারিয়েছেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা শুক্রবার খান ইউনিসে সন্দেহভাজন কিছু জায়গায় বিমান হামলা চালিয়েছে।
জানা গেছে, ওই চিকিৎসকের নাম আলা নাজ্জার। তিনি দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কর্মরত আছেন। হামলার সময় তিনি হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলেন। সেখানে আহত গাজাবাসীর চিকিৎসা করছিলেন তিনি। ঠিক ওই সময়েই নিজ বাড়িতে ইসরায়েলের বিমান হামলার খবর পান নাজ্জার।
এদিকে গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল শনিবার জানিয়েছেন, হামলার পর নাজ্জারের বাসা থেকে ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিস্ফোরণে জ্বলে যাওয়া ছোট ছোট শিশুদের দেহগুলো নাসের হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আলবোরশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, চিকিৎসক আলা আল-নাজ্জারকে তার কর্মস্থলে দিয়ে বাসায় ফেরেন তার স্বামী হামদি। এরপর কয়েক মিনিটের মধ্যে তাদের বাসায় হামলা চালানো হয়।
বৃটিশ সংবাদসংস্থা বিবিসি জানায়, আলা নাজ্জারের স্বামী তাকে হাসপাতালের কাজে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরই ইসরায়েলের বোমা হামলা হয়। ১০ সন্তান নিয়ে বাড়িতে থাকার সময়েই এই হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় বাড়ি। ১০ সন্তানের মধ্যে ৯ জনই মারা যায়। মৃত সন্তানদের সবারই বয়স ৬-১২ বছরের মধ্যে।
খান ইউনিস শহরের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চিকিৎসক নাজ্জারের স্বামী এবং ১১ বছর বয়সী এক সন্তানকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির চিকিৎসা চলছে।
শিশুদের বাবা গুরুতর জখম হয়েছেন বলে ইন্সটাগ্রামে এক ভিডিও পোস্টে জানিয়েছেন নাসের হাসপাতালের এক ব্রিটিশ সার্জন।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘গাজার মানুষ যুদ্ধের সবচেয়ে নির্মম অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি গত মার্চ থেকে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ জারি রাখারও নিন্দা করেন।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুনরায় গাজায় হামলা শুরু করে, যা জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে দেয়। সেই সময় থেকে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৩ হাজার ৭৪৭ জন নিহত ও প্রায় ১০ হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অবরুদ্ধ গাজায় আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হতে হয়েছে ইহুদিদের দেশ ইসরায়েলকে।
