ফুলের নাম পিওনি: আইরীন নিয়াজী মান্না
আইরীন নিয়াজী মান্না
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৪২ পিএম, ১ জুন ২০২৫ রবিবার
পিওনি ফুল।
হুট করে আপনি এ ফুলকে গোলাপ ভেবে বসতে পারেন। গোলাপের মতোই ঘন পাপড়িতে ভরপুর এটি। তবে আকারে কিছুটা বড় এই ফুলের পাপড়ির সংখ্যা একটু বেশি। প্রথম দেখাতেই হয়তো এই ফুলের প্রেমে পড়ে যাবেন। আর তাইতো একে বলা হয় প্রেম বা রোমান্সের প্রতীক। বলছি পিওনি ফুলের কথা। চিনে ফুলের রানি হিসেবে পরিচিত পিওনি। আমিও প্রথম এ ফুলের দেখা পাই চিনের রাজধানী বেইজিংয়ে। বেইজিংয়ে চাকরিসূত্রে আমার বেশ কয়েক বছর কেটেছে। বেইজিংয়ে চিন আন্তর্জাতিক বেতারের সদর দফতর (সিআরআই) ছিলো আমার কর্মস্থল। আমার অফিস প্রাঙ্গণে বেশ অনেকগুলো গাছ ছিলো।
প্রাকৃতিকভাবে এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে এই গাছ জন্মে। বিশ্বের অনেক দেশেই শোভাবর্ধনের জন্য পিওনি লাগানো হয়। কেবল বাগানের সৌন্দর্য বাড়াতে নয়, এই ফুল চা, সালাড, পাঞ্চ ও লেমোনেড তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়।
পিওনিকে ঘিরে কিছু ধারণাও প্রচলিত রয়েছে। বলা হয়, কোনো পরিবারে বিবাহযোগ্য কেউ থাকে তবে ড্রয়িংরুমে এই ফুলের ছবি রেখে দিলে পরিবারে সৌভাগ্য আসে এবং সেই তরুণ-তরুণী কাঙ্ক্ষিত সাথির সন্ধান পান। এছাড়াও বলা হয়, ঘরের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে এই ফুল রাখলে তা বিবাহযোগ্য ব্যক্তির জন্য শুভ। তবে সেই শুভ কাজ হয়ে গেলে দেয়ালে টাঙানো ফুলের ছবি সরিয়ে নিতে হয় এবং তা উপহার হিসেবে অন্য কাউকে দেওয়া উচিত বলে মনে করা হয়।
পিওনি গাছের কথা এসেছে প্রাচীন গ্রীক-রোমান লোককথায়। গ্রীক-রোমান মিথ অনুযায়ী, Paean হচ্ছে অ্যাপোলোর পূর্বনাম। অ্যাপোলোকে প্রাচীন গ্রীসের অধিবাসীরা দেবতা হিসেবে মানতো। অ্যাপোলোর ছেলের নাম এসক্লেপিয়াস। এসক্লেপিয়াসকে গড অব মেডিসিন বলা হয়। এসক্লেপিয়াস ও অ্যাপোলোর মাঝে থাকা কোনো এক দ্বন্দের কারণে জিউস (দেবতাদের রাজা) এসক্লেপিয়াসের ক্রোধ থেকে অ্যাপোলোকে বাঁচাতে অ্যাপোলোকে পিওনি ফুল বানিয়ে দেন। আবার গ্রিক পুরাণে বলা হয়, পিওন ছিলেন ওষুধ এবং চিকিৎসার দেবতা অ্যাসক্লেপিয়াসের অধীনে কর্মরত একজন চিকিৎসক।
পিওন চিকিৎসাবিদ্যায় বেশ পারদর্শী ছিলেন। দেবতা হ্যাডিস ও দেবতা অ্যারিসের চিকিৎসা করে দেবতাদের মধ্যে তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেন। নিজের ছাত্রের বাড়াবাড়ি এই খ্যাতি পিওনকে তার শিক্ষক অ্যাসক্লেপিয়াসের কাছে চক্ষুশূল করে তোলে।
তিনি পিওনকে খুন করার হুমকি দেন। এ অবস্থায় দেবতাদের রাজা জিউস এতে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি পিওনকে বাঁচানোর জন্য তাকে পিওনি ফুলে রূপান্তর করে ফেলেন। অনেকে মনে করেন, এ উপকথাটির আসলেই বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে। কারণ পিওনি ফুল গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন চিকিৎসায় এখনও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
Paeonia গণের অধীনে প্রায় ২৫-৪০টি প্রজাতি রয়েছে, মতান্তরে ৩৩টি প্রজাতি নিয়ে Paeonia গণ গঠিত। প্রজাতিভেদে গাছের গঠন বিভিন্ন। এই গণের কিছু গাছ বহুবর্ষজীবী বীরুৎ আকৃতির, সাধারণত ০.২৫-১ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয় আর কিছু গাছ কাষ্ঠল-গুল্মজাতীয়, যাদের উচ্চতা ০.২৫-৩.৫মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতা যৌগিক, গভীরভাবে কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত, বড়। ফুল ফোঁটে বসন্তের শেষে বা গ্রীষ্মের শুরুতে। ফুল নানা রঙের, সিঙ্গেল বা ডাবল, কিছু ফুলের ঘ্রাণ আছে।
পিওনি ফুল শুধু গ্রীস-রোমেই বিখ্যাত ছিল, এমনটা নয়। প্রাচীন চিন, জাপান, কোরিয়াতেও পিওনি ফুলের বেশ খ্যাতি ছিল। শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাসের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে পিওনি ফুলের রাজত্ব। চিনা দার্শনিক কনফুসিয়াস পিওনি সম্পর্কে বলেছেন, "I eat nothing without its sauce. I enjoy it very much, because of its flavor."
জাপানে Paeonia suffruticosa জাতের পিওনিকে বলা হয় King of flower আর Paeonia lactiflora জাতের পিওনিকে বলা হয় Prime minister of flower।
পিওনি ইন্ডিয়ানার প্রাদেশিক ফুল। তবে বাংলাদেশে এ ফুল এখনও দেখা যায় না।
