ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০০:৩৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চীনে বৃদ্ধের সংখ্যা বৃদ্ধি, সম্মান করতে প্রচারণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ১১:৪৭ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:১৫ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

চীনা সমাজে বয়স্কদের সম্মান ও ভালবাসতে উৎসাহ দেয়ার জন্য এক মাসব্যাপী প্রচারণা শুরু হতে যাচ্ছে। দেশটির প্রবীণ বিষয়ক ন্যাশনাল ওয়ার্কিক কমিশনের কার্যালয় থেকে এ কথা বলা হয়েছে।


কমিশন এক সার্কুলারে বলেছে, অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত এই প্রচারণা অভিযান চলবে। বয়স্কদের সম্মান ও ভালবাসা দেয়ার প্রয়োজনীয়তা এবং তাদের সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই অভিযানটি চালানো হচ্ছে।


বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও এলাকাগুলোতে বয়স্কদের সম্মানমূলক শিক্ষা কার্যক্রম চালানো, বৃদ্ধাশ্রম পরিদর্শন এবং বৃদ্ধদের আইনগত অধিকার সুরক্ষায় তাদের সহায়তা করার উৎসাহ দেয়া হচ্ছে।


ব্যক্তি পর্যায়ে দৈনন্দিন কাজ করার সময় কিভাবে বয়স্কদের সম্মান দিতে হবে তা শেখানো হচ্ছে। এ বছর এই প্রচারণা ও সমাজ সংস্কার কার্যক্রমটির ৪০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

 

চীনের মোট জনসংখ্যার বড় একটা অংশই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধা৷ ২০৩০ সাল নাগাদ সংখ্যাটা বেড়ে যাবে অনেক৷ তখন দেখা দেবে ভয়াবহ সংকট৷ প্রবীণদের মাঝেও এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই৷

 

হি শিয়াংগিং৷ বেইজিংয়ের এক বৃদ্ধা৷ কিন্তু বৃদ্ধা হলে কি হবে, নিজের আয় থেকে প্রতিমাসে কিছু টাকা পাঠান ছেলের কাছে৷ ছেলের সংসার চালানোর জন্য পাঠান না, টাকাটা পাঠান অন্যের এক শিশুসন্তানকে পেলেপুষে বড় করার জন্য৷ হি জানেন, যখন বয়সের কাছে হার মানবে শরীর, কাজ করার ক্ষমতা আর থাকবেনা, তখন আজকের এই শিশুটিকে খুব দরকার হবে তাঁর৷ আজ টাকা-পয়সা দিয়ে বড় করছেন, ছেলেটি বড় হয়ে তাই তাঁকে দেখবে৷


নিজের ছেলে থাকতেও কেন অন্যের ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন হি শিয়াংগিং? প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক৷ তবে এক সন্তান নীতির কারণে ক্রমশ পুরুষ এবং বৃদ্ধের সংখ্যা ভারসাম্যহীনভাবে বেড়ে চলা চীনের সচেতন প্রতিটি মানুষ জানেন কেন নিজের সন্তানের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না হি৷ আধুনিকতার ছোঁয়ায় এমনিতেই দেশের সংস্কৃতি বদলে যাচ্ছে৷ তাই আগের মতো সন্তানেরা আর বুড়ো বাবা বা বুড়ি মা-কে সেবা করে ‘সময় নষ্ট` করতে চায়না৷ সবাই ব্যস্ত ক্যারিয়ার গড়ার কাজে৷ তারওপর গ্রামের বাড়িতে বেকার ছেলেটি নিজের জীবন চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন, বার্ধক্যে মা-কে দেখবেন কী! সে আশা করাই যে ভুল তা হি-ও জানেন৷ তাই দুঃখ নিয়েই বললেন, ‘‘যে সন্তান নিজেই গরীব, আমি বেঁচে থাকি বা মরে যাই, আমার জন্য সে কী করতে পারবে!``



কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের পাশে সবসময় থাকে সরকার৷ চীনের সরকারও চেষ্টা করছে প্রবীণদের পাশে দাঁড়াতে৷ কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে চীনে মোট বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সংখ্যা ৩৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে৷ সে কথা ভেবে বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু জনসংখ্যার চাপে আবাসন সমস্যা এত বেড়েছে যে বৃদ্ধাশ্রম করার জায়গা পাওয়াও মুশকিল৷ এ পরিস্তিতিতেই কাজ চলছে৷ এ পর্যন্ত যে কয়টি বৃদ্ধাশ্রম তৈরি হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই সামান্য৷ এখন পর্যন্ত গড়ে এক হাজার প্রবীণের জন্য মাত্র ২৫টি শয্যার ব্যবস্থা করতে পেরেছে সরকার৷

 


বেসরকারিভাবেও চলছে শেষ জীবনে প্রবীণদের একটু স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা৷ বেইজিংয়ের অদূরে একটি তিন তারকার হোটেলের সাইনবোর্ড বদলে ফেলাও সেরকম একটি উদ্যোগ৷ সেই হোটেলে এখন থাকেন প্রায় তিনশ প্রবীণ৷ ঝৌ চুয়ানসুন সেখানে আছেন দু বছর ধরে৷ নিজের বাড়ি থাকতেও সমবয়সিদের সঙ্গে থাকতে পেরে তিনি খুশি৷

 

খুশির কারণ জানাতে গিয়ে বললেন, ‘‘নিজের বাড়িতে থাকলে তো সারাক্ষণ একা একা লাগতো৷ আমার এক ছেলে, এক মেয়ে৷ দুজনই ভালো চাকরি করে৷ কিন্তু আমাকে দেখার তো তাদের সময় নেই৷ তাই এখানে ভালোই আছি৷ এখানে সময় খুব দ্রুত কেটে যায়৷``


কিন্তু সেরকম কোনো জায়গায় থাকতে হলে আবার মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়৷ সে সাধ্য কম লোকেরই আছে৷ আবার বাড়িতে থাকবেন, দেখাশোনা করার জন্য কাউকে ঠিক করবেন–সে উপায়ও নেই৷ প্রবীণদের সেবা করে জীবিকা নির্বাহ করাকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আধুনিক তরুণ প্রজন্ম খুব ভালো চোখে দেখলেতো!