ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:৫৬:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কবরে শুয়ে আছেন ৭ স্বজন, শোকের মাতম পরিবারজুড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:০৭ পিএম, ৭ আগস্ট ২০২৫ বৃহস্পতিবার

কবরে শুয়ে আছেন ৭ স্বজন, শোকের মাতম পরিবারজুড়ে

কবরে শুয়ে আছেন ৭ স্বজন, শোকের মাতম পরিবারজুড়ে

নোয়াখালীর সেই পরিবারটির শোক কমছে না। একই সাথে পরিবারের ৭ সদস্যকে হারিয়ে শোকে দিশেহারা সকলে। ওমান থেকে আসা ছেলে বাহার উদ্দিনকে বিমানবন্দর থেকে আনার সময় মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের খালে পড়ে মা মোরশেদা বেগমসহ (৫০) পরিবারের ৭ সদস্য নিহত হয়েছেন। 

এর মধ্যে মোরশেদাসহ তিন নাতনি মীম আক্তার (২), রেশমা আক্তার (৯), লামিয়া ইসলাম (৮) এবং দুই পুত্রবধূ কবিতা আক্তার (২৪) ও লাবনী আক্তার (২৫) পাশাপাশি কবরে শুয়ে আছেন। অপর নিহত মোরশেদার মা ফয়জুন নেছাকে (৭০) তার বাড়ি হাজিরপাড়া গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। দাফন হয়ে গেলেও স্বজনদের আহাজারি থেমে নেই।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় কাশারি বাড়িতে গেলে করবস্থানের পাশে কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা যায়। এর মধ্যে নিহত কবিতার বড় বোন লিপি আক্তারকে কান্না করতে করতে আদরের বোনসহ ভাগ্নি মীমকে ডাকাডাকি করতে দেখা যায়। 

একই দৃশ্য দেখা যায় নিহত লাবনীর ঘরে গেলে। লাবনী ও নাতনি লামিয়ার শোকে কাতর হয়ে রয়েছেন নানী সেলিনা বেগম ও নানা নুরুল ইসলামসহ স্বজনরা। কান্না করতে করতে ভেঙে পড়েছেন তারা। তাদের মেয়েও আর জীবিত হবে না, নাতনিকেও আর কোলে নিয়ে আদর করতে পারবে না, মেয়ে-নাতনিকে দেখতে এ বাড়িতেও তাদের আর আসা হবে না বলে কেঁদেই যাচ্ছেন তারা।

সকালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী এলাকায় কাশারি বাড়িতে গেলে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের কবরগুলো দেখা যায়। গতকাল বুধবার বাদ আছর স্থানীয় উত্তর জয়পুর জয়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিহত ৭ জনের জানাজা একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। পরে ফয়জুন নেছার মরদেহ ফ্রিজিং ভ্যানে করে তার বাড়ি হাজিরপাড়া নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

এদিকে বুধবার ভোরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের চন্দ্রগঞ্জ পূর্ব বাজারের অদূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাস সড়কের পাশে খালে ফেলে পালিয়ে যান চালক।

তবে গাড়ির মালিক রাসেল এসে ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি চালকের সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো কিছুই বলেননি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তবে চালককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা গৃহকর্তা আব্দুর রহিমসহ স্বজনরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত চালকের নাম আকবর হোসেন (২৪)। তিনি সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের মৃত ফয়েজ আহমেদের ছেলে।

আব্দুর রহিম জানান, চালকের ঘুমের কারণেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তার কারণেই একসঙ্গে পরিবারের ৭ জনকে হারাতে হয়েছে। একদিন পার হয়ে গেলো, এখন পর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে ছেড়ে দেবো না। তার বিরুদ্ধে মামলা করব। আমার দুই ছেলে রুবেল ও রনি আজ (বুধবার) বিদেশ থেকে আসবে। তারা আসলেই মামলা করা হবে।’

বেঁচে ফেরা বাহার, আব্দুর রহিম ও ইস্কান্দার মির্জা জানান, আড়াই বছর পর ওমান থেকে দেশে আসেন প্রবাসী বাহার। তাকে আনতে মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট রাতে পরিবারে ১১ সদস্য মাইক্রোবাসযোগে রাজধানীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখান থেকে বাহারকে নিয়ে ফেরার পথে ঘটনাস্থল পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ৩০ মিটার গভীর খালে পড়ে যায়। 

এ ঘটনায় পানিতে ডুবে ৩ শিশুসহ ৪ নারী মারা যান। সেখান থেকে বেঁচে ফেরেন প্রবাসী বাহার, তার বাবা আব্দুর রহিম, শ্বশুর ইস্কান্দার মীর্জা, ভাবি সুইটি আক্তার ও শ্যালক রিয়াজ হোসেন।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, ‘চালক আকবর ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন। তাকে আটকের জন্য চেষ্টা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে। পরিবার মামলা না করলে আমরা মামলা করব।’