ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১২:১০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মেঘ-রোদ্দুরের খেলায় নাটোরে চলছে পাটকাটার উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৭ পিএম, ৯ আগস্ট ২০২৫ শনিবার

মেঘ রোদ্দুরের খেলায় নাটোরে চলছে পাটকাটার উৎসব

মেঘ রোদ্দুরের খেলায় নাটোরে চলছে পাটকাটার উৎসব

নাটোরে ক্রমশ ফিরে আসছে সোনালী আঁশের সুদিন। বিগত দিনের চেয়ে বেশি দামের কারণে কৃষকরা পাট চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভালো লাভের আশায় তারা চাষ করছেন পাটের।

এ জেলায় বেড়েছে পাটের আবাদি জমিও। সবুজে ভরপুর রাজ্যে এখন চলছে পাট কাটার ধুম। 

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলার জলাশয় ও এর পাড় সংলগ্ন স্থানগুলোতে পাট গাছ ভেজানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও পাটকাঠি সংগ্রহের সব কর্মযজ্ঞই চলছে যুগপৎভাবে। সবুজ পাট গাছের রূপান্তর ঘটছে সোনালী পাটের আঁশ আর পাটকাঠিতে। রূপালী রৌদ্র মেঘে ঢেকে প্রকৃতিতে নামছে শ্রাবণ ধারা। এর সঙ্গে সহাবস্থান করে গ্রামীণ জনপদে কৃষকরা মেতে উঠেছেন পাট উৎসবে।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে পাটের আবাদ হয়েছে। 

২৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমি আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৮৮০ হেক্টরে। এক দশক আগে জেলায় পাটের আবাদি জমি ছিল চলতি বছরের প্রায় অর্ধেক। হেক্টর প্রতি পাটের গড় উৎপাদনও বেড়েছে। 

ইতোমধ্যে ১৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমির পাট কাটা হয়েছে। মোট উৎপাদন ৪৬ হাজার ৪৯৯ টন। অর্থাৎ জেলায় বিঘাপ্রতি পাটের উৎপাদন ১১ দশমিক ৬২ মণ।

সরেজমিনে সিংড়া উপজেলার লাড়ুয়া গ্রামে দেখা যায়, কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে এবং সংলগ্ন বিল ও ডোবাতে শতাধিক নারী-পুরুষ পাট পঁচানো ও আঁশ ছড়ানোর কাজ করছেন। এই কাজে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মত। তারা মূলত পানিতে না নেমেই পঁচানো পাট পাড়ে তুলে আঁশ ছড়াচ্ছেন। 

আঁশ ছড়ানো কাজে নিয়োজিত কুলসুম বিবি বলেন, আমি পাট কাঠি নেওয়ার শর্তে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছি। 

হাতিয়ানদহের গদাই নদীতে নেমে আঁশ ছড়ানো জহির উদ্দিন জানান, আমরা ১০ জন কাজ করছি, প্রতিদিন জনপ্রতি ৫০০ টাকা মজুরী। নদীর পাড়ে আঁশ ছড়ানোর কাজ করছেন আরো ১০ জন নারী। 

মিনতি রানী জানান, আমরা সবাই পাটকাঠি নেওয়ার শর্তেই কাজ করছি। এই কাজে অন্যদের সঙ্গে নিয়োজিত হয়েছেন ঋষিপাড়ার প্রায় শতবর্ষী অন্ধ পুষ্প। তিনি বলেন, চোখে দেখি না, তবে এই কাজ আমার জন্য করা খুব কঠিন নয়। উর্পাজন করতে পারছি, এটাই আনন্দের।

রাস্তার দুধারে বাঁশের আড় টানিয়ে, কালভার্টের রেলিং কিংবা গৃহস্থ বাড়ির চারপাশ-সর্বত্রই চলছে পাট শুকানোর কাজ। এসব এলাকা জুড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে পাটকাঠির বোঝা সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে। 

লাড়ুয়া এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বরাবরের মত এবারো তার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। লাড়ুয়া বিলে পাট ছড়ানো শ্রমিকদের কাজ তদারককারী সাইফুল ইসলাম বলেন, এবার আষাঢ়-শ্রাবনে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। হাতের নাগালে আশপাশের সকল জলাধার পানিতে টইটুম্বুর থাকায় জমির পাট অনায়াসে পঁচাতে পারছি, পরিবহনের খরচ নেই। বিঘা প্রতি ১২ মণ করে ফলন পাচ্ছি।

নাটোর সদর উপজেলার রাজাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বদিউজ্জামান বলেন, এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি ১১ মণ ছাড়িয়ে গেছে। 

এই ব্লকের জাঠিয়ান এলাকার কৃষক জুবায়ের হোসেন এবার সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি জানান, পাট কাটা শুরু হয়েছে। আশা করি বিঘায় ১২ মণ করে পাট পাচ্ছি।

নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, জমিতে গম বা ডাল উঠে যাওয়ার পর আমন মৌসুমের আগে পাট চাষ করা হলে জমি অনাবাদি থাকে না। চৈত্র মাসের মধ্যে পাট বীজ বোনা হলে আগাম পাট কেটে খুব সহজেই আমন মৌসুম ধরা যায়। 

নাটোরের প্রসিদ্ধ পাটের হাট গুরুদাসপুরের নাজিরপুর, সদরের তেবাড়িয়া এবং সিংড়ার হাতিয়ান্দহ হাট ঘুরে দেখা যায়, আগাম ওঠা পাট হাটে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। 

হাতিয়ান্দহ হাটে পাট বিক্রি করতে আসা হারান প্রামানিক বলেন, হাটে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করলাম। 

পাট ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম জানান, আশাকরি পাটের দর ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয়ের জন্যই ভালো হবে। বর্তমানে পাটের দর তিন হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত। সামনে দাম আরো বাড়বে বলে মনে হয়। এবার পাটের বিপণন কার্যক্রম জমজমাট।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নীলিমা জাহান জানান, আমাদের উপজেলায় বর্তমানে পাটের গড় উৎপাদন বিঘা প্রতি সাড়ে ১১ মণ।