গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও ক্ষুধা-অনাহারে নিহত ছাড়াল ৬২ হাজার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২৫ মঙ্গলবার
গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও ক্ষুধা-অনাহারে নিহত ছাড়াল ৬২ হাজার
গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও কঠোর অবরোধের কারণে টানা প্রায় দুই বছরে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের গণহত্যামূলক অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শুধু বোমা হামলাই নয়, খাবারের অভাব, ক্ষুধা ও অনাহারও এই মৃত্যুর বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা উপত্যকার প্রতিটি অঞ্চলে কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। প্রতিদিনই মানুষ নিহত হচ্ছেন শুধুমাত্র পরিবারের জন্য খাবার খুঁজতে গিয়ে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটিতে হামলা আরও তীব্র করেছে এবং লক্ষ্য করছে সাধারণ নাগরিকদের জোরপূর্বক দক্ষিণে তথাকথিত ‘কনসেন্ট্রেশন জোনে’ সরিয়ে নেওয়া। উদ্দেশ্য স্পষ্ট— জনসংখ্যার কাঠামো বদলানো এবং গাজার ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
সোমবার ভোর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন সাহায্যের আশায় সারিতে দাঁড়ানো মানুষ। আল-সাবরা এলাকায় এক হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে একজন স্থানীয় সাংবাদিক, ইসলাম আল-কৌমি।
দেইর আল-বালাহ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজযুম জানান, গাজার পূর্বাঞ্চলে অব্যাহতভাবে হামলা চলছে। তিনি বলেন, “ভারী কামান, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে আবাসিক ভবন ধ্বংস করা হচ্ছে। এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরায়েলের কৌশল হলো আবাসিক এলাকা ধ্বংস করে স্থল অভিযান সহজ করা।”
রোববারও গাজা সিটি হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল, সেদিন প্রায় ৬০ জন নিহত হন। এ ছাড়া ইসরায়েল এখন অবশিষ্ট অল্প কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। এর ফলে আহতদের চিকিৎসার সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বাস্তুচ্যুত মানুষদের অনেকে আবারও গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তবে অনেকের পক্ষে কোথাও যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বাস্তুচ্যুত বিলাল আবু সিত্তা বলেন, “দক্ষিণে যেতে প্রায় ৯০০ ডলার লাগে। আমার কাছে এক ডলারও নেই। আমি কীভাবে যাব?” অন্যদিকে নোয়ামান হামাদ বলেন, “আমরা ইসরায়েলের কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাই না। শুধু আমাদের ঘরে ফেরার অনুমতি দিলেই যথেষ্ট।”
এদিকে সামান্য আশার আলো জেগেছে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে। কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত এক খসড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে নিয়েছে হামাস। সূত্র জানায়, এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে অন্তত ৬০ দিনের জন্য লড়াই বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে গাজায় আটক রাখা ইসরায়েলি বন্দিদের অর্ধেক এবং ইসরায়েলের কারাগারে আটক কিছু ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেওয়া হবে। তবে ফিলিস্তিনিরা আগেও এমন অনেক প্রতিশ্রুতির ভরসায় প্রতারিত হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতি মার্চেই ভেঙে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
