ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:০৮:৪২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সুমাইয়া দেওয়ান, যিনি ট্র্যাকে আঁকেন জয়ের স্বপ্ন

খেলাধুলা ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫৮ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২৫ রবিবার

সুমাইয়া দেওয়ান, যিনি ট্র্যাকে আঁকেন জয়ের স্বপ্ন

সুমাইয়া দেওয়ান, যিনি ট্র্যাকে আঁকেন জয়ের স্বপ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্রী সুমাইয়া দেওয়ান। ক্যানভাসে আঁকেন রংবেরঙের চিত্র। সেই সুমাইয়া এবার অ্যাথলেটিক ট্র্যাকের ক্যানভাসে আঁকলেন বিজয়ের ছবি। শুক্রবার জাতীয় সামার মিটে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের রানি শিরিন আক্তারকে পেছনে ফেলে ১২.১৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্রুততম মানবীর খেতাব পুনরুদ্ধার করলেন নৌবাহিনীর সুমাইয়া। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রথমবার এই খেতাব জিতেছিলেন তিনি।

মানিকগঞ্জের গড়পাড়া ইউনিয়নের আলীনগরের মেয়ে সুমাইয়া। খেজুরের রস দিয়ে বানানো পাটালি গুড়ের জন্য বিখ্যাত এই গ্রামটি। শহর থেকে অটোতে করে ১৫ মিনিটে লাগে আলীনগর গ্রামে পৌঁছতে। দেশজুড়ে এই গ্রামের পরিচিতি এখন এই তরুণীর কল্যাণে। দেশের টানা ১১ বারের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারকে হারিয়ে প্রথমবার দ্রুততম মানবীর খেতাব জিতেছিলেন সুমাইয়া। দুই বছর পর আবারও সেই শিরিনকে হারিয়ে পুনরুদ্ধার করলেন খেতাব। এজন্য কম কষ্ট সইতে হয়নি সুমাইয়াকে। 
তার কথা, ‘দ্রুততম মানবীর খেতাব পুনরুদ্ধার করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’ 
ট্র্যাকে ঝড় তোলার মতো জীবনেও ঝড় বয়ে গেছে সুমাইয়ার। তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে আগেই ইহকাল ত্যাগ করেছেন তার বাবা তজুমুদ্দিন দেওয়ান। মেয়ের সাফল্য তিনি দেখে যেতে পারেননি। এটাই সুমাইয়ার জীবনে বড় দুঃখ। তার প্রথম সাফল্যের দুই বছর আগেই বাবা চলে গেছেন। সংসারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শূন্যতা দেখা দেয় তাদের সংসারে। পরিবারের বড় সন্তান হিসাবে সুমাইয়ার কাঁধে চাপে সংসারের হাল। তবে কষ্ট সয়ে এখন নৌবাহিনীতে চাকরি করছেন দেশের দ্রুততম মানবী। সেই অর্থেই চলে তার দুই বোন ও মায়ের সংসার।

ছোটবেলা থেকেই খেলায় আগ্রহ ছিল সুমাইয়ার। অ্যাথলেটরা ভালো করলে বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি পান, খবরটা শুনেই আগ্রহ বাড়তে থাকে তার। 

সুমাইয়ার কথা, ‘ছোট থেকে আমার আগ্রহ বেশি ছিল খেলাধুলায়। স্কুলে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্ট, হাই জাম্প, লং জাম্প-সব ইভেন্টে প্রথম হতাম। সব সময় প্রথম হতে, পুরস্কার পেতে আমার ভালো লাগত। এখন আমার বাসায় অনেক পুরস্কার জমে গেছে।’

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর গড়পাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সুমাইয়া হিট দিতে পারলেন না। তখন তার বাবা স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক আবদুর রহিমকে অনুরোধ করেন, মেয়েকে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ দিতে। শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেয়ে ১০০, ২০০ ও লং জাম্প-তিন ইভেন্টেই সেরা হন সুমাইয়া। পরে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় অনেক ভালো করেন। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নজর কেড়ে দেশের শীর্ষ স্তরেও নিজেকে চিনিয়েছেন। গ্রামের সবার কাছে এখন তিনি চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিত।

গড়পাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সুমাইয়া থেকে দেশের দ্রুততম মানবী সুমাইয়া হওয়ার পথটা ছিল বন্ধুর। ২০১৭ সালে মানিকগঞ্জে ট্রায়াল দিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার ঠিক আগে জাতীয় জুনিয়র পর্যায়ে ঢাকায় খেলেন খালি পায়ে। তার তখন এক জোড়া রানিং শুও ছিল না। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার আগে ৫০০ টাকা দিয়ে তাকে এক জোড়া কেডস কিনে দেওয়া হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। 

পেছন ফিরে সুমাইয়া বলেন, ‘আগে কত কষ্ট করেছি একজোড়  জুতার জন্য। সংসারে বাবা না থাকলে যা হয়। তবে এখন আর সমস্যা নেই। সংসারে আমিই খরচ দিই। এখন আমার মা-বোনরা খুব ভালো আছে।’

সুমাইয়া অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার কথা যখন, তখন এক বছর পিছিয়ে আবার সপ্তম শ্রেণিতে বিকেএসপিতে ভর্তি হন। পাঁচ বছর প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ পেয়ে দেশের দ্রুততম মানবী হন বিকেএসপিরই সাবেক ছাত্রী শিরিন আক্তারকে হারিয়ে। দুই বছর পর জাতীয় সামার অ্যাথলেটিক্সে সেই শিরিনকে হারিয়ে আবার প্রত্যাবর্তন সুমাইয়ার। মাত্র ০.০২ সেকেন্ডের পার্থক্যে শিরিনকে (১২.২১ সেকেন্ড) হারান তিনি (১২.১৯)। 

তিনি বলেন, ‘দ্রুততম মানবীর খেতাব ফিরে পেতে এবার অনেক পরিশ্রম করেছি আমি। এখন এগিয়ে যেতে চাই। জানুয়ারিতে এসএ গেমস। গেমসে দেশের জন্য ভালো কিছু উপহার দিতে চাই।’