সরাসরি ভোটে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৩:৩২ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫ রবিবার
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ও সংসদে প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে ১০০ সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী সাংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম। পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল থেকে ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
রবিবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব দাবি তুলে ধরেন তারা।
ফোরামের নেতারা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন ও গণ-আন্দোলনে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তবুও সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সংসদে সরাসরি নির্বাচিত নারী সাংসদের সংখ্যা মাত্র ১৮ থেকে ২২ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা মোট আসনের প্রায় ৭ শতাংশ। বিদ্যমান ৫০টি সংরক্ষিত আসন কার্যত নারীদের কোনো অর্থবহ রাজনৈতিক ক্ষমতা দিতে পারেনি। কারণ, এসব আসন দলীয় অনুপাতে পূরণ হয় এবং এসব সাংসদ ভোটারের পরিবর্তে রাজনৈতিক দলের প্রতি বেশি দায়বদ্ধ থাকেন।
তারা বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী। এ অনুযায়ী সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হওয়া উচিত। তবে বিদ্যমান বাস্তবতার নিরিখে কারণে ধাপে ধাপে তা অর্জন সম্ভব। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৪ শতাংশ নাগরিক সংসদে সরাসরি নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিত্বের পক্ষে মত দিয়েছেন। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের মূল্যায়নেও বিদ্যমান সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থার অকার্যকারিতা উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, স্থানীয় সরকার পর্যায়ে সংরক্ষিত আসনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নারী নেতৃত্ব যেমন বিকশিত হয়েছে, তেমনি জাতীয় সংসদেও তা সম্ভব। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে নারী সাংসদরা ভোটারদের কাছে জবাবদিহি করবেন, সংসদের মান উন্নত হবে এবং প্রকৃত অর্থেই তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে।
সংসদ সদস্যদের কাজ সংসদীয় কার্যাবলিতে সীমাবদ্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আইন প্রণয়ন, বাজেট অনুমোদন ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই সাংসদের মূল দায়িত্ব।
নেতারা জানান, রাজনৈতিক দলে নারীর মনোনয়নের হার এখনও অপর্যাপ্ত। জনগণের প্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৮–এ ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী নিশ্চিত করার বিধান থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। বরং সময়সীমা বাড়িয়ে ২০৩০ পর্যন্ত করা হলেও কোনো অর্থবহ অগ্রগতি দেখা যায়নি। সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে নারীর সরাসরি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না করে মাত্র ৫ শতাংশ নারী মনোনয়নের প্রস্তাব আনা হয়েছে, যা ফোরামের মতে হাস্যকর ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি। দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কমিশনে কোনো নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত না করাকে নেতিবাচক ও নিন্দনীয় সিদ্ধান্ত হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম মনে করে, ২০২৬ সালের নির্বাচন থেকেই এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব। বিদ্যমান ৩০০ আসনের সঙ্গে ১০০ সংরক্ষিত আসন যুক্ত করে একই নির্বাচনী কাঠামোতে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা চালু করা যাবে। এতে নতুন করে নির্বাচনী এলাকা পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন নেই। একই এলাকায় নারী ও পুরুষ সাংসদ থাকলেও কার্যপরিধি স্পষ্ট করে দিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। নারীরা তাদের সমস্যা উপস্থাপনের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় পাবেন এবং সংসদে তাদের সক্রিয় উপস্থিতি নিশ্চিত হবে।
তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্ধেক জনগণকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র এগোতে পারে না। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ২০২৬ সালের নির্বাচন থেকেই এই প্রস্তাব কার্যকর করা সম্ভব। এই উদ্যোগ নিলে সরকার প্রশংসার দাবিদার হবে। নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম এই প্রস্তাবের খুঁটিনাটি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার দাবি জানিয়েছে এবং জানিয়েছে, বাস্তবায়নের কাজে সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে নারী সংগঠনসমূহ সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-ক্ষুব্ধ নারী সমাজ, গণসাক্ষরতা অভিযান, দুর্বার নেটওয়ার্ক ফাউন্ডেশন, নাগরিক কোয়ালিশন, নারী উদ্যোগ কেন্দ্র (নউক), নারী সংহতি, নারীপক্ষ, নারীর ডাকে রাজনীতি, ফেমিনিস্ট অ্যালায়েন্স অফ বাংলাদেশ (ফ্যাব) ও বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র।
