রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের প্রধান উদ্বেগ যৌন হয়রানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:১৬ পিএম, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার
ছবি: সংগৃহীত
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার অষ্টম বছরে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা বহুমুখী সুরক্ষা ঝুঁকিতে রয়েছেন। যৌন হয়রানিকে তাঁরা সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ শিবিরগুলোতে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
রবিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে একশনএইড বাংলাদেশের আয়োজনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও সংলাপে এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণাটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আরার হেফাজত: রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীদের কণ্ঠস্বর মাধ্যমে তাদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা’।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ক্যাম্পগুলোতে ২০১৭ সালের শুরুতে প্রধান ঝুঁকি ছিল খোলা জায়গায় গোসল, উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ, অপহরণ ও ডাকাতি। আশ্রয়কেন্দ্র বরাদ্দের পরও যৌন হয়রানি অব্যাহত থেকেছে। বর্তমানে এর পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও গার্হস্থ্য সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব এবং মাদকের বিস্তার নারী ও কিশোরীদের নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে ক্যাম্পভেদে ৫০ থেকে ৮২ শতাংশ নারী ও কিশোরী বলেছেন, তাঁরা নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরতে চান। বয়স্করা বেশি করে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তরুণীরা তৃতীয় কোনো দেশে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব বা উন্নত দেশে।
অন্যদিকে কিছু তরুণী বলেন, তাঁরা ক্যাম্পেই থেকে শিক্ষা, বিয়ে বা ছোটখাটো ব্যবসার সুযোগ খুঁজবেন। ভাসানচরে যাওয়ার পক্ষে কোনো উত্তরদাতা মত দেননি। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক (৪৮ শতাংশ) মনে করেন, পুরুষ ও ছেলেদের জন্য কাউন্সেলিং জরুরি।
নারীরা বলেছেন, টয়লেট ও গোসলখানায়, খাবার বিতরণকেন্দ্রে, হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে, বাজারে, এমনকি এনজিও অফিস বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যাতায়াতের সময়ও তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হয়। কিশোরী মেয়েরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে থাকেন স্কুল, মাদ্রাসা বা শিশু-বান্ধব কেন্দ্রে যাতায়াতের সময়।
অনুষ্ঠানে মূল গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন একশনএইড বাংলাদেশের পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার তামাজের আহমেদ। সঞ্চালনা করেন সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।
তিনি বলেন, আমাদের গবেষণাটি ছিল অংশগ্রহণমূলক। রোহিঙ্গা নারীরা এখানে নিজেরা নিজেদের কথা বলার চেষ্টা করছেন। সেটাই আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এই নারীরা এখানে আছেন প্রায় আট বছর ধরে। মিয়ানমারে থেকে অন্যায়-অত্যাচার হয়েছিল বলেই তারা এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা যখন এখানে আশ্রয় নেন তখন প্রাথমিক কোনও শেল্টার ছিল না। এখন কিছু হয়েছে। কিন্তু তারপরও তাদের প্রতি সহিংসতা কমেনি, বরং সহিংসতার ধরন বদলেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা আজ বহুমুখী ঝুঁকির মুখে। এখনই কৌশলগত পরিবর্তন এনে দীর্ঘমেয়াদি, অধিকারভিত্তিক ও জেন্ডার-সংবেদনশীল উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
সংলাপে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্যাম্পের ভেতরে নিরাপদ ও আলোযুক্ত টয়লেট ও গোসলখানা, নারী নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ এবং নারী-নেতৃত্বাধীন সুরক্ষা কমিটি গঠন করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য কমাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা জোরদার করতে হবে।
গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে একশনএইড ইউকের সহায়তা ও পিপলস পোস্টকোড লটারির অর্থায়নে, স্থানীয় সংগঠন অগ্রযাত্রার সহযোগিতায়। এতে ১ই, ৮ই ও ৫ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ৬৬ জন নারী-কিশোরী এবং উখিয়ার ৩০ জন স্থানীয় নারীসহ মোট ৯৬ জন অংশ নেন। অধিকাংশই ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনএইচসিআরের ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জুলিয়েট মুরেকিসোনি, ইউএন উইমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং, ইউরোপীয় কমিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লায়লা জেসমিন এবং ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজর মুশফিকা সাতিয়ার প্রমুখ।
