যুক্তরাজ্যের প্রথম মুসলিম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:২৭ পিএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত শাবানা মাহমুদকে নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। মূলত শাবানা মাহমুদ হচ্ছেন প্রথম মুসলিম নারী, যিনি ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির অভিবাসন, পুলিশিং ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা তদারকি করে। রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অ্যাঞ্জেলা রেইনার ফ্ল্যাট কেলেঙ্কারির জেরে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর শাবানা মাহমুদকে এই পদে নিয়োগের ঘোষণা আসে। দায়িত্ব পাওয়ার পর শাবানা বলেন, “জীবনে সবচেয়ে বড় সম্মান আমার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া। সরকারের প্রথম দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রতিদিন আমি এ লক্ষ্যেই কাজ করব।”
১৯৮০ সালে বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করা শাবানা মাহমুদের বাবা-মা পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরের মিরপুর থেকে বহু বছর আগে ঝেলামের কাছে লুধারের ভোহরিয়ান গ্রামে চলে আসেন। পরবর্তীতে পরিবার নিয়ে তিনি সৌদি আরবে কিছু সময় কাটান, পরে যুক্তরাজ্যে ফিরে আসেন। পরে অক্সফোর্ডের লিংকন কলেজ থেকে আইন পড়েন এবং ব্যারিস্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
২০১০ সালে তিনি বার্মিংহাম লেডিওয়ুড আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন, যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি ছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রথম দিককার মুসলিম নারী এমপিদের একজন। এরপর তিনি ছায়া অর্থমন্ত্রী, ছায়া কারাগার বিষয়ক মন্ত্রীসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
২০২৪ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টি জয়ী হওয়ার পর শাবানা বিচারমন্ত্রী ও লর্ড চ্যান্সেলর হন। তিনি অতিরিক্ত বন্দিতে ঠাসা কারাগার নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নেন এবং বিচারব্যবস্থার জট কমাতে আইন প্রণয়ন করেন। গত সপ্তাহেই কারাগার সংস্কার নিয়ে বড় একটি বিল পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছিলেন তিনি।
অবশ্য এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাকে আরও কঠিন দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। অভিবাসন সংকট, আশ্রয়প্রার্থী হোটেল, রেকর্ড সংখ্যক চ্যানেল পাড়ি দেওয়া অভিবাসী এবং সীমান্ত নিরাপত্তা এর মধ্যে রয়েছে। তবে তার নতুন দায়িত্বের বড় অংশ জুড়ে থাকবে অভিবাসন ইস্যুই।
সম্প্রতি তিনি বলেন, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ব্রিটেন একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। তবে তিনি এটিকে “পড়শি-সুলভ জাতি”তে রূপ দেওয়ার লেবার পার্টির দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দেন।
মানবাধিকার সুরক্ষার ইউরোপীয় কনভেনশন নিয়েও তিনি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। অভিবাসন সংক্রান্ত মামলায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অধিকার (আর্টিকেল ৮) ব্যবহারে কড়াকড়ির প্রস্তাব সামনেই আনা হবে।
বিচারমন্ত্রী থাকাকালে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, বিদেশি কোনো অপরাধী কারাদণ্ড পেলেই তাকে দ্রুত বহিষ্কার করা হবে। তার ভাষায়, “যদি আমাদের আতিথেয়তার অপব্যবহার করো এবং আইন ভাঙো, আমরা দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাব।”
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ ঘোষণার পর লর্ড গ্লাসম্যান তাকে লেবার পার্টির গুরুত্বপূর্ণ অংশের নেতা হিসেবে আখ্যা দেন।
তবে ক্যারিয়ারে নানা হয়রানি, ভুয়া খবর এবং ঘৃণার শিকারও হতে হয়েছে তাকে। স্থানীয় পাকিস্তানি কমিউনিটি থেকেও তাকে হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে, আর নিয়োগের পর এখন কট্টর ডানপন্থিদের ইসলামবিরোধী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন শাবানা।
নিজের নির্বাচনী এলাকায়ও নারী বিদ্বেষী প্রচারণা, পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে শাবানাকে। তিনি বলেন, “মুসলিম নারী হয়েও সংসদে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়া আমাকে অনুপ্রাণিত করে।”
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে তিনি বলেন, গাজার যুদ্ধ ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে, নিরীহ শিশুদের হত্যাকাণ্ড চলছে, যা অমানবিক। তিনি স্পষ্ট করেন, লেবার পার্টি দুই রাষ্ট্র সমাধানে বিশ্বাসী, এটিই একমাত্র শান্তির পথ।
