ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:২৮:০৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নেপালে জেন-জিদের পছন্দের কে এই সুশীলা কারক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৪ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

সুশীলা কারকি। ছবি: সংগৃহীত

সুশীলা কারকি। ছবি: সংগৃহীত

জেন-জিদের আন্দোলনে কেপি শর্মা অলির সরকারের পতনের পর নেপালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে আসতে পারেন দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। বিক্ষোভকারীদের পছন্দের প্রার্থী কারকি ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে পড়াশোনা করেছেন। তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন। দুর্নীতির মামলায় এক মন্ত্রীর কারাদণ্ডসহ একাধিক ঐতিহাসিক রায়ের জন্য তিনি দেশটিতে ব্যাপক পরিচিত।

নেপালের প্রবীণ আইন বিশেষজ্ঞ কারকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের জন্য জনপ্রিয়। দেশটিতে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞার কারণে তরুণরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। দু’দিনের তীব্র আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগে বাধ্য হন।

গত জুলাইয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালয়ান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কারকি বলেছিলেন, তিনি এখনো বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যায়ে কাটানো সময়ের স্মৃতি মনে করে আবেগাপ্লুত হন। সেখানে তিনি শুধু পড়াশোনাই করেননি, নাচ শেখার সুযোগও পেয়েছিলেন। 

তিনি বলেন, বিএইচইউ থেকে চাকরির প্রস্তাব পেলেও তার গন্তব্য ছিল ভিন্ন।

নেপালের একাধিক সূত্র বলেছে, বুধবার জেন-জি বিক্ষোভকারীদের নেতারা সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করার সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।

কীভাবে কারকিকে বেছে নিলেন জেন-জিরা:

বুধবার নেপালের জেন-জিবিক্ষোভকারীরা নতুন সরকারের সম্ভাব্য নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনার জন্য একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। প্রায় চার ঘণ্টার এই বৈঠকে পাঁচ হাজারের বেশি সদস্য অংশ নেন এবং তাদের বেশিরভাগই সুশীলা কারকির পক্ষে সমর্থন জানান।

জেন-জি নেত্রী রক্ষা বাম দেশটির সাংবাদিক ভদ্র শর্মাকে বলেছেন, ‘আমরা নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে সুশীলা কারকির নাম প্রস্তাব করেছি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা শেষে আজই এ প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হবে।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি ইতোবাচক সাড়া দেননি। প্রথমে তাকে নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন জেন-জি আন্দোলনকারীরা।

সাহসি বিচারক হিসেবে খ্যাতি, কারাদণ্ড দেন মন্ত্রীকেও:

২০১৬ সালে নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন কারকি। সততা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য নির্ভীক বিচারক হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ১৯৭৯ সালে বীরাটনগরে আইনজীবী হিসেবে তার পেশাজীবনের শুরু হয়।

এরপর পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে ২০০৯ সালে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন এবং পরবর্তীতে ইতিহাস গড়েন। তার নিয়োগের সময়টি নেপালের জন্য প্রতীকী মুহূর্ত ছিল। কারণ সেই সময় নেপালের তিনটি সর্বোচ্চ পদ—রাষ্ট্রপতি, সংসদের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতি—সবগুলোই নারীদের হাতে ছিল।

নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক কাউন্সিল সুশীলা কারকিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।

ভারতে পড়াশোনা এবং অভিশংসনের মুখোমুখি:

নেপালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সময় কারকি বেশ কিছু ঐতিহাসিক রায় দেন; যা তাকে সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত করে তোলে। দুর্নীতির দায়ে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী জয়া প্রকাশ গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন তিনি। নেপালের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন কোনো মন্ত্রীকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ছিল এটি।

তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিতর্কিত নিজগড় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি নারীদের সন্তানের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার সম্পর্কিত প্রগতিশীল রায়ও দিয়েছেন তিনি।

সুশীলা কারকি ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন।

২০১৭ সালে কিছু রায়ের কারণে সরকারের বিরাগভাজণে পরিণত হন তিনি। সেই সময় ক্ষমতাসীন জোট দেশটির পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বলছে, এই অভিশংসন প্রস্তাবে তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও নির্বাহী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত এক বিরোধের কারণে তিনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন।