ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:২৭:৫২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘বাংকার’ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আইভরি কোস্টের ‘লৌহমানবী’ 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৪৬ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আইভরি কোস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন সাবেক ফার্স্ট লেডি সিমিওনি বাগবো। ‘লৌহমানবী’খ্যাত ৭৬ বছর বয়সী বিতর্কিত এই নারীনেত্রী তাঁর সাবেক স্বামীর সঙ্গে একবার পালিয়ে বাংকারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। খেটেছেন জেলও। এত কিছুর পরও স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর গড়ে তোলেন নতুন দল। আগামী ২৫ অক্টোবরের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আলাসানে উয়াতারার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে তাঁকে।

২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন সিমিওনি বাগবোর সাবেক স্বামী লরেন বাগবো। কঠোর ব্যক্তিত্বের কারণে তখন থেকেই সিমিওনি ‘আয়রন লেডি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সমর্থকেরা ‘মমতাময়ী’ বললেও অন্যদের কাছে তিনি ছিলেন ভয়ংকর এক কর্তৃত্বের প্রতীক।

সত্তরের দশকে শিক্ষকতা করতেন সিমিওনি। ইতিহাস ও ভাষাতত্ত্বে স্নাতক এই নারী সক্রিয় ছিলেন দেশটির শ্রমিক আন্দোলনে। সেই সূত্রেই পরিচয় লরেনের সঙ্গে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স হউফুয়ের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে একাধিকবার কারাবন্দীও হয়েছিলেন তাঁরা।

১৯৮২ সালে লরেন বাগবোর সঙ্গে যৌথভাবে আইভরিয়ান পপুলার ফ্রন্ট (এফপিআই) নামে একটি দল গঠন করেন সিমিওনি। ২০০০ সালে লরেন বাগবো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সিমিওনি হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রক্ষমতার অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক।

বাগবো দম্পতির শাসনকালে দেশটিতে বিভাজন প্রকট হতে থাকে। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। বিদ্রোহীদের দমন, নির্বাচনী জালিয়াতি, বিরোধী মত দমন—সবকিছুতেই সিমিওনির প্রভাব ছিল স্পষ্ট। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে নানাভাবে চেষ্টা চালান লরেন বাগবো। নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে শেষে ২০১০ সালে নির্বাচন দেন। পরাজিত হয়েও ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে শুরু হয় ভয়াবহ সংঘাত। প্রাণ হারান তিন হাজার মানুষ।

উয়াতারার সমর্থকেরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ঘিরে ফেললে স্বামীর সঙ্গে বাংকারে আশ্রয় নেন সিমিওনি। সেখান থেকেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২০ বছরের কারাদণ্ড হয় সিমিওনির। তবে ২০১৩ সালে ‘জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে’ প্রেসিডেন্ট উয়াতারা তাঁকে সাধারণ ক্ষমা করে দিলে মুক্ত হন।

গৃহযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ২০১২ সালে বাগবো দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)। সিমিওনির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করা হলেও লরেনকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত এই আদালতের হেফাজতে কাটাতে হয় সাত বছর। ২০২১ সালে লরেন দেশে ফিরেই সিমিওনির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।

বিচ্ছেদের পরও সিমিওনি দমে যাননি। নিজের একটি রাজনৈতিক দল গঠনে কাজ শুরু করেন। সাবেক স্বামীর দল এফপিআই থেকে আলাদা হয়ে গড়ে তোলেন মুভমেন্ট অব ক্যাপাবল জেনারেশনস (এমজিসি) নামের নতুন দল। এবার সেই দল থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। তবে ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় লরেন বাগবো এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। মনে করা হচ্ছে, সাবেক স্বামীর সমর্থকদের বড় অংশের ভোট পেতে পারেন সিমিওনি। জয়ী হলে তিনিই হবেন আইভরি কোস্টের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।