ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১৪:২৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হলেই কি মিসক্যারেজ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৪৫ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ মানেই আতঙ্ক। গর্ভের শিশুটিকে হারিয়ে ফেলার ভয়। তবে গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তক্ষরণের পরেও সুস্থ শিশুর জন্ম হয়েছে, এমন ঘটনাও কম নয়। সাধারণভাবে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসকে মনে করা হয় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকেরই এই সময়ে গর্ভপাত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের হিসাবমতে, প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে কোনো কারণে ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গেলে বলা হয় অ্যাবরশন বা মিসক্যারেজ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. আনিকা তাবাস্সুম

প্রথম ২০ সপ্তাহের মধ্যে রক্তক্ষরণ হলেই সব শেষ, ব্যাপারটা এমন নয়। হালকা বা মাঝারি রক্তক্ষরণের পরও মায়ের গর্ভে বেঁচে থাকতে পারে ভ্রূণ। এ সময় আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

গর্ভের ভ্রূণ ঠিক থাকা সত্ত্বেও রক্তক্ষরণ হওয়ার ঘটনাকে বলে থ্রেটেন্ড অ্যাবরশন। বিষয়টাকে গর্ভকালের হুমকি বলা যায়। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ গর্ভবতী নারীকে এই হুমকির সম্মুখীন হতে হয়।

অ্যাবরশন মানেই ভ্রূণের মৃত্যু। অর্থাৎ অ্যাবরশন হয়ে গেলে ভ্রূণ বাঁচানোর জন্য করার আর কিছুই থাকে না। তবে থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গর্ভকাল পেরিয়ে একটি সুস্থ শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনের পরেও সুস্থ সন্তানের জন্ম হয়।

উপসর্গ জানা থাক

থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনের মূল উপসর্গ যোনিপথে রক্তক্ষরণ। উজ্জ্বল লাল কিংবা বাদামি রঙের রক্ত যেতে পারে। হালকা বা মাঝারি পরিমাণ রক্তপাত হয় থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনে।

অন্তঃসত্ত্বা নারী জরায়ুর সংকোচনও অনুভব করতে পারেন। মনে হতে পারে, তলপেট কামড়ে ধরেছে। তা ছাড়া কোমরে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এসব উপসর্গ থাকতে পারে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত।

কেন হয় থ্রেটেন্ড অ্যাবরশন

অধিকাংশ ক্ষেত্রে থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে দায়ী হতে পারে এসব কারণ—

ভ্রূণের জিনগত ত্রুটি

* মায়ের ডায়াবেটিস বা হরমোনের তারতম্য

* মায়ের জরায়ুর টিউমার, জরায়ু বা জরায়ুমুখের গঠনগত ত্রুটি

* অল্প কিছু ক্ষেত্রে মায়ের অতিরিক্ত ওজন, বেশি বয়সে গর্ভধারণ, কোনো মারাত্মক শারীরিক আঘাত, জরায়ুমুখের পলিপ, ভ্রূণের ক্ষতি করতে সক্ষম এমন কোনো জীবাণুর সংক্রমণ, গর্ভফুলের অস্বাভাবিকতা, ধূমপান বা ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবকে দায়ী মনে করা হয়।

* গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ হলে আতঙ্কিত না হয়ে পূর্ণ বিশ্রাম নিন।

* রক্তক্ষরণ হলেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে। বিশেষ করে বিপদচিহ্ন দেখা দিলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন।

থ্রেটেন্ড অ্যাবরশন ছাড়াও আরও কিছু কারণে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মায়ের জীবনও হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই অবহেলা করবেন না।

এমন সময়ে পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন ঘটনার জন্য গর্ভবতী নারীর কাজকর্ম বা স্বাভাবিক চলাফেরাকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। বরং তাঁকে সাহস জোগানোই পরিবারের দায়িত্ব, যাতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন।

ভ্রূণ জরায়ুতে আছে কি না এবং বেঁচে আছে কি না, পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হতে হবে। অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রক্তপাতের কারণও খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন চিকিৎসক। সেই অনুযায়ী হবে চিকিৎসা। যেমন হরমোনের তারতম্য থাকলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হবে।

জেনে নিন বিপদচিহ্ন

* চাকার মতো রক্ত যাওয়া কিংবা সাদাটে কিছু বেরিয়ে আসা

* তীব্র পেটব্যথা

* জ্বর

* অত্যধিক দুর্বল বা খারাপ অনুভব করা

শেষ কথা

থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনের পর গর্ভকাল পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সময়টা বেশ সতর্কতা প্রয়োজন। ভারী কাজ এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকতে হবে। গর্ভকাল পূর্ণ হলেও সন্তানের ওজন কম হতে পারে, থাকতে পারে গর্ভফুলজনিত সমস্যা।

কারও কারও আবার সময়ের আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়। আর ২০-৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভকাল পূর্ণ না হয়ে অ্যাবরশনের দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই থ্রেটেন্ড অ্যাবরশনে চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা আবশ্যক।