পল্লবীতে যুবককে গুলি, নারীকে ছুরিকাঘাত
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৪০ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পল্লবীতে যখন-তখন ছোড়া হচ্ছে গুলি। কখনও পূর্বশত্রুতা, আবার কখনও মাদক কারবার, চাঁদাবাজি ও আধিপত্যের বিরোধ নিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় কুপিয়ে জখম করা হচ্ছে। পল্লবী যেন ‘অপরাধ জোন’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সন্ধ্যার পর এ এলাকায় এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করে।
সর্বশেষ গত শনিবার রাতেও পল্লবীর কালশী এলাকায় সুমন মিয়া (৩২) নামে এক যুবককে গুলি করা হয়। এ সময় লাভলী বেগম (৪৫) নামে এক নারীকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়রা বলছেন, মাদক কারবার নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। সুমন ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লাভলী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর আগে ২০ জানুয়ারি রাজধানীর পল্লবীতে মুসা গ্রুপের সন্ত্রাসীদের হামলায় মামুন গ্রুপের সদস্য বাবু ওরফে ব্লেড বাবু (৩৫) নিহত হয়েছেন। মুসা গ্রুপের মুরাদ, রনি, রাজন, সাকিন, তুফানসহ ১০-১২ জন টেকেরবাড়ি এলাকায় বঙ্গবন্ধু কলেজের পশ্চিম পাশে পরিকল্পিতভাবে তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁর মৃত্যু হয়।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর পল্লবীতে বেশ কিছু গ্রুপ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মাদক কারবার, ঝুট ব্যবসা, পরিবহন, ছিনতাই, চুরি, জমি দখল ও চাঁদাবাজি করছে তারা। অনেকে জামিনে বেরিয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে। বাউনিয়া বাঁধ, ১১ ও ১০ নম্বর সেকশন বেশি অপরাধপ্রবণ। স্থানীয় সূত্র বলছে, পল্লবীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন তিন ভাই। তারা হলেন– মশিউর রহমান মশা, জামিল ও মামুন। কেউ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তারা দেশের বাইরে রয়েছেন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, কালশীর অদূরে ২২ তলা ভবনের পেছনের আদর্শনগর এলাকায় বাস করেন চিহ্নিত মাদক কারবারি লাভলী আক্তার। কিছুদিন আগে মাদক কারবারি কবির ও ডাসা শরিফের এক সহযোগী এক হাজার ৮০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের বিষয়ে লাভলীর হাত রয়েছে– এমন সন্দেহ করে কবির ও ডাসা শরিফ।
গত শনিবার রাত ১১টার দিকে ১০-১২ সহযোগী নিয়ে ডাসা শরিফ আদর্শনগরে গিয়ে লাভলীর কাছে জানতে চান, তাদের লোককে কেন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে লাভলীকে ছুরিকাঘাত করে তারা। তখন তার সহযোগীরা ডাসা শরিফদের ধাওয়া করে। এ সময় ডাসা শরিফরা গুলি ছুড়লে লাভলীর সহযোগী সুমন মিয়ার পেটে লাগে।
হাসপাতালে সুমনের স্ত্রী মাহিমা বেগম বলেন, তার স্বামী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ করেন। কিছুদিন আগে কবির ও ডাসা শরিফের আস্তানায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ইয়াবা ও টাকা উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর তারা সন্দেহ করে– লাভলী যৌথ বাহিনীকে তথ্য দিয়েছে। এ কারণে তারা এই হামলা চালায়।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পল্লবী বিভিন্ন এলাকায় অনেকটা প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য কেনাবেচা হয়। জনসমাগমে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা বেচাকেনা হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। মাদক কেনার টাকা সংগ্রহ করতে চুরি-ছিনতাই করে মাদকাসক্তরা। ওই এলাকায় মাদক কারবারিদের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। মাদক নিয়ে এসব গ্রুপের মধ্যে হামলা পাল্টা-হামলার ঘটনা ঘটলেই চাঁদাবাজিকে সামনে আনা হয়। হামলার শিকার ব্যক্তিরা ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে অভিযোগ করেন, চাঁদার টাকা পরিশোধ না করা কিংবা ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ার কারণে হামলার শিকার হতে হয়েছে।
চাঁদার টাকা না পেয়ে গত ১১ জুলাই পল্লবীর আলাব্দিরটেক এলাকার এ কে বিল্ডার্স নামের আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে হামলা ও গুলি করে দুর্বৃত্তরা। শরিফুল ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন। হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, একদল লোক লাঠিসোটা ও দেশি অস্ত্র হাতে আবাসন প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করছে। তাদের কারও কারও মুখে মাস্ক পরা। হামলাকারীদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
গত বছরের ৩০ অক্টোবর পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধে মাদক কারবারের আধিপত্য নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে আয়েশা আক্তার নামে এক নিরীহ নারী নিহত হন।
পল্লবী থানার ওসি শফিউল ইসলাম বলেন, গুলির ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনা জানার পর আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ধারণা করা হচ্ছে, মাদকের বিরোধ থেকে এই গুলির ঘটনা ঘটেছে।
