নয়া মেরুকরণের পথে রাজনীতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:১১ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
ছবি : সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাজনীতিতে উত্তাপ তত বাড়ছে। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন ও বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল অভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে। যা আজ থেকে শুরু হচ্ছে এই কর্মসূচি। এ পরিস্থিতিতে প্রায় সব মহলে আলোচনা হচ্ছে তবে কি দেশের রাজনীতি নতুন মেরুকরণের পথে চলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার কৌশল হিসাবে দলগুলো কর্মসূচি দিয়ে থাকতে পারে। তারা বলছেন, পরিবর্তিত অবস্থায় ঐক্য ধরে রাখতে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোকে আগে আলোচনার মাধ্যমে খুঁজতে হবে সমাধানের পথ। একে অপরকে ছাড় না দিলে সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এজন্য সব পক্ষকে সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অন্যথায় বিভক্তি-বিভাজনের এই সুযোগ নেবে পরাজিত শক্তি আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে এ মুহূর্তে কর্মসূচির বিরোধী বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল বলছে, আলোচনা চলা অবস্থায় দাবি আদায়ে মাঠে নামা অযৌক্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। যে কোনো দল দাবি আদায়ে কর্মসূচি দিতেই পারে। এটা তাদের অধিকার। কিন্তু সেই কর্মসূচি যদি ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে তবে সেটা ভেবে দেখা উচিত। কারণ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়তে পারে। তবে জামায়াতসহ কর্মসূচিতে যাওয়া দলগুলো বলছে, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হতে পারে সেটা তারা মনে করেন না।
তাদের মতে, জনমত মজবুত করতে এই কর্মসূচি। জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, দাবিগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলো একে অপরকে ছাড় দিতে হবে। অন্যথায় দেশের জন্য সমূহ সংকট তৈরি করবে। আর সেই সংকট সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করেই সব করা উচিত।
জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন ও কয়েকটি দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি রাজনৈতিক দল। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো-জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন, পিআর পদ্ধতি চালু, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা ও স্বৈরাচারী শক্তির দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। যারা কর্মসূচি দিয়েছেন তারাও ওই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনা শেষ হওয়ার আগেই এ বিষয়ে রাজপথে আন্দোলনের আহ্বান জানানো অযৌক্তিক। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রতি কোনো সম্মান দেখাচ্ছে না কর্মসূচি দেওয়া দলগুলো। যারা স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায় তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে জনগণ। তবে তাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে গণতান্ত্রিক অধিকার আছে, তারা করতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
তবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, সমমনা দলগুলো একই দাবিতে কর্মসূচি দিয়েছে, এটাকে আমরা যুগপৎ বলব না। ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলাকালীন এ ধরনের কর্মসূচি স্ববিরোধী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা স্ববিরোধী মনে করি না। আমরা মনে করি জনমতকে মজবুত করতে এই কর্মসূচি। বরং ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এটা আরও সহায়ক হবে। এই দাবিটা জনগণের সে কথা আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবার বলেছি। এই দাবিটা যে জনগণের সেটা প্রমাণ করার জন্যই এ কর্মসূচি।
জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। রোববার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জুলাই জাতীয় সনদসহ সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোতে সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমাধানের পথে আছি, একই বিষয় যদি রাজপথে নেওয়া হয়, তাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা আছে। এতে করে জুলাই আন্দোলনের অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা দূরত্ব, কিছুটা সন্দেহ-অবিশ্বাস ও বিভ্রান্তি তৈরি করবে। এসব আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা দরকার বলে আমরা মনে করি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা মনে করেন কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে যদি দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়, তবে দেশের অর্থনীতিসহ সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়তে পারে। আর সেটা হলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনীতিবিদরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক পরিকল্পনা করা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ইসলামী দলগুলো সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্নভাবে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তাদের উত্থান ঘটেছে। এই উত্থানটার মাধ্যমে তারা একটা বার্তা দিতে চায়। বিএনপিসহ বড় দলগুলোকে টার্গেট করে তারা বার্তা দিতে চায় রাজনীতিতে আমরা এখন গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। এখন আর মার্জিনাল বা প্রান্তিক না; সেটা তারা প্রমাণ করতে চায় এ কর্মসূচির মাধ্যমে। তবে কর্মসূচি যাই দেওয়া হোক রাজনীতিতে জামায়াতের যে উত্থান তারা কখনোই নিজেদের ক্ষতি নিজেরা ডেকে আনতে চাইবে না। এ কর্মসূচির মাধ্যমে অন্য কিছু করলে জামায়াত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিএনপি লাভবান হবে।
