ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৫১:৪১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘বয়ঃসন্ধিকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য’ তিনদিনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:০০ পিএম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

ইডেন মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রুপা কয়েক মাস ধরে অনিয়মিত মাসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। লজ্জা ও সংকোচের কারণে কাউকে কিছু বলতে পারছিলেন না। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত তিনদিনব্যাপী স্বাস্থ্যমেলার শেষ দিনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তিনি পিসিওএস-এ আক্রান্ত। নতুন করে ডায়েট প্ল্যান ও নিয়মিত ব্যায়াম শুরু করতে উৎসাহিত হন তিনি। রুপা বলেন, ‘আজ বুঝলাম আমার সমস্যার সমাধান আছে।’

অন্যদিকে একই কলেজের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ভুগছিলেন স্থূলতায়। স্বাস্থ্যমেলায় নিউট্রিশন কাউন্সেলিং সেশনে অংশ নিয়ে তিনি জানলেন, এটা কেবল সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, বড় স্বাস্থ্যঝুঁকিও বটে। হাতে পেলেন সুষম খাদ্য পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে জীবনধারাই পাল্টে ফেলবো।’

রুপা আর জান্নাতুলের মতো প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী বৃহস্পতিবার তিনদিনের সচেতনতামূলক এ আয়োজনে চিকিৎসা সেবা নেন। অনেকেই কাউন্সেলিং, আবার কেউ টিকাদান কর্মসূচির সুবিধা গ্রহণ করেন। 

আয়োজকদের একজন আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেহেরীন এফ. সিদ্দিকা ইডেনের প্রাক্তন ছাত্রী। নিজের কলেজ প্রাঙ্গণে ফিরে এসে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কিশোরী ও তরুণীদের স্বাস্থ্য সচেতন করা। কারণ আমরা জানি- প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর।’

তার মতে, ১০ থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত সময়টা হলো এক তরুণীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। এ সময়ে মেয়েরা শিশু থেকে কিশোরী, আর কিশোরী থেকে ধীরে ধীরে এক পরিণত নারীতে পরিণত হয়। এই ট্রানজিশনকে কেন্দ্র করেই তাদের শরীর ও মনের ওপর আসে নানান পরিবর্তন। এই বয়সটা যদি ভালোভাবে কাটানো যায়, তাহলে মেয়েরা দায়িত্বশীল, কর্মক্ষম এবং সমাজের জন্য মূল্যবান সম্পদে পরিণত হবে। ডা. সেহেরীন এফ. সিদ্দিকা বলেন, ‘ইডেন কলেজ দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও চলতি বছরেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। জেন জি প্রজন্ম যদি স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হয়ে ওঠে, তবে তারাই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’ 

আয়োজনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম বা পিসিওএস। প্রতি ১০ জন তরুণীর মধ্যে একজন এই সমস্যায় ভুগছে। বিশেষ সেশনে ডাক্তাররা খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এতে অংশ নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী নতুন করে জীবনযাপনের পরিকল্পনা করেছেন।

শেষ দিনে দুপুর পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী গ্রহণ করেন এইচপিভি ভ্যাকসিন, যা জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ‘প্যাপিলোভ্যাক্স’ ভ্যাকসিন এখানে ৫০০ টাকা ছাড়ে দেওয়া হয়। এতে প্রায় ২৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অংশ নেন, যাদের মধ্যে ছিলেন গাইনি স্পেশালিস্ট, নিউট্রিশনিস্ট, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

এর আগে গত মঙ্গলবার ইয়াহা ফাউন্ডেশন, ইডেন মহিলা কলেজ ও আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে এই স্বাস্থ্যমেলার সূচনা হয়। উদ্বোধনী দিন সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। বাদ্যের তালে তালে কলেজের ঐতিহ্যবাহী পুকুরপাড় ঘুরে র্যাণলিটি শেষ হয় মূল ফটকে।

র‌্যালি শেষে কলেজের মিলনায়তনে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শামসুন নাহার বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজনে মেয়েরা নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানবে ও সুরক্ষার পথ খুঁজে পাবে। রাষ্ট্রকে এ ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এসএম সৈকত বলেন, ‘নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে নীরবতা ভাঙতে হবে। সচেতনতা, নারীবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। কিশোরী ও নারীরা যেন স্বাধীনভাবে নিজের স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারে, পরিবার ও সমাজকে সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

আলোচনা সভা শেষে টিকাদান কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যঘর উদ্বোধন করা হয় এবং বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালন করা হয়। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ইডেন মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিষয়ক বিভিন্ন সচেতনতামূলক ফেস্টুন, ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়েছিল। 

প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মেরি স্টোপস বাংলাদেশের লিড অব অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন মনজুন নাহার, ইয়াহা ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা প্রফেসর ডাক্তার মো. আবিদ হোসেন মোল্লা, ভাইস প্রেসিডেন্ট ডাক্তার সায়রা তাসনিম, ইডেন মহিলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল প্রফেসর খালিদা ইয়াসমিন, টিচার্স কাউন্সিল অব দ্য কলেজ প্রফেসর মাহফিল আরা বেগম, পুষ্টিবিদ ডাক্তার শামসুন্নাহার নাহিদ প্রমূখ। ইনসেপ্টার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেলস ম্যানেজার শহীদুল ইসলাম এবং সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার হোমায়রা ফাতেমা অনন্যা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রীতা হালদার।