ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:০০:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মাইলস্টোন অভিভাবকদের আট দফা দাবি 

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৩ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত এক ছাত্রের বাবা রেজাউল করিম শামীম বলেন, স্কুলের ছুটি শেষে সন্তানকে নিতে স্কুল ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সামিউল আমার কাছে পৌঁছেও গিয়েছিল প্রায়। আমার কাছ থেকে যখন সে মাত্র এক হাত দূরে, তখনই বিমানটি আছড়ে পড়ে। আগুনে মুহূর্তের মধ্যে আমার একমাত্র সন্তানকে পুড়ে অঙ্গার হতে দেখলাম। ‘বাবা’ বলে সে একটিমাত্র চিৎকার দিয়েছিল। আজও তা কানে বাজে। 

কান্নায় ভেঙে পড়ে রেজাউল বলেন, দু’মাস সামিউলের কবরের পাশ থেকে সরতে পারিনি। ছেলেটি আমার একা ঘুমাতে পারত না। কবরের অন্ধকারে সে একা না জানি কেমন আছে!

মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও নিহতদের পরিবারের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছেন না। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) অভিভাবকরা ৮ দফা দাবি নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলন করতে। কান্নায় তাদের বেশির ভাগই গুছিয়ে কথা বলতে পারেননি। তাদের দুঃখ স্পর্শ করে উপস্থিত সংবাদকর্মীদেরও। পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিভাবক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘এ দুর্ঘটনায় আমি দুই সন্তান নাজিয়া-নাফিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছি। এ বয়সে এসে কি সন্তান হারানোর শোক বহন করা যায়! কী নিয়ে বেঁচে থাকব আর! বাঁচতে ইচ্ছে করে না।’

আহত শিক্ষার্থী রায়হান তৌফিকের বাবা মনির হোসেন সুমন বলেন, ‘আমার ছেলে বেঁচে আছে ঠিকই, কিন্তু তার শরীরের ২২ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে ৫৫ দিন থাকার পর বাসায় ফিরেছে। এখনও তাকে বিশেষ পোশাক পরিয়ে রাখতে হয়, না হলে হাত-পা বেঁকে যেতে পারে। অথচ দুই মাস হয়ে গেলেও সরকার বা বিমানবাহিনী; কেউ পাশে নেই।’

নিহত তাসমিয়া হকের বাবা নাজমুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, সন্তানদের মধ্যে যারা আহত, তাদের অনেকের অবস্থা এতটাই খারাপ, তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কিনা, তারা জানে না। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আবার অনেকে আছে, যাদের দীর্ঘ সময় চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হবে। কয়েকজন আহত শিক্ষক আছেন, যারা আর কখনও কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন না। অথচ তাদের ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।

সানজিদা বেলায়েতের মেয়ে জায়ানা মাহবুব এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। এই মা বলেন, ‘আমার মেয়েটা পরিপাটি ছিল। হাতে মেহেদি দিত, ব্রেসলেট পরত। ওর হাত পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সে বলে, হাত জম্বির মতো হয়ে গেছে। ওর প্রশ্নের উত্তর আমি কী দেব? এ বাচ্চাগুলোকে সমাজ কোন চোখে দেখবে? কারও হাতে কলম উঠবে না।’

সানজিদা বেলায়েত বলেন, আরেক বাচ্চা বসতে পারে না। তার ফিজিওথেরাপি দরকার। সেই বাচ্চার বাবা নেই। সে কার কাছে যাবে? আবিদুর রহিম নামে এক বাচ্চা কী যে কষ্ট পাচ্ছে! তার শরীরে আর কোনো জায়গা নেই যে চামড়া নেবে। একটা বাচ্চা মানসিক সমস্যা নিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে। শব্দ শুনলে সে চিৎকার দেয়। অনেকে কানেও শোনে না। কয়েকজন শিক্ষকও আহত। তারা কি কর্মজীবনে ফিরতে পারবেন?

এসব অভিভাবকের অভিযোগ, সরকার বা বিমানবাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।

আট দফা দাবি

সংবাদ সম্মেলনে নিহত শিক্ষার্থী নাজিয়া-নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো– দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের বিচার; নিহতদের পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ও আহতদের পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া; আহতদের জন্য আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা; স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অক্ষম আহতদের পুনর্বাসন ও সরকারি চাকরির সুযোগ করে দেওয়া; প্রতিবছর ২১ জুলাইকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘শোক দিবস’ হিসেবে পালন; নিহতদের কবর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ; নিহত পাইলট, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্টাফদের শহীদি মর্যাদা (সনদ-গেজেটসহ) দেওয়া এবং নিহতদের স্মরণে উত্তরায় একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ।

অভিভাবকরা বলেন, আমাদের সন্তানরা স্কুলে ছিল; কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে নয়। স্কুল ভবনের ওপর যুদ্ধবিমান পড়বে– এটা পৃথিবীর কোথাও শোনা যায়নি। তাই এর দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। সরকার যেন দ্রুত এ ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। তারা বলেন, ক্ষতিপূরণের বিষয়টা টাকার হিসাব নয়। এটা রাষ্ট্রের দায় গ্রহণের প্রতীক। আমাদের সন্তানদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়– সেই প্রত্যাশাই আমাদের।