ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৩:২৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাংলাদেশে আইভিএফ চিকিৎসায় আসছে জেনেটিক স্ক্রিনিং প্রযুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:১৭ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আইভিএফ চিকিৎসায় (টেস্ট টিউব বেবি) উন্নত জেনেটিক স্ক্রিনিং ও এমব্রায়ো বায়োপসি প্রযুক্তি চালু হওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ প্রযুক্তি চালু হলে আইভিএফ চিকিৎসার সফলতার হার বাড়বে এবং মিসক্যারেজ ও ইমপ্ল্যান্টেশন ব্যর্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত ‘অ্যাডভান্সমেন্টস ইন রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজিস’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। সেমিনারে প্রজনন চিকিৎসার সর্বশেষ অগ্রগতি ও প্রযুক্তি নিয়ে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মতবিনিময় করেন।

সেমিনারে চিকিৎসকরা জানান, বাংলাদেশে আইভিএফ কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগেই এখনও উন্নত জেনেটিক স্ক্রিনিং বা এমব্রায়ো বায়োপসি প্রযুক্তি নেই। অথচ এসব প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে ভ্রূণের ক্রোমোজোমজনিত ত্রুটি আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এর ফলে গর্ভপাত বা ইমপ্ল্যান্টেশন ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি কমবে এবং একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

সেমিনারে জানানো হয়, প্রি-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক টেস্টিং (পিজিটি) ও এন্ডোমেট্রিয়াল রিসেপটিভিটি টেস্ট (ইআরএ) বিশেষত তাদের জন্য কার্যকর যারা একাধিকবার আইভিএফে ব্যর্থ হয়েছেন। নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ভ্রূণের অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করা যাবে আরও নির্ভুলভাবে। পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ নিয়ন্ত্রণে আনার দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষ এই সুবিধা নিতে পারেন।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, প্রযুক্তি উন্নত হলেও রোগীর শারীরিক অবস্থা, বয়স ও ভ্রূণের গুণমানের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ কেবল প্রযুক্তি নয়, বাস্তব পরিস্থিতিই নির্ধারণ করবে সফলতার হার। একইসঙ্গে এসব চিকিৎসায় নৈতিকতা, আইনগত কাঠামো ও তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

সেমিনারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও আইভিএফ ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. ফ্লোরিডা রহমান বলেন, “যাদের ভালো মানের ভ্রূণ থাকা সত্ত্বেও আইভিএফ ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের জন্য এন্ডোমেট্রিয়াল রিসেপটিভিটি এসে (ইআরএ) এবং প্রি-ইমপ্লান্টেশন জেনেটিক টেস্টিং (পিজিটি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এই প্রযুক্তিগুলো এখন ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে, যা রোগীদের জন্য আশার খবর।”

লুমিনা আইভিএফ-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ এমব্রায়োলজিস্ট মাশরুদ হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই বাংলাদেশে এমব্রায়ো বায়োপসি ও নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি চালু করতে যাচ্ছে। তার ভাষায়, “আমাদের লক্ষ্য হলো কোনো ধরনের জেনেটিক ত্রুটি নিয়ে আইভিএফ বেবি জন্ম না নেওয়া। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ভ্রূণের ক্রোমোজোমাল অ্যানোমেলি স্ক্রিনিং নিশ্চিত করা হবে।”

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভারতে এ প্রযুক্তির খরচ প্রায় ২৫ হাজার রুপি হলেও বাংলাদেশে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে এই সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে এ খরচ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

ভারতের জিভা ফার্টিলিটির ডিরেক্টর সন্দীপ শর্মা তার আলোচনায় জানান, এমব্রায়ো বায়োপসি ও জেনেটিক টেস্টিংয়ের মাধ্যমে ভ্রূণের ক্রোমোজোমাল অ্যানোমেলি বা জন্মগত ত্রুটি শনাক্ত করা সম্ভব। এতে সুস্থ ভ্রূণ নির্বাচন করে ট্রান্সফার করা গেলে মিসক্যারেজ ও ইমপ্ল্যান্টেশন ব্যর্থতা অনেকাংশে কমে আসবে।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারতে এই পরীক্ষার খরচ প্রায় ২৫ হাজার রুপি হলেও বাংলাদেশে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে খরচ আরও কমিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে আনার লক্ষ্য রয়েছে।

সেমিনারে ক্যান্সার রোগীদের প্রজনন ক্ষমতা সংরক্ষণ বিষয়েও আলোচনা হয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনের আগে শুক্রাণু, ডিম্বাণু বা ভ্রূণ হিমায়িত করে রাখা হলে রোগীরা সুস্থ হওয়ার পর সন্তান ধারণের সুযোগ পাবেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ্যাত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. শাকিলা ইশরাত, ব্রিগেডিয়ার (অব.) প্রফেসর ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, মেজর জেনারেল (অব.) প্রফেসর ডা. লিজা চৌধুরী প্রমুখ।