ঘর পেলেন সেই ফজিলা বেগম
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:২১ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
ছবি : সংগৃহীত
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী ফজিলা বেগম অবশেষে একটি নতুন ঘর পেয়েছেন। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কচুয়া গ্রামে গিয়ে ফজিলা বেগমের হাতে ঘরটি হস্তান্তর করেন সিরাজগঞ্জের মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত মামুন বিশ্বাস।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর ‘আশপাশের মানুষ যা দেয়, তাই খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি’ শিরোনামে অনলাইন নিউজ পোর্টালে ফজিলা বেগমের দুঃসহ জীবনের খবর প্রকাশিত হয়। এই সংবাদটি মামুন বিশ্বাসের নজরে আসে।
সংবাদটি প্রকাশের পর সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল রনী ফজিলা বেগমের বাড়িতে যান এবং তাকে শুকনো খাবার, নগদ অর্থ ও টিন দিয়ে সহায়তা করেন।
ফজিলা বেগম বলেন, আগে যে ঘরে থাকতাম, বৃষ্টি হলেই পানি পড়ত। আমার প্রতিবন্ধী ছেলে আর নাতনিকে নিয়ে পানির মধ্যে থাকতে হতো। অনেক কষ্ট করে ভাঙা ঘরে দিন কাটিয়েছি। আজ আমার নিজের একটি নতুন ঘর হয়েছে। তিন বস্তা চাল, ডালসহ সব ধরনের বাজার পেয়েছি। এছাড়াও নগদ ১৫ হাজার টাকা পেয়েছি। এত বাজার আমি কখনো কিনতে পারিনি, চোখেও দেখিনি। আজ একসাথে এত কিছু পেয়ে খুব ভালো লাগছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের কাছে গিয়েছি, কেউ আধা কেজি চাল দিয়েছে সেটা দিয়েই রান্না করে খেয়েছি। কী দিয়ে খাব, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। চাল থাকলে তরকারি থাকে না, তরকারি থাকলে চাল থাকে না। আজ অনেক জিনিস পেয়েছি। এজন্য খুব খুশি লাগছে। মামুন মামা আমাকে ঘর দিয়েছেন। দোয়া করি, যেন আমার মতো অন্য গরিব-অসহায় মানুষদেরও এভাবে সহযোগিতা করতে পারেন মামুন মামা।
মামুন বিশ্বাস বলেন, কিছুদিন আগে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে অসহায় এতিম জান্নাত ও ফজিলাকে নিয়ে একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশ হয়। আমরা সেই সংবাদটি দেখি এবং তাদের অবস্থা জানার চেষ্টা করি। পরে ফেসবুকে পোস্ট দিলে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা সহায়তা আসে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনও সহযোগিতা করে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিল ফজিলা বেগমকে রঙিন টিনের ঘর, লেপ-তোষক, বিছানার চাদর, কাপড় ও নগদ ১৫ হাজার টাকা দেওয়া। জান্নাতের লেখাপড়ার জন্য প্রবাসী নাহিদ ভাই প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পাঠাবেন। এই মানবিকতা দেখে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়েছেন। আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে ঘরটি নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় সব জিনিস বুঝিয়ে দিয়েছি। দিনশেষে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারাই আমাদের আত্মতৃপ্তি। জান্নাতের লেখাপড়াও নিশ্চিত হলো এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। ধন্যবাদ, এমন মানবিক সংবাদ সামনে আনার জন্য।
সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল রনী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে ফজিলা বেগমের গল্পের মাধ্যমে। সিরাজগঞ্জ থেকে একজন সহৃদয় ব্যক্তি মামুন এসে ঘরটি নির্মাণ করে দিয়েছেন। আমরা পূর্বেও সরকারি সহায়তা দিয়েছি। সেই সঙ্গে ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে এগিয়ে এসেছেন। এজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ, যারা এই মানবিক বিষয়টি সামনে এনেছেন।
