ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:৫৭:১৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

তেজগাঁওয়ের ৭০ শতাংশ সড়ক অবৈধ দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৪৯ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও বাসচালকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তেজগাঁও ও আশপাশ এলাকার মানুষ। ওই এলাকার ৭০ শতাংশ সড়ক এখন তাদের দখলে। চালকরা এমনভাবে যানবাহন রাস্তার দুপাশে রাখছেন, সড়ক দিয়ে অন্য গাড়ি যাওয়ার উপায় থাকছে না। মাঝেমধ্যে সড়কে যান চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তেজগাঁও এলাকা দিয়ে যারা যাতায়াত করেন, তাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, একসময় শুধু তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের সামনের সড়কের দুপাশে চালকরা ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পার্ক করতেন। এতে সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিক চলাচল দুঃসহ হয়ে পড়ত। ২০১৫ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক সড়কটি ট্রাক-কাভার্ডভ্যানমুক্ত করতে গেলে চালক-শ্রমিকরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে পুলিশ-সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তিনি মুক্ত হন। একটা সময় সড়কটিতে ফেরে শৃঙ্খলা।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর ধীরে ধীরে সড়কটিতে আবার গাড়ি রাখা শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে তেজগাঁও, সাতরাস্তা থেকে শুরু করে বিজয় সরণির ফ্লাইওভার সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে যত সড়ক আছে, সবটাই ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের দখলে চলে যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক বাসগুলোও সড়কে রাখা হচ্ছে।

ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালকে বহুতল কার পার্কিং তৈরির জন্য পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ নিয়ে মামলা-পাল্টা মামলার পর বিষয়টির সুরাহা হয়। পরে ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম সেখানে বহুতল কার পার্কিং করার ঘোষণা দিলেও তা আর এগোয়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি কারাগারে।

সরেজমিন দেখা গেছে, তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় থেকে কারওয়ান বাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ছয় লেনের চারটিই চলে গেছে ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানের দখলে। আবার রেলক্রসিং থেকে তেজগাঁও রেলস্টেশন পর্যন্তও ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে ভরা। ট্রেন যাওয়ার সময় রেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক ফেললে উভয় পাশে ভয়াবহ জট লেগে যায়। হলি ক্রস কলেজ পর্যন্ত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পার্ক করায় ফার্মগেট পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

তেজগাঁও এলাকায় রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ অফিস, হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিজি প্রেসের মতো কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানও এখানে। বিজি প্রেসের আশপাশের প্রতিটি সড়ক পরিকল্পিতভাবে প্রশস্ত হলেও এসব সড়কের ৭০ শতাংশজুড়ে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান রাখা হয়। এ কারণে ফুটপাতগুলোও পথচারীরা ব্যবহার করতে পারেন না।

গত রোববার দেখা যায়, এসেনসিয়াল ড্রাগসের পাশের সড়কে একটি কাভার্ডভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন ২৩১৪২৪) রাস্তায় রেখে মেরামতের কাজ করছে। চালক মিরাজ বলেন, ‘এই পার্কিংয়ের জন্য ৪০ টাকা ভাড়া দিই। তাহলে এটা অনিয়ম হবে কেন?’ কাকে ভাড়া দেন– জানতে চাইলে বলেন, ‘তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডের ইউনিয়নের লোকজনকে।’

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ড্রাইভারস ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরশাদ পাটোয়ারী বলেন, ‘ট্রাকস্ট্যান্ডে পাঁচ শতাধিক গাড়ি রাখার মতো জায়গা আছে। তাহলে বাকি গাড়ি কোথায় থাকবে? যারা গাড়ি রাখছে, তাদের কাছ থেকে চালক-শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বাবদ ২০ টাকা নেওয়া হয়। চালক-শ্রমিকের কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলে তখন তাদের পরিবারকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।’
প্রতিদিন বেগুনবাড়ী থেকে হেঁটে কারওয়ান বাজারে যাওয়ার সময় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন বেসরকারি চাকরিজীবী নিয়ামত হোসেন। তিনি বলেন, ‘রিকশা করে গেলে কত সময় লাগে, তার ঠিক নেই। এ জন্য হেঁটে যাই। আবার হেঁটে যাওয়ার মতো ফুটপাতও নেই। ট্রাকের পেছনে ফুটপাতে বসে অনেকে নেশা করে। সন্ধ্যার পর তো চলার অবস্থাই থাকে না।’

এদিকে তেজগাঁও শিল্প এলাকার পূর্ব অংশ এফডিসি মোড় থেকে শুরু করে গুলশান লিঙ্ক রোড অংশে যত সড়ক আছে, এর সবটাতেই রাখা হয় বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। মহাখালী বাস টার্মিনালের গাড়িও প্রধান সড়কে পার্ক করা হয়। এ ছাড়া ভেতরের সড়কগুলোতে আছে রিকশার গ্যারেজ। ফলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরণি থেকে হাতিরঝিলের মধ্যবর্তী এলাকার সড়কেও অবৈধ পার্কিং চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে আছে ফুটপাত-সড়ক দখলেরও নানা চিত্র। ফলে গভীর রাতেও কখনও কখনও তেজগাঁও এলাকায় যানজট লেগে যায়।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ-সংলগ্ন রিকশার গ্যারেজ পরিচালনাকারী ইসমত আলী জানান, যারা রিকশা রাখে, তাদের কাছ থেকে ৪০ টাকা রাখা হয়। এলাকার কয়েক ভাইকে তিনি কিছু দেন। বাকিটা তিনি রাখেন। কিন্তু সেই রাজনৈতিক ভাই কারা, সেটা জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

রাস্তার ভেতরে রিকশার গ্যারেজ করায় জনগণের ভোগান্তি হওয়া প্রসঙ্গে ইসমত আলী বলেন, ‘তেমন সমস্যা তো দেখি না।’

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো. তোফাজ্জল বলেন, ‘সব সরকারই বলেছে, টার্মিনাল করে দেবে। করতে করতে আওয়ামী লীগ সরকারও গেল। পরিবহন তো একটা শিল্প। কত শিল্পের জন্য তো সরকার জায়গা দিয়েছে। একবার টঙ্গীর আশপাশে জায়গা দিতে চাইল। সেটাও দিল না। আমরা তো রাস্তাঘাটে গাড়ি রাখতে চাই না। রাস্তায় গাড়ি রাখলে পথচারীর গালি শুনতে হয়।’

এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, একটি মেগা সিটি সচল রাখতে হলে যাত্রী ও পণ্যবাহী– উভয় ধরনের যানবাহনই লাগবে। আবার এগুলোর পার্কিং জোন না থাকলে শহরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো যেমন শহরের একটু বাইরে আছে, তেমনি পণ্যবাহী গাড়িগুলোও রাখার জন্য শহরের প্রান্তসীমায় স্থায়ী টার্মিনাল করতে হবে। তাহলে রুট অনুযায়ী যানবাহনগুলো সেখানে পার্ক করে রাখতে পারবে। এতে শহরের ভেতরের যানজটও কমবে। কিন্তু তেজগাঁওয়ের মতো জায়গায় এ ধরনের ট্রাকস্ট্যান্ড থাকা স্থায়ী সমাধান না।

এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা দেখব।’