‘দুর্বল শাসনের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভব নয়’
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:১৬ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রবিবার
ছবি : সংগৃহীত
অর্থনীতি চাঙ্গা করতে চাইলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে দায়িত্ব ছাড়তে হবে। এ রকম দুর্বল শাসন ব্যবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সে জন্য নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকার যত দীর্ঘ হবে, অর্থনীতির জন্য তত খারাপ হবে। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাত নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন।
রাজধানীর এফডিসি মিলনায়তনে ‘ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংক একীভূতকরণ’ শীর্ষক ছায়া সংসদের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ বিজয়ী হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত এক বছরে অর্থনীতির কিছু সূচকের পতন থামানো গেছে। তবে সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। তার ওপর দারিদ্র্য বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আরেক সংকটের দিকে নিয়ে যাবে। স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য দ্রুত নির্বাচনের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অর্থনীতি ও রাজনীতি পাশাপাশি চলে। একটি আরেকটার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অন্তর্বর্তী সময়ে কেউ বিনিয়োগ করতে চায় না। অর্থনীতি চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিতে চাইলে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত। তাহলে দেশের ভেতরে ও বাইরে বাংলাদেশের বিষয়ে আস্থা ফিরে আসবে। এখন এক ধরনের অনাস্থা রয়েছে। আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা দুর্বল। বিভিন্ন জায়গায় মব শুরু হয়েছে। না আছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিশ্চয়তা, না আছে ঘরবাড়ির নিশ্চয়তা। এ রকম একটা দুর্বল শাসন ব্যবস্থার মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা সম্ভব নয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢালাওভাবে সবার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা ঠিক নয়। অর্থনীতিতে যারা উৎপাদন করছেন, কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছেন এবং যাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ নেই তাদের অ্যাকাউন্ট জব্দ করে রাখলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিচার বিশ্লেষণ করে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবসা চলতে দিতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে বছরের পর বছর কোনো সুশাসন ছিল না। দেশের জিডিপি ও জনসংখ্যার তুলনায় বেশি ব্যাংক করার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। অর্থনীতিকে সহায়তা করা এসব ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল না। দুরবস্থা থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যাংক খাত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল পাঁচটি ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ঋণই খেলাপি। এ রকম অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর জন্য একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একীভূত ব্যাংককে টেকসই করতে হলে খরচ কমানো ও মূলধন বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। একেকটি ব্যাংকের কাজের ধরন, মানবসম্পদের যোগ্যতা এবং করপোরেট সংস্কৃতি একেক রকম। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খেলাপি ঋণ। গড়ে এসব ব্যাংকের ৭৯ শতাংশ ঋণখেলাপি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ১০ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আরেকটা বিষয় হলো– বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে খারাপ সংকেত যাবে। সফল হলে একই মডেলে আরও ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, কিছু ব্যাংক অনেকটা তলাবিহীন ঝুড়ির মতো হয়ে গেছে। এসব ব্যাংক একীভূত করে লাভবান করার টেকসই ব্যবস্থা দরকার। বছরের পর বছর সরকারের টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তবে একীভূত হওয়ার পর ব্যাংকের সফলতার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, তা দেখার বিষয়। ইতোপূর্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব হতে দেখা গেছে। অবশ্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে যারা সরকার পরিচালনায় থাকবে তারা না চাইলে যত শক্তিশালী আইনই করা হোক, কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, অর্থনীতি সঠিক পথে পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক অর্থনীতি আগে ঠিক করতে হবে। সঠিক রাজনীতি ছাড়া সঠিক অর্থনীতি হয় না। এর চাক্ষুষ প্রমাণ বিগত সময়ে গেছে। কয়েকজন ব্যক্তি ব্যাংক খাত ও জ্বালানি খাত থেকে টাকা তুলে নিয়েছে। বড় বড় প্রকল্পের নামে টাকা নিয়ে গেছে। এসব ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সহায়তা ছিল।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক খাতের মাফিয়াদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছিল। চোখের সামনে ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ভালো ব্যাংক লুণ্ঠিত হয়েছে। মাফিয়ারা এসব ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে।
