জাতীয় কন্যাশিশু দিবস আজ
যৌন রোগের ঝুঁকিতে পথকন্যারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:১২ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ব্যস্ত সড়কের এক কোণে বসে আছে এক কন্যাশিশু (১৩)। হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ, চোখে ক্লান্তি। প্রতিদিনের মতো তাকে ‘কাজে’ যেতে হবে। সে পথশিশু। তার মা নেই, বাবার নামও অজানা। দুই বছর আগে যৌনকর্মে জড়ায়। কারণটা নির্মম, ‘কাজ না করলে খাইতে পারমু না।’ তার চোখে আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তার ছাপ, ‘গ্রাহকরা কনডম ব্যবহার করে না। ভয় হয়, যদি রোগ হয়?’
তার মতো কয়েকশ কন্যাশিশু টিকে থাকার লড়াই করছে যৌনকর্মের মাধ্যমে। সমাজ তাদের কথাকে অদৃশ্য করে রেখেছে। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমি কন্যাশিশু, স্বপ্ন গড়ি, সাহসে লড়ি, দেশের কল্যাণে কাজ করি’।
২০২৪ সালে দেশে ১ হাজার ৪৩৮ জনের নতুন এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্তদের ২২ দশমিক ৪ শতাংশের বয়স শূন্য থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।
যৌনকর্মে জড়িয়ে পড়া কন্যাশিশুরা
বাংলাদেশে আনুমানিক ১ লাখ ১৩ হাজার ১০৬ জন যৌনকর্মী আছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ কন্যাশিশু। অধিকাংশ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছে। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, মাত্র ২০ শতাংশ যৌনকর্মী নিয়মিত এইচআইভি প্রতিরোধ সেবা পান। ৪ দশমিক ৪ থেকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে সরাসরি বৈষম্যের শিকার হন।
ঢাকায় বসবাসকারী ১৫ বছরের এক মেয়ে এই প্রতিবেদককে বলে, ‘আমাকে বলে পড়াশোনা করার বয়স। কিন্তু আমি তো স্কুলে ঢুকতেই পারি না। মায়ের মতো আমাকেও এই কাজ করতে হচ্ছে। এখন শুধু ভয়, কোনো রোগ হলে আমি মরেও শান্তি পাব না।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর গবেষণা বলছে, যৌনকর্মীদের মধ্যে শিশু বয়সে যুক্ত হয় প্রায় ৪৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সে প্রবেশ করে ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সে প্রবেশ করে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্যসেবায় অমানবিক অভিজ্ঞতা
এইচআইভি আক্রান্ত এক কিশোরী জানায়, ‘চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা ফিসফিস করে। কেউ ভালোভাবে কথা বলে না। সবাই যেন আমার গোপন কথা জেনে যায়। তাই হাসপাতালে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।’
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তথ্য বলছে, এইচআইভি আক্রান্তদের অন্তত ১৩ শতাংশ গত এক বছরে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। শিশু ও কিশোরীদের ক্ষেত্রে এ হার আরও বেশি। অপরাজেয় বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০ জন যৌনকর্মীর মধ্যে ২২ জন গত আগস্টে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছে। বাকিরা বৈষম্য, অর্থাভাব বা তথ্যের অভাবে সেবা নেয়নি।
ইউএনএইডস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. সাইমা খান বলেন, দেশে এইচআইভি সংক্রমণের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এই ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির জন্য ‘শিশুদের প্রতি সম্মিলিত অবহেলা’ এবং তাদের দুর্বলতার সময়ে অসহযোগিতাকে দায়ী করেছেন।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং নির্যাতনের কারণে তারা প্রায়ই যৌনকর্ম বা মাদকাসক্তির মতো পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। এটি এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকিকে উল্লেযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে।
