ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:৪০:৪৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

টার্গেট তরুণীদের পাসপোর্ট করা হয় ৪ ঘণ্টায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:০২ এএম, ৪ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চীনের বন্দিদশা থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন এক তরুণী। নারী পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে চীনে যাওয়ার পর সেখানকার বন্দিদশা থেকে মোবাইল ফোনে বাঁচার আকুতি জানান নীলা (ছদ্মনাম)। এছাড়া নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেয়ে সম্প্রতি কৌশলে দেশে ফিরে এসেছেন হেলেনা (ছদ্মনাম)। তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, পাচার করা হবে এমন তরুণীদের পাসপোর্ট করা হয় ৪ ঘণ্টায়।

লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হচ্ছে তরুণীদের। একটি প্রভাবশালী চক্র নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে এমন অপকর্ম।

গত ১৪ বছরে চীনে পাচার হওয়া কয়েকশ বাংলাদেশি তরুণীর অবস্থা তার মতো। দেশে ফিরে আসা হেলেনা বলেন, ‘আমাকে এবং আমার বান্ধবীকে চাকরির মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাঠিয়েছিল প্রতারক চক্র। বাংলাদেশ থেকে আরও তরুণী সেখানে নিয়ে যাব-এমন আশ্বাস দিয়ে আমি দেশে ফিরলেও আমার বান্ধবী (নীলা) এখনো আটকা পড়ে আছে। পাচারকারীরা এখন আমাকেই চক্রের সদস্য হিসাবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আমার মাধ্যমে আরও তিন-চারটা মেয়ে চীনে পাঠাতে চাচ্ছে ওরা। আমি যেভাবে সবকিছুতে জড়িয়ে গেছি, অন্য কোনো মেয়ে এভাবে প্রতারিত হোক, তা আমি চাই না।’

একটি প্রভাবশালী চক্র নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে এমন অপকর্ম। চক্রের নেতৃত্বে আছেন আব্বাস মোল্লা। তার প্রধান সহযোগী হলেন সিলভী নামের এক নারী। অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন-জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু এবং আকাশসহ বেশ কয়েকজন। চক্রটির টার্গেট-অসহায় দরিদ্র পরিবারের সুন্দরী তরুণী। পাসপোর্ট, ভিসা এবং ইমিগ্রেশনসহ সবকিছুই করে দেন তারা। 

দেশের বিভিন্ন স্থানে জাল বিস্তার করেছে এই চক্রের সদস্যরা। যে তরুণী সাধারণত যে কাজ পছন্দ করেন তাকে ওই কাজের জন্যই মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরির অফার দেওয়া হয়। চীনে পাঠানোর পর তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। একেকজন তরুণীকে বিক্রি করা হয় ৫০ লাখ টাকায়। এসব ঘটনায় মামলা করার পর উলটো বিপাকে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা। 

পুলিশ ও ভুক্তভোগী তরুণীদের সঙ্গে কথা বলে এবং অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উল্লিখিত সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। আরও জানা গেছে, পাচারকারী চক্রের সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী। টার্গেট করা তরুণীদের পাসপোর্ট করা হয় মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে। সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট দেওয়া হয় না। কিন্তু চক্রের সদস্যরা পাসপোর্টের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন ভেরিফিকেশন ছাড়াই। 

শুধু তাই নয়, পাসপোর্ট নেওয়ার আগে তারা ব্যবহার করেন ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড)। ভিসা পেতে সাধারণ মানুষের বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হলেও চক্রের সদস্যরা দিনে দিনেই পেয়ে যান। কেউ বিদেশ যেতে চাইলে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সাধারণত বিদেশ যাওয়ার কারণ জানতে চান। এছাড়া আনুষঙ্গিক অনেক প্রশ্ন করেন। কিন্তু পাচার চক্রের সদস্যরা যাদের বিদেশ পাঠান ইমিগ্রেশনে তাদের কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় না।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, পাচারকারীরা যেভাবে পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও ভিসা সেন্টার কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেছে; একইভাবে ম্যানেজ করছেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের।

পাচার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত বুধবার শাহ আলী থানায় মামলা হয়েছে। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ সুলতান মাহমুদ বলেন, চক্রের সদস্যদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তাদের ধরতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটও কাজ করছে। আশা করছি, শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনতে পারব। 

এজাহারে লিঙ্গ এবং পেশা পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ওটা ঠিক করে দেব।