সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে: কাঁচামরিচ কেজি ৪০০
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:৪০ এএম, ৪ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার
ছবি: সংগ্রহিত।
রাজধানীর কাচাবাজারগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের ত্রাহি অবস্থা। ব্যবসায়ীদের দাবি, টানা বৃষ্টির কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সবজির দামে।
সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে কাঁচা মরিচে। কাঁচা মরিচের ঝালে যেন পুড়ছে বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা দরে।
ভোক্তাদের অভিযোগ সরকারের কার্যকর বাজার মনিটরিং না থাকায় অসৎ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতি সাপ্তাহে প্রতিটি নিত্যপণ্যে দাম বেড়ে যাওয়ায় নি¤œআয় ও সীমিত আয়ের মানুষের সংসার চালানোর কঠিন হয়ে পড়ছে। বাজার করতে আসা অনেকেই প্রয়োজনীয় পণ্যের অর্ধেক কিনে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বেশিরভাগ সবজির কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে ফলন নষ্ট হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, এটি কেবল ‘বাহানা’, সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, শান্তিনগর, কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। বিশেষ করে, আগাম শীতকালীন সবজির বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার ওপরে, আর প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের জন্য গুণতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। অন্যদিকে দাম বেড়েছে মুরগি, ইলিশ ও অন্যান্য মাছের। বিক্রেতারা বলছেন, পূজার ছুটি ও বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমায় দাম বাড়ছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, পূজার ছুটি ও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাজারে দেশীয় সবজির সরবরাহও কিছুটা কম। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে ১৫-২৫ টাকা করে বেড়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু ২৫-৩০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ২০-২৫ টাকা ছাড়া প্রায় সব ধরণের সবজির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি শিম ১৫০ থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। ২০ টাকা বেড়ে মুলার দাম হয়েছে ৮০ টাকা। বর্তমানে টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল, চিচিঙ্গা ও কাঁকরোল ৮০ টাকা, বরবটি ও করলা ১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা ও গোল বেগুন ১৪০ টাকা, উচ্চা করলা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লাউ ৮০ থেকে ১২০ টাকা এবং জালি লাউ ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া ও ধুন্দল ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। এখন তা ২৮০ থেকে ৩৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা রহিম মিয়া জানান, পাইকারি বাজারে মরিচের তীব্র সংকট চলছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া, ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ আছে। এখন এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) মরিচ কিনতেই এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা লাগে। এক সপ্তাহ আগেও তা ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন, আবারও লাগামছাড়া হচ্ছে সবজির দাম। চাপ বাড়ছে ভোক্তার। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে আসা কাজী সাঈদ বলেন, বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম কেজিতে ৩০ টাকার মতো বেড়ে গেছে। নতুন করে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। মরিচ গত সপ্তাহের চেয়ে অন্তত কেজিতে ১৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারে এই অবস্থায় চাপ বাড়ছে মধ্যবিত্তের পকেটে।
এদিকে সবজির পাশাপাশি লাগামহীন হচ্ছে শাকের দাম। প্রতি আঁটি পুঁইশাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কুমড়া শাক ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লালশাক ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, পালং শাক ৪০ টাকা; পাট শাক, কচু শাক ও ডাঁটা শাক ৩০ টাকা এবং মুলা শাক ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি ছাড়াও মাছের বাজারেও আগুন। আজ শনিবার থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এ মাছ। বড় ইলিশ দুই হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি ইলিশ দুই হাজার এবং ছোট ইলিশ এক হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের দাম রয়েছে আগের মতোই চড়া। প্রতিকেজি বোয়াল ৭৫০-৯০০ টাকা, কোরাল ৮০০-৮৫০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩০০-৪৫০ টাকা, কাতল ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা এবং পাবদা ও শিং ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাষের ট্যাংরা ৭৫০-৮০০, কাঁচকি ৬৫০-৭০০ এবং মলা ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বেড়েছে মুরগির দামও। কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর প্রতিকেজি সোনালি মুরগির জন্য গুনতে হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা। তবে গরু ও খাসির গোশতের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ২০০ টাকা।
