ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:১২:১৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

চাকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের সামনে ‘কঠিন পরীক্ষা’

চবি প্রতিনিধি

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৪৭ এএম, ১২ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ভালো ফল করতে পারেনি। এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন যেন তাদের কাছে এক ‘কঠিন পরীক্ষা’। জয়ের আশায় দিন–রাত প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা। আশ্বাস দিচ্ছেন, চাঁদাবাজি–দখলদারির রাজনীতি আর ফিরবে না, ক্যাম্পাসে ফিরবে স্বাধীন চিন্তা ও গণতান্ত্রিক চর্চা।

ছাত্রদলের ইশতেহারে বলা হয়েছে, নির্বাচিত হতে পারলে তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা নিশ্চিত করবে। সন্ত্রাস ও ভয়ভীতিমুক্ত এক ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে।

গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর এখন যে যার মতো রাজনীতি করছে। নতুন এই পরিবেশে ছাত্রদল খুঁজছে নিজেদের ‘পুনর্জন্ম’।

প্রচারে উদার রাজনীতির ডাক

রেলস্টেশন থেকে ঝুপড়ি, কটেজ থেকে হল—প্রার্থীরা ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ভোট চাইছেন, পরামর্শ নিচ্ছেন। তাঁদের বার্তা একটাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হবে মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীলতার জায়গা।

১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এ ভোট হতে যাচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের আমেজ। ছাত্রদল লড়ছে ১২টি প্যানেলের সঙ্গে। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলকে। এর মধ্যেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে দুই পক্ষের মধ্যে।

ছাত্রদল বিএনপির সহযোগী সংগঠন। কিন্তু আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালজুড়ে তারা ক্যাম্পাসে নিষ্ক্রিয় ছিল। এমনকি ২০০১–০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও ছাত্রদল এখানে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তখন ছিল শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, পরে এল ছাত্রলীগের একচেটিয়া আধিপত্য। তাই বলা যায়, এবারের চাকসু ছাত্রদলের কাছে কঠিন পরীক্ষা।

আধুনিক ক্যাম্পাসের স্বপ্ন

আট দফা ইশতেহারে ছাত্রদল প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নারী–পুরুষের সমান সুযোগ ও আধুনিক ক্যাম্পাস গড়ার। তাঁরা বলেছেন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে; সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিনোদনের চর্চা বাড়ানো হবে; সেশনজট ও প্রশাসনিক জটিলতা দূর করা হবে।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ভাতা বৃদ্ধি, হলে আসন সংরক্ষণ, ব্রেইল বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকারও আছে ইশতেহারে। খাদ্য ও আবাসন খাতে বলা হয়েছে, ক্যানটিনে ভর্তুকি বাড়ানো, খাবারের মান যাচাইয়ের কমিটি করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ক্যাম্পাসে রূপান্তর করা হবে—প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ‘একটি সিট ও একটি পড়ার টেবিল’ নিশ্চিত করা তাঁদের অন্যতম স্লোগান।

নারী ভোটার টানতে কৌশল

এ নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় ২৭ হাজার। তাঁদের মধ্যে ছাত্রী প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। নারী ভোট এখন বড় ফ্যাক্টর। তাই ছাত্রদলের ইশতেহারে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে নারীদের বিষয়।

ইশতেহারে বলা হয়েছে, নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক ও চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি, প্রতিটি হলে স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন, নারী চিকিৎসক, নিরাপদ কমনরুম ও ইনডোর স্পোর্টস সুবিধা দেওয়া হবে।

এই প্রতিশ্রুতিগুলো ইতিবাচকভাবে দেখছেন সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া মুনতাহা। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের প্রচারণা চোখে পড়ছে, কথা শুনতেও ভালো লাগছে। কিন্তু বাস্তবে কতটা বাস্তবায়ন হবে, সেটাই প্রশ্ন।’

সংগঠনের ভেতরের চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনে ছাত্রদলের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাংগঠনিক দুর্বলতা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই; মাত্র পাঁচ সদস্যে চলছে কার্যক্রম। প্রার্থী বাছাইয়েও মতবিরোধ ছিল। অনেক প্রার্থী শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন মুখ, ফলে ভোটারদের আস্থা অর্জন করাই এখন মূল পরীক্ষা। ডাকসু ও জাকসুতে ব্যর্থতার প্রভাবও চাকসু ভোটে পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ছাত্রদলের সূত্র বলছে, কেন্দ্রীয় সংসদ ও হলে প্রার্থী দিতে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে অনৈক্য হয়েছিল।

চাকসুর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি হলে ভিন্ন কৌশলে নামছে ছাত্রদল। পূর্ণাঙ্গ প্যানেল না দিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করছে। অতীশ দীপঙ্কর, সূর্য সেন, এ এফ রহমান, আলাওল, শাহ জালাল ও শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে তারা বেশ সক্রিয়। এসব হলে জেতার ব্যাপারে ছাত্রদলও আশাবাদী। তবে অনেক শিক্ষার্থী বলছেন, হলে ছাত্রদলের প্রার্থীরা এখনো তেমন পরিচিত নন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন বলেন, ‘ছাত্রদল বড় সংগঠন। ভেতরে মতবিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে আমরা ঐক্যবদ্ধ। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।’