মিরপুরের আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:০৮ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে আগুনের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জন হয়েছে।মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম এ তথ্য জানান।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, সব মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গার্মেন্টস ভবনে সবগুলো মরদেহ পাওয়া গেছে। রাসায়নিক গুদামের আগুন নেভানোর কাজ চলছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ‘আর এন ফ্যাশন’ নামের ওই পোশাক কারখানা ও পাশের রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। পোশাক কারখানাটি চারতলা ভবনে, আর রাসায়নিক গুদাম টিনশেড ঘরে।
বিকেলে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তল্লাশি এখনো চলমান। পাশের যে কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে, সেখানে এখনও আগুন জ্বলছে। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ওখানে কাউকে যেতে দিচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ প্রযুক্তি দিয়ে, ড্রোন দিয়ে কার্যক্রম করছি।’
তিনি জানান, পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো জানা যায়নি।
আগুনে নেভানোর চেষ্টার মধ্যে বিকেল সোয়া চারটার দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম ৯ মরদেহ উদ্ধারের কথা জানান। এরপর সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস থেকে জানো হয়, মৃত্যের সংখ্যা বেড়ে ১৬ হয়েছে।
বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থলের আশপাশে ভিড় করছেন। অনেকে ছবি হাতে নিয়ে তাদের স্বজনকে খুঁজছেন।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তিনতলা পোশাক কারখানার নিচতলায় ‘ওয়াশ ইউনিট’ রয়েছে, সেখানেই প্রথম আগুন লাগে। সেই আগুন পাশের রাসায়নিকের গুদামে ছড়িয়ে পড়লে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আগুন তিনতলা পোশাক কারখানার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
নিখোঁজদের জন্য স্বজনের উৎকণ্ঠা-কান্না
নিখোঁজ অনেকের সন্ধান পেতে ছবি নিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন স্বজনরা। তাদের কান্না আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। তাদেরই একজন রেশমা আক্তার। তিনি বলেন, নিখোঁজ আসমা আক্তার (১৫) আগুন লাগা গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করে। মেয়েটি তাঁর ছেলের শ্যালিকা। তাদের সঙ্গে ১০ নম্বর শিয়ালবাড়ি থাকে আসমা। আগুন লাগার পর থেকে তার খোঁজ মিলছে না।
স্বামী নজরুল ইসলামের খোঁজে এসেছেন নাসিমা আক্তার। তিনি জানান, ১২ বছর ধরে তাঁর স্বামী গার্মেন্টস কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে কল দিলে শুধু 'আগুন আগুন ' বলে ফোন রেখে দেন। তার পর থেকে স্বামীর ফোন বন্ধ পাচ্ছেন। তারা ৬ নম্বর শিয়ালবাড়ি এলাকায় থাকেন।
নারগিস আক্তারের খোঁজে আসেন বড় বোন লাইজু বেগম। তিনি বলেন, আমার বোন সকাল পৌনে আটটায় কাজে আসে। সকাল ১১টায় খবর পাই আগুন লেগেছে। সেখানের একজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানতে পারি কেউ ভেতর থেকে বের হতে পারেনি। এরপর থেকে আর কোনো খোঁজ পাইনি।
ভাগ্নি সুলতানা ও তার স্বামী জয়ার ছবি হাতে আসা ইয়াসিন নামের আরেকজন বলেন, আমার ভাগনি ভাগ্নির জামাই তিনদিন আগে কাজে ঢুকেছে। সকালে দুজন একসঙ্গে কাজে আসে। আগুন লাগার পর ফোন দিয়ে জানায় তারা ভেতরে আটকে গেছে।
নিখোঁজ মাহিরার মামা শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাগ্নি গার্মেন্টসের তিন তলায় কাজ করত। তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন লাগার পর থেকে আমরা তাকে খুঁজছি। আশেপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি। কোথাও খুঁজে পাইনি।
