শিশুদের ‘নোবেল’ মনোনয়নে কেকা, কুহু ও শিহাব
জামালপুর প্রতিনিধি
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:০৩ এএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে শিশু অধিকার, ন্যায়বিচার, জলবায়ু ন্যায্যতা ও মানবিক পরিবর্তনের জন্য কাজ করা সাহসী কিশোর-কিশোরীদের পুরস্কৃত করে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংগঠন কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন। তাদের দেওয়া চিলড্রেনস পিস প্রাইজ যা সাধারণভাবে শিশুদের নোবেল নামে পরিচিত এর জন্য এবার প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন জামালপুরের তিন কিশোর-কিশোরী।
মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সহোদরা কারিমা ফেরদৌসী কেকা (১৭) ও কাশফিয়া জান্নাত কুহু (১৪)। তারা উপজেলার ২নং কড়ইচূড়া ইউনিয়নের মোমেনাবাদ এলাকার বাসিন্দা এবং কাইউম হিলালী মাইকেল ও শিউলী খাতুন দম্পতির দুই মেয়ে। বড় বোন কেকা ঢাকার এ কে এম রহমত উল্লাহ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। ছোট বোন কুহু রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত রওশন আরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাদের বাবা ঢাকার মগবাজারের নজরুল শিক্ষালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং মা রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত বেরাইদ মোহাম্মদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
দুই বোন শিশু অধিকার, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, লিঙ্গ সমতা ও সামাজিক পরিবর্তনে কাজ করে এই মনোনয়ন পেয়েছেন।
তৃতীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত হচ্ছেন আব্দুল্লাহ আল শিহাব (১৭), জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার মির্ধাপাড়া এলাকার কৃষক আলতাব হোসেনের ছেলে। শিহাব ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ, শিশু সুরক্ষা ও লিঙ্গ সমতা নিয়ে কাজ করে এই স্বীকৃতি অর্জন করেছেন।
কিডস রাইটস ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ২০০ জন শিশুকে প্রাথমিকভাবে এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় কাশফিয়া জান্নাত কুহুর অবস্থান ১১ নম্বরে, কারিমা ফেরদৌসী কেকার অবস্থান ২৯ নম্বরে এবং আব্দুল্লাহ আল শিহাবের অবস্থান ২১ নম্বরে।
কারিমা ফেরদৌসী কেকা বলেন, ছোটবেলা থেকেই সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা ছিল। সুযোগ পেয়ে কাজ শুরু করি এবং বাবার কাছ থেকে ব্যাপক উৎসাহ পাই। শিশু অধিকার ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করেছি। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা আছে।
কাশফিয়া জান্নাত কুহু বলেন, বড় আপুর সঙ্গে থেকে আমি কাজ করতে শিখেছি। লিঙ্গ সমতা, সামাজিক পরিবর্তন, শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করছি। মনোনয়ন পাওয়ার খবর জেনে ভালো লাগছে। আরও উৎসাহ পেলে কাজের গতি বাড়বে।
তাদের বাবা কাইউম হিলালী মাইকেল বলেন, সমাজে অনেক শিশু রয়েছে যারা অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমার বড় মেয়ে কেকাকে দেখেছি এসব বিষয়ে আগ্রহী। আমি চেষ্টা করেছি তাকে সহায়তা করতে। এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ দুই মেয়ের জন্য বড় পাওয়া।
অন্যদিকে, আব্দুল্লাহ আল শিহাব বলেন, আমি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করি। স্থানীয় একটি সংগঠনের মাধ্যমে অনেক বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ করেছি। গ্রামের মানুষদের সচেতন করতে নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করেছি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে অনলাইনে আবেদন করেছিলাম, পরে দেখি মনোনয়ন পেয়েছি।
তার বাবা আলতাব হোসেন জানান, আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হতে বাধা দিত। আবার বিভিন্ন বিষয়ে মেয়েদের পরামর্শও দিত।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ জহুরুল হোসেন বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করা উচিত। এটি বকশীগঞ্জবাসীর জন্য বড় সাফল্য।
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ বলেন, কেকা ও কুহু আমাদের উপজেলার হলেও ঢাকায় বসবাস করেন। বিষয়টি জেনেছি ও তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। তারা মাদারগঞ্জকে পরিচিত করে তুলেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা থাকবে।
