ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:২০:৪৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নারী বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং কি ঠিকঠাক হচ্ছে

ক্রীড়া ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৮ এএম, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চলমান নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই সপ্তাহে বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেখা গেছে। প্রশ্ন উঠেছে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমের (ডিআরএস) ব্যবহার নিয়েও। মেয়েদের ক্রিকেটে ডিআরএস সীমিতভাবে ব্যবহৃত হয়, তাই অনেক আম্পায়ার এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনভ্যস্ত। ইএসপিএনক্রিকইনফো আম্পায়ারদের এমন কিছু আলোচিত ও সমালোচিত সিদ্ধান্তকে তুলে ধরেছে—

ইংল্যান্ড–বাংলাদেশ ম্যাচের ঘটনা

নারী বিশ্বকাপে তৃতীয় আম্পায়ারের সবচেয়ে আলোচিত ভুল পদক্ষেপগুলোর একটি দেখা গেছে ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের ম্যাচে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিদার নাইট ১৩ রানে ব্যাট করছিলেন, দল তাড়া করছিল ১৭৯ রানের লক্ষ্য। নাইট ফাহিমা খাতুনের বলে কাভারে স্বর্ণা আক্তারের হাতে ধরা পড়েন। নাইট নিজেই প্যাভিলিয়নের দিকে হাঁটা শুরু করেছিলেন, কিন্তু টিভি আম্পায়ার গায়ত্রী ভেনুগোপালন রিপ্লে দেখে জানান, প্রমাণ অকাট্য না হওয়ায় এটা আউট নয়। এর আগেও নাইটের কট বিহাইন্ডের একটি সিদ্ধান্ত বাতিল করেন তৃতীয় আম্পায়ার। তার মতে, বলটি নাইটের প্যাডে লেগে উইকেটকিপারের হাতে গেছে, তাই আউট নয়।

নাইটের সরল স্বীকারোক্তি নিয়ে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন বলেন, ‘সেই সন্ধ্যায় আমি একটি উপস্থাপনা করেছিলাম এবং হিদার নাইটের সঙ্গে বিষয়টি ভাগ করেছি, বিষয়টি নিয়ে সে বেশ অকপটই ছিল। সে বলেছে, “আমি ভাবছিলাম আমি আউট, তাই হাঁটতে শুরু করেছিলাম। জীবনে কখনো এতবার আউট হয়েও টিকে থাকিনি।” সেদিন সে ৬০ বা ৭০ (৭৯) রান করে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়ে দেয়। এটা সত্যি কষ্টদায়ক (প্রতিপক্ষের জন্য)।’

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে বিভ্রান্তি

ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচে পাকিস্তানের ওপেনার মুনিবা আলী রানআউট হলে প্রথমে টিভি আম্পায়ার নট-আউট দেখান। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে আউট ঘোষণা করেন। টিভি আম্পায়ার কেরিন ক্লাসটে প্রথমে সব ফুটেজ না দেখে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, পরে বাড়তি রিপ্লে দেখে বুঝতে পারেন রান আউট। শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত দিলেও মাঝে বেশ বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এমনকি মুনিবা ও পাকিস্তান অধিনায়ক ফাতিমা সানা চতুর্থ আম্পায়ারের কাছ থেকে এর ব্যাখ্যাও চান।

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ভুল রিভিউ

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে সুনে লুইসের বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদনে আম্পায়ারের নট-আউটের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউয়ের আবেদন করে ভারত। তৃতীয় আম্পায়ার ক্যান্ডেস লা বোর্ডে দাবি করেন, আলট্রা এজে ক্ষীণ শব্দ শুনেছেন, যা প্রমাণ করে যে বল ব্যাটে লেগেছে। যদিও পাশ থেকে দেখানো রিপ্লেতে বোঝা যাচ্ছিল বল ব্যাট থেকে দূরে ছিল। তবু লুইসকে নট আউট দেওয়া হয়।

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও বিতর্ক

ভারত-অস্ট্রেরিয়া ম্যাচে অ্যালিসা হিলির ক্যাচ ধরেছিলেন স্নেহ রানা। টিভি আম্পায়ার জ্যাকুলিন উইলিয়ামস প্রথমে বলেন, ‘বল মাটি ছুঁয়েছে’, পরে মত বদলে ক্যাচ আউট দেন। ধারাভাষ্যকার নাসের হুসেইন বলেন, ‘তৃতীয় আম্পায়ার ১৫টি আলাদা রিপ্লে বা জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। তিনি কেবল কয়েকবার রিপ্লে দেখেই, নিজের অনুমানের ওপর ভর করে সিদ্ধান্ত নিলেন—আঙুলগুলো বলের নিচে চলে গেছে, তাই আউট। বিষয়টা আমাকে ঘরে বসে বা সম্প্রচারে দেখার সময় সবসময় চিন্তায় ফেলেই। রিপ্লে যত দেখবেন, তত ছোটখাটো বিষয় ধরা পড়বে, তাই সঠিক ও সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

অভিজ্ঞতার অভাব

চলমান নারী বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ১০ জন তৃতীয় আম্পায়ার দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৩ জনের ২০টির বেশি ম্যাচে ডিআরএস ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। সেই তিনজন হলেন সু রেডফার্ন (৪২ ম্যাচ), এলোয়িজ শেরিডান (২৫), এবং কিম কটন (২৪)। অন্য দিকে লা বোর্ডে আগে কখনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে ডিআরএসসহ তৃতীয় আম্পায়ার হিসেবে কাজ করেননি। আর জানানি ও ডামবানেনাভার অল্প কিছু ম্যাচে ডিআরএস ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই বিশ্বকাপে দায়িত্ব পাওয়া ১০ জন টিভি আম্পায়ারের মধ্যে ৫ জনের ডিআরএস ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ছিল পাঁচটিরও কম আন্তর্জাতিক ম্যাচে। এ ছাড়া ভেনুগোপালন এবং ক্লাসটেও ডিআরএস পরিচালনায় অনভিজ্ঞ।

আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত উল্টে যাওয়ার হার বেশি

এবারের নারী বিশ্বকাপে অন্যান্য প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার তুলনায় মাঠের সিদ্ধান্ত উল্টে দেয়ার হার (রিভিউ ব্যবহার করে) বেশি দেখা গেছে। এই বিশ্বকাপে ৩৬টি ইনিংসে মাঠে নেওয়া ২৫টি  সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে, যার মানে প্রতি ইনিংসে গড়ে ০.৬৭টি সফল রিভিউ দেখা গেছে। ২০২৩ সালের এশিয়ায় অনুষ্ঠিত ছেলেদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রতি ইনিংসে সফল রিভিউয়ের হার ছিল ০.৪৬টি। অর্থাৎ এবার সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার হার ছেলেদের সেই বিশ্বকাপের তুলনায় অনেক বেশি।

আইসিসির নীরবতা

আইসিসি এখনো পর্যন্ত আম্পায়ারদের ডিআরএস-অভিজ্ঞতা বা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আইসিসির আম্পায়ার ম্যানেজার শন ইজি কয়েকটি ম্যাচ ভেন্যুতে উপস্থিত থাকলেও কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টজুড়ে অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও সিদ্ধান্তগ্রহণে তাড়াহুড়া নারী বিশ্বকাপের আম্পায়ারিংয়ে মান নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।