ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৭:১৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৫৫ এএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, এমন দ্বৈত ব্যবস্থা বিশ্বের কোথাও নেই।

বাংলাদেশে একবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যাংকিং বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া ও ঋণের জন্য তদবির করার মতো বাজে ও খারাপ অনুশীলন করে থাকে।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার জন্য আবশ্যক’ শীর্ষক সেমিনারে ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিলেকশন ও নিয়োগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীতার জন্য ভূমিকা রাখে। শক্তিশালী আইন করলেন কিন্তু যাকে চেয়ারটিতে বসালেন তার যদি দক্ষতা, যোগ্যতা, জবাবদিহিতা এবং প্রতিশ্রুতি না থাকে তাহলে ওই আইন কাগজে-কলমেই থেকে যাবে। এজন্য আইন ও আইনের প্রয়োগ দুটোই দরকার। আমলাদের বসানো হয়েছে, সেটা কিন্তু ওই আইনের মধ্যে ছিল না।

শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য যোগ্য ও দক্ষ লোকেরও প্রয়োজন। স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য স্বাধীনভাবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের স্বাধীনতাও প্রয়োজন, যা আমরা অতীতে দেখিনি; বলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য ব্যবসা-বাণিজ্য না দেখে এবং জামানত পরীক্ষা না করে রাজনৈতিক প্রভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা করা হয়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। এই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়াকে তরান্বিত করেছে। এজন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছিলাম স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক দরকার।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ-৭২ সংশোধনের জন্য প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যখন রাজনৈতিক সরকার আসেবে, তখন এটাকে পাস করতে হবে। তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই আইন মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এজন্য আগামী নির্বাচিত যে সরকার আসবে, সেই সরকারকে এটা করতে দিতে হবে। আর্থিত খাত অর্থনীতির লাইফলাইন। গত সময়ে ব্যাংকিং খাত ভঙ্গুর হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে যদি উত্তরণ না করা যায় তাহলে আমরা ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির যে কথা বলছি, তার কিছুই হবে না।

যেসব দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীন, সেখানে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কীভাবে সহজ উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বই হলো মূল্যস্ফাীতি নিয়ন্ত্রণ করা। আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান দ্বিতীয় কাজ। প্রাইভেট সেক্টরের উদ্যোক্তারা বলতে পারেন, সুদহার নিয়ন্ত্রণ বা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার-১৯৭২ যখন করা হয়েছিল তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। তখন অর্থনীতির আকার ছোট ছিল, নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি ছিল। এরপর গত ৫০ বছরে অর্থনৈতিক কাঠামো ও কৌশলগত দিকের পরিবর্তন হয়েছে। এ সময়ে অর্থনীতির আকার যেমন বড় হয়েছে, আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকেও গেছি। এখন ভোক্তাদের ঋণের চাহিদার ধরন বেড়েছে। এ প্রেক্ষিতে নতুন করে নিয়ম-নীতি প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়তে বাড়তে এমন জায়গা পৌঁছেছে যে, বলার মতো নেই। এর বাইরেও ব্যাংকের স্বাস্থ্য মাপা (ক্যামেল রেটিং), তারল্য ব্যবস্থাপনা এবং বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যেসব সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—এর ফলে দেখা যাচ্ছে ব্যাংকের কত ক্ষত বের হয়েছে। আগে এগুলো দেখা যেত না, এখন নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে এটা হয়েছে।