ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:২০:৩০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান? চমকপ্রদ তথ্য জানাল নাসা

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৫২ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মঙ্গলগ্রহের বরফস্তরে কোটি কোটি বছর আগে মৃত জীবের অণুজীবীয় চিহ্ন এখনও জমাট অবস্থায় টিকে থাকতে পারে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, যদি ব্যাকটেরিয়ার অণুসমূহ বিশুদ্ধ বরফে আবদ্ধ থাকে, তাহলে তারা মহাজাগতিক বিকিরণের মধ্যেও প্রায় ৫ কোটি বছর পর্যন্ত অক্ষত থাকতে পারে। এই আবিষ্কার মঙ্গলের জমাট পৃষ্ঠের নিচে অতীত জীবনের প্রমাণ পাওয়ার আশাকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করেছে। একটি নতুন গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে।

গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে মঙ্গলের পরিবেশের মতো শর্ত তৈরি করেন। তারা ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া ও বিশুদ্ধ জল থেকে তৈরি বরফের নমুনা ব্যবহার করেন। এই নমুনাগুলোকে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় জমাট রাখা হয় এবং এমন মাত্রার বিকিরণে প্রকাশ করা হয়, যা মঙ্গলগ্রহ লক্ষ লক্ষ বছর ধরে অনুভব করছে।

ফলাফল দেখে গবেষকরা বিস্মিত হন। দেখা যায়, বিকিরণ আঘাতের পরও প্রোটিন গঠনের মূল উপাদান অ্যামিনো অ্যাসিডের ১০ শতাংশেরও বেশি অক্ষত ছিল। 

পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস্টোফার হাউস বলেন, “পঞ্চাশ মিলিয়ন বছর বর্তমান মঙ্গলের কিছু বরফস্তরের অনুমিত বয়সের চেয়েও বেশি। এর মানে, মঙ্গলের পৃষ্ঠের কাছাকাছি যদি কোনও ব্যাকটেরিয়া থাকে, ভবিষ্যৎ মিশনগুলো তা খুঁজে পেতে পারে।”

গবেষণায় দেখা গেছে, মঙ্গলের মাটি বা শিলাযুক্ত নমুনা অনেক দ্রুত ভেঙে পড়ে, অথচ বিশুদ্ধ বরফ জীবাণু ও অণুগুলোর জন্য একটি ঢালের মতো কাজ করে। কারণ, যখন বিকিরণ খনিজ-যুক্ত বরফে আঘাত করে, তখন তা রিঅ্যাকটিভ র্যাকডিক্যাল তৈরি করে। এরা দ্রুত চলাচল করে এবং অ্যামিনো অ্যাসিড ধ্বংস করে ফেলে। কিন্তু কঠিন, বিশুদ্ধ বরফে এই র্যা ডিক্যালগুলো জমাট অবস্থায় আটকে যায়, ফলে ক্ষতি কম হয়।

গবেষক পাভলোভ ব্যাখ্যা করেন, “যখন বরফ সম্পূর্ণ কঠিন অবস্থায় থাকে, বিকিরণে তৈরি ক্ষতিকর কণাগুলো স্থির হয়ে পড়ে এবং জৈব যৌগের কাছে পৌঁছাতে পারে না।” অর্থাৎ, শিলা বা মাটি ছাড়া বিশুদ্ধ বরফ জীবনের সম্ভাবনাকে আরও বাস্তব করে তোলে।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, মন্টমরিলোনাইট নামের কাদামাটির খনিজ কোনও সুরক্ষা দেয় না বরং এটি ক্ষয় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। কারণ, খনিজের পাতলা তরল স্তরে বিকিরণ সহজে ছড়িয়ে পড়ে এবং অণু ভেঙে দেয়।

তাপমাত্রাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উষ্ণ, মঙ্গলসম পরিবেশে অ্যামিনো অ্যাসিড দ্রুত নষ্ট হয়, অথচ ঠান্ডা, ইউরোপা সদৃশ তাপমাত্রায় তারা অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়। উচ্চ তাপমাত্রায় বিকিরণ বেশি মোবাইল অক্সিড্যান্ট তৈরি করে, যা দ্রুত জৈব পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধ্বংস ঘটায়।

একই সঙ্গে, পানির পরিমাণ সম্পর্কেও চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে। আগে ধারণা ছিল, বেশি পানি থাকলে ক্ষয় দ্রুত ঘটে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কটি আরও জটিল। বিশুদ্ধ বরফে তৈরি র‌্যাডিক্যালগুলো সহজে চলতে পারে না, কিন্তু সামান্য পানিযুক্ত খনিজে তারা পাতলা তরল স্তরের ভেতর দিয়ে চলাচল করে দ্রুত অণু ভেঙে ফেলতে পারে।

গবেষণার সারমর্ম হল যদি মঙ্গলগ্রহে কোনওদিন মাইক্রোবিয়াল জীবন থেকে থাকে, তার রাসায়নিক চিহ্ন এখনও বরফের নিচে লুকিয়ে থাকতে পারে। বিশুদ্ধ বরফ জৈব অণুগুলোকে কোটি কোটি বছর ধরে সংরক্ষণ করতে সক্ষম, যা ভবিষ্যৎ মানব মিশনের জন্য আশার আলো।

নাসার বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে: জীবনের প্রমাণ খোঁজার জন্য নজর দিতে হবে বরফের দিকে, শিলার দিকে নয়। মঙ্গলের অতীত জীবনের সূত্র হয়তো ইতিমধ্যেই সেখানে রয়েছে — জমাট বরফস্তরের ভেতরে, সময়ের গভীরে সংরক্ষিত অবস্থায়।