ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৫৯:৩৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

২৯ মাসে তালিকায় যুক্ত ২০৬৭৬ প্রবাসী ভোটার 

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৬ এএম, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

গত ২৯ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত ২০ হাজার ৬৭৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। এই হিসাব চলতি বছরের ২০ অক্টোবর পর্যন্ত। আগামীতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। ২০২৩ সালের ১৮ মে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সেই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে ৭১৩ জন ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইসির প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট আবেদন পড়েছে ৬১ হাজার ১১৯টি। দূতাবাস অফিসে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৯০ জনের। তদন্ত সম্পন্ন হয়ে আবেদন অনুমোদন হয়েছে ২৫ হাজার ৭১১১ জনের। এছাড়া, অপেক্ষমাণ আছে এক হাজার ৩৬টি আবেদন। আর বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ১৩৬ জনের আবেদন। এর বাইরে তদন্ত অপেক্ষমাণ আছে ২৯ হাজার ২৪৭ জনের।

এদিকে ইসির সার্ভারে আপলোড হয়েছে ২০ হাজার ৬৭৬টি জনের তথ্য। আর এ পর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাপানো হয়েছে ১৫ হাজার ৩১টি। যা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও আবুধাবি, সৌদি আরবের রিয়াদ ও জেদ্দা, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহাম, ইতালির রোম ও মিলান, কুয়েতের কুয়েত সিটি, দোহারের দোহা, মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুর, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা ও সিডনি, কানাডার অটোয়া ও টরোন্টো, জাপানের টোকিও, আমেরিকার নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, মিয়ামি, লসঅ্যাঞ্জেলস- এই ১১ দেশের ২১টি স্টেশনে এই কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রবাসে ভোটার নিবন্ধনে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় নিবন্ধনের অগ্রগতি অত্যন্ত সন্তোষজনক। নিউইয়র্কে একদিনে ৫০ জনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকলেও অতিরিক্ত আরও ৫০ জন উপস্থিত হয়েছেন। রাত ২টা পর্যন্ত আমাদের দল কাজ করেছে। যাতে পরদিন সকালেই রেডি কার্ড দেওয়া যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের পরামর্শ দিয়েছি যেন ২৪-২৫ অক্টোবরের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন, যাতে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তারা ভোটে অংশ নিতে পারেন।’

প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিপুল আগ্রহ ও প্রশাসনের তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্রে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সফলতার দোরগোড়ায় পৌঁছেছে বলে জানান এনআইডি নিবন্ধনের মহাপরিচালক।

ডিজি হুমায়ুন কবির জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল ভূ-খণ্ডে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। নিউইয়র্ক, ফ্লোরিডা, লস অ্যাঞ্জেলেস ও অন্য এলাকাগুলোতে ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব এসেছে। কমিশনের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা চলছে। খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই সফর কেবল নিবন্ধন কার্যক্রম নয়, এটি এক অর্থে প্রবাসীদের মাঝে সচেতনতা তৈরির প্রচারও।’ ফলে খরচটি যুক্তিযুক্ত বলেই মনে করেন তিনি।

ডিজি আরও জানান, বিদেশি আবেদনকারীদের যাচাই-বাছাই ও প্রযুক্তিগত জটিলতা থাকলেও নিরাপত্তা ও মান বজায় রেখে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, কাজটা হোক স্থায়ী ও টেকসইভাবে।’

জানা গেছে, ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন শুরুর সময়ই প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করা ও এনআইডি দেওয়ার দাবি ওঠে। কিন্তু নানান জটিলতায় আলোর মুখ দেখেনি সেই প্রকল্প। দীর্ঘদিন পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এরপর কোভিড মহামারিতে সেই উদ্যোগ ফের থেমে যায়। পরে থেমে থাকা সেই কাজে গতি আসে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান কমিশন।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসহ (বায়রা) বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে, ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি। এই সব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে ইসি। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিতানিয়া, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস।

ভোটার হতে প্রবাসীদের যা যা প্রয়োজন

* ভোটারযোগ্য (১৮ বা তদূর্ধ্ব বয়সি) প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা অবস্থানরত/বসবাসরত দেশে থেকেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

* এছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী নাগরিকদের ন্যায় প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া যাবে।

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের জন্য নাগরিকের যেসব দলিলাদি প্রয়োজন-২

* অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র ফরম-২(ক)।

* নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে ঘোষিত চট্টগ্রাম বিভাগের 

* ৫৬টি উপজেলা/থানার জন্য অতিরিক্ত তথ্য সম্বলিত ‘বিশেষ তথ্য ফরম’ (বিশেষ এলাকার ভোটারদের জন্য জারিকৃত পরিপত্রে উল্লিখিত ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের জন্য)।

* মেয়াদ সম্বলিত বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি/মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি/যে মিশন অফিসে নিবন্ধন করা হবে সে দেশের বিদেশি পাসপোর্টের কপি/সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাসকারী তিনজন বাংলাদেশি এনআইডিধারী ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক মর্মে (নির্ধারিত ফরমে) প্রত্যয়নপত্র।

* বাংলাদেশি জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি (অনলাইন ভেরিফাইড)।

* পাসপোর্ট সাইজের এক কপি রঙিন ছবি।

* আবেদনকারীর পিতামাতার এনআইডির কপি/বাংলাদেশি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি/বাংলাদেশি মৃত্যু সনদের কপি (মৃত হলে)/পাসপোর্টের কপি/ওয়ারিশ সনদের কপি/ বাংলাদেশের বাসিন্দা মর্মে নাগরিক সনদের কপি। দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

* শিক্ষা সনদের কপি (এসএসসি/জেএসসি/ পিইসি) (যদি থাকে)।

* ড্রাইভিং লাইসেন্স/টিআইএন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

* নিকাহনামা এবং স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

* আবেদনকারীর নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও/প্রশাসক কর্তৃক)।

* সংশ্লিষ্ট ঠিকানা সম্বলিত ইউটিলিটি বিলের কপি/হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ।

এসওপিতে আরও বলা হয়েছে, প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার (রেজিস্ট্রেশেন অফিসার) কর্তৃক আবশ্যিকভাবে সরেজমিন তদন্ত করা হবে। তারকা চিহ্নিত দলিলাদি আবশ্যিকভাবে দিতে হবে।

কোনো দলিল/দলিলাদি জমা দেওয়া সম্ভব না হলে বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধির মাধ্যমে সেই দলিল/দলিলাদি উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার (রেজিস্ট্রেশেন অফিসার)/তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। অন্যান্য দলিলাদিও একই প্রক্রিয়ায় জমা দেওয়া যাবে।