ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১২:১২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

টোকিওতে ট্রাম্প–তাকাইচি বৈঠক, নিরাপত্তা-বাণিজ্যে নতুন অধ্যায়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:০৮ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ মঙ্গলবার

টোকিওতে ট্রাম্প–তাকাইচি বৈঠক

টোকিওতে ট্রাম্প–তাকাইচি বৈঠক

জাপান সফরে গিয়ে টোকিওতে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী সানা তাকাইচির সঙ্গে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি শুধু দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়, বরং জাপানের নতুন নেতৃত্বের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনায়ও একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা জোট শক্তিশালী করা এবং বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতা আরও গভীর করার বিষয়ে একাধিক সমঝোতা আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য বিনিয়োগের সুযোগ। এ বৈঠকটি হয় টোকিওর আকাশাকা প্রাসাদে, যেখানে তাকাইচি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্যাকেজের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ছিল জাহাজ নির্মাণ, মার্কিন সয়াবিন, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পিকআপ ট্রাক কেনার চুক্তি। এই উদ্যোগ মূলত চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক প্রভাব ও আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে জাপানের প্রতিরক্ষা জোরদার করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের শুরুতে দুজনের মধ্যে উষ্ণ করমর্দন হয়, যা সংবাদমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। করমর্দনের সময় ট্রাম্প হাসিমুখে বলেন, “এটা একদম শক্তিশালী হ্যান্ডশেক।” পরে আকাশাকা প্রাসাদে তোলা ছবিতে দেখা যায়, ট্রাম্প ও তাকাইচি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনায় ব্যস্ত। তারা প্রয়াত জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে স্মরণ করেন—যিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন এবং প্রায়ই একসঙ্গে গলফ খেলতেন।
বৈঠকে ট্রাম্প তাকাইচির নেতৃত্ব ও তার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঐতিহাসিক অর্জনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “শিনজো ও অন্যদের কাছ থেকে যা শুনেছি, আপনি হবেন অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্যও অভিনন্দন জানাই—এটা বিশাল অর্জন।” এ সময় তিনি তাকাইচির সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির পরিকল্পনাকেও স্বাগত জানান।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন। তার মতে, এটি দেশের নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এই পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “জাপান নিজেকে রক্ষার জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা আমাদের যৌথ নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”

বৈঠকের সময় তাকাইচি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও গভীর ও টেকসই বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই, বিশেষ করে প্রযুক্তি, জ্বালানি ও কৃষি খাতে।” অন্যদিকে ট্রাম্প জাপানের বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে “দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের দৃষ্টান্ত” হিসেবে বর্ণনা করেন।
এছাড়া তাকাইচি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ভূমিকারও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “কম্বোডিয়া–থাইল্যান্ড ও ইসরায়েল–ফিলিস্তিনি সংঘাতে যুদ্ধবিরতি স্থাপনে আপনার ভূমিকা ছিল অভূতপূর্ব সাফল্য।” এতে ট্রাম্প কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকবে।
এই সফরের আগে ট্রাম্প জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সোমবার ইম্পেরিয়াল প্যালেসে রাজকীয় অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। এটি ছিল ২০১৯ সালের পর ট্রাম্পের প্রথম জাপান সফর। তিনি সর্বশেষ প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমন্ত্রণে সেই বছর টোকিওর একটি রাজপ্রাসাদে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এবারের সফরে তিনি তাকাইচির নেতৃত্বে জাপানের নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন।
দীর্ঘ আলোচনার পর দুই নেতা প্রতিশ্রুতি দেন, ভবিষ্যতে জাপান–মার্কিন সম্পর্ক শুধু প্রতিরক্ষা নয়, প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাতেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, “জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে থাকলে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।” 
তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি