ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:১২:১০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ইসরায়েলে পরাজয় নিশ্চিত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৫৩ এএম, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাইডেন প্রশাসন ২০২৪ সালের এপ্রিলে একটি বিলের মাধ্যমে টিকটকের চীনা মূল সংস্থা বাইটড্যান্সের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে যে, এক বছরের মধ্যে তাদের প্ল্যাটফর্মের অংশ বিক্রি করতে বা দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। মজার ব্যাপার হলো, এক বছর আগে মার্কিন সরকার যেটিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল, এখন তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগ্রহের সঙ্গে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন। যেসব প্ল্যাটফর্মকে ইসরাইল এতদিন পাত্তা দিত না, এখন তারা সেগুলোর দিকেই ঝুঁকছে। কারণ, বড় ধরনের শঙ্কার মধ্যে তারা পড়ে গেছে।

নিউইয়র্কে ইসরায়েলের কনস্যুলেট জেনারেলে মার্কিন প্রভাবশালীদের সঙ্গে এক বৈঠকে নেতানিয়াহুকে বলতে শোনা যায় : ‘যে যুদ্ধক্ষেত্রে আমরা নিযুক্ত, সেখানে প্রয়োগযোগ্য অস্ত্র দিয়ে আমাদের লড়তে হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো সামাজিক মাধ্যম। আর এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কেনাকাটা চলছে, তা হলো টিকটক। এক নম্বর। এক নম্বর।’

তার এ কথাগুলো বয়ানের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হিমশিম খাওয়া একটি রাষ্ট্রের মরিয়া ভাবকে প্রকাশ করে। ওয়াশিংটন যেটিকে নিরাপত্তার ঝুঁকি হিসাবে দেখেছিল, তেল আবিব এখন সেটিকে প্রচারের সুযোগ হিসাবে দেখছে।

এর আগে সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সিনেটর মিট রমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পেছনের কারণটি সোজাসুজি ব্যাখ্যা করেছিলেন : প্ল্যাটফর্মটি ফিলিস্তিনি কণ্ঠস্বরের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যদি টিকটকের পোস্টগুলো এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের তুলনায় ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা দেখেন, তবে তা চোখে পড়ার মতো বেশি।’

নিজেদের বয়ান প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরাইল কী না করেছে? ঐতিহ্যবাহী মিডিয়া হাউজগুলোর মালিকানা, লবি গোষ্ঠী, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং অনলাইন এজেন্টদের একত্রিত করা, মূলধারার সংবাদমাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করা, প্রতি পোস্টের জন্য প্রভাবশালীদের ৭ হাজার ডলার পর্যন্ত অর্থ প্রদান করা, ইসরাইলি প্রোপাগান্ডা ব্যাপকভাবে প্রচার করতে এবং ফিলিস্তিনি বিষয়বস্তুকে কোণঠাসা করতে গুগলের সঙ্গে ৪৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করা, সাংবাদিকদের হত্যাকে ন্যায্যতা দিতে ‘লেজিটিমাইজেশন সেল’ নামক একটি সামরিক ইউনিট পরিচালনা করা এবং ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ও এক্স-এর মাধ্যমে অ্যালগরিদমিক দমন ব্যবহার করা হয়েছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও ইসরাইলি প্রোপাগান্ডা মেশিন ব্যর্থ হয়েছে।

একটি সফল হয়েছে বলেই অন্যটি ব্যর্থ হয়েছে। নিষ্ঠুরতা কেমন দেখতে হয়, সেটা টিকটক বাস্তব সময়ে বিশ্বকে দেখাতে সফল হয়েছে। এটি ইসরায়েলের পরিবারগুলোকে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা, সাহায্য অস্বীকার করা, বেসামরিক নাগরিকদের অভুক্ত রাখা, সাংবাদিক এবং শিশুদের দায়মুক্তির সঙ্গে হত্যা করা, হাসপাতালগুলোতে বোমাবর্ষণ করা, এলাকাগুলোকে নিশ্চিহ্ন করা, একের পর এক যুদ্ধবিরতি উপেক্ষা করার মতো বিষয়গুলো প্রদর্শন করতে সফল হয়েছে। গাজায় হামলা পরিণত হয়েছে সরাসরি সম্প্রচারিত প্রথম গণহত্যায়। এটি ক্ষতিগ্রস্তদের মাধ্যমে নথিভুক্ত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে।

সূর্যের নিচে থাকা প্রতিটি মাধ্যমকে নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের মরিয়া প্রচেষ্টা একটি গভীর সত্যকে প্রকাশ করে : সরকারগুলো বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে নাগরিকদের মনকে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলিত করতে চায়। জনগণের বিলিয়ন ডলারের করের অর্থে পরিচালিত ডিজিটাল পরিকাঠামোটি জীবনকে বশ করতে এবং প্রভাবশালী শক্তির অনুকূলে মতামতকে একই রকম করতে কাজ করে। প্রযুক্তি নিরপেক্ষ নয়। সরঞ্জামগুলো যারা তৈরি করে, তাদের উদ্দেশ্যকে প্রতিফলিত করে।

ইসরায়েলের উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো স্পষ্ট। আর ফিলিস্তিনের জাতিগত নিধন অতীতের কোনো ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি একটি চলমান প্রকল্প। মানচিত্র থেকে জীবন মুছে ফেলার মধ্যেও ইসরাইল ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে জনসাধারণের তুলে ধরা সত্যের আয়নাকে ভয় পায়। তারা কেবল ফিলিস্তিনিদেরই নয়, তাদের দুর্ভোগের সাক্ষীদেরও নীরব করতে চায়।

তবুও সত্য টিকে থাকে। তৃণমূলের মিডিয়া, নাগরিক সাংবাদিকতা এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল প্রতিরোধের মাধ্যমে সীমিত সম্পদ, ঘন ঘন ব্ল্যাকআউট, ধ্বংস হওয়া পরিকাঠামো এবং অকল্পনীয় ক্ষতি ও দুর্ভোগ সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিরা সত্যের আলো জ্বালিয়েছে এবং বিশ্বের বিবেককে জাগাতে বাধ্য করেছে। তাদের কথাগুলো ক্ষমতাশালীদের সাজানো মিথ্যাগুলোকে খণ্ডন ও তথ্য যাচাই করে চূর্ণ করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের মাইক্রো-আখ্যানগুলো, যা সহজাতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তা বৈশ্বিক স্তরে মানুষ কীভাবে ফিলিস্তিন ও হামাসকে উপলব্ধি করে, তাতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে।

ফোন এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা গল্পগুলো ফিলিস্তিন ও হামাস সম্পর্কে বৈশ্বিক ধারণাকে নতুন করে রূপ দিয়েছে, যা সীমানা পেরিয়ে সহানুভূতি ও সংহতি জাগিয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, আমেরিকানদের ৫৯ শতাংশ এখন ইসরাইলি সরকার সম্পর্কে প্রতিকূল মতামত পোষণ করে, যা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে ৫১ শতাংশ ছিল। সাংবাদিক ক্রিস হেজেস যেমন বলেছেন, ‘এই গণহত্যা একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়, যেখানে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র, তাদের প্রক্সি ইসরাইলসহ সমাজচ্যুত হবে।’

পরিবর্তন দৃশ্যমান। বিশ্ব আর ইসরায়েলের গল্প গিলছে না। ইসরায়েলের মাধ্যমে নতুন মাধ্যম কেনা, তাদের মিথ্যাগুলোকে আরও একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রচার করার যে কোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। মানুষ সত্য দেখেছে এবং তারা তা ভুলতে পারবে না।

সত্যের চেয়ে বেশিদিন টিকতে পারে না মিথ্যা। জনসংযোগ যুদ্ধে ইসরাইল নিজেই নিজের পতন ঘটিয়েছে। যখন জায়নবাদীরা তাদের ভাবমূর্তি কীভাবে উন্নত করা যায়, তা জিজ্ঞাসা করে, তখন উত্তরটি সহজ : শিশু হত্যা বন্ধ করুন, জীবন মুছে ফেলা বন্ধ করুন, গণহত্যা বন্ধ করুন। কোনো কৌশলগত গল্প বলা বা আলগোরিদমিক ইঞ্জিনিয়ারিং একটি রাষ্ট্রকে তার নিজস্ব সৃষ্ট নৈতিক অতল গহ্বর থেকে উদ্ধার করতে পারে না।

আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি কীভাবে অতিক্ষুদ্র বয়ানগুলো বৈশ্বিক চেতনা পরিবর্তন করতে পারে। এখন যা করতে হবে, তা হলো সচেতনতাকে কর্মে রূপান্তরিত করা; তা যত ছোটই হোক না কেন, ফিলিস্তিন সম্পর্কে কথা বলা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, সত্য সবসময় মিথ্যাকে বাতিল করে এবং কোনো সাম্রাজ্য, কোনো আলগোরিদম এবং কোনো প্রচার বাজেট তার চেয়ে বেশিদিন টিকতে পারে না।