প্রোটিয়াদের কাঁদিয়ে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
খেলাধুলা ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:৩২ এএম, ৩ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার
ছবি: সংগ্রহিত।
ঝুলন গোস্বামী, মিতালী রাজরা যা পারেননি, সেটাই করে দেখালেন হরমনপ্রীত কৌর, দীপ্তি শর্মারা। নবি মুম্বইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবার নারীদের ওডিআই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হল ভারতীয় নারী দল। সেই সঙ্গে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিলেন ভারতীয় মেয়েরা। ভারতের প্রথম নারী অধিনায়ক হিসাবে বিশ্বকাপ জেতার মাইলফলক লিখলেন হরমনপ্রীত কৌর।
মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইনালকে ঘিরে গোটা দেশ টিভির পর্দায় নজর রেখেছিল। শুধু তাই নয়, স্টেডিয়াম যে হাউসফুল হবে, তার আশঙ্কা আগেই করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক সেটাই হয়েছে। নবি মুম্বইয়ে ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামের একটি আসনও ফাঁকা ছিল না। অতীতে এমন চিত্র দেখা গিয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না ক্রিকেট বোদ্ধারা। পুরো স্টেডিয়ামের রং নীল হয়ে যায় ভারতীয় দলের জার্সির মতো। আর মাঠে প্রোটিয়াদের চোখ রাঙানির যোগ্য জবাব দিলেন হরমনপ্রীত, জেমাইমারা। আর তাতেই দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দৌড় শেষ করল ২৪৬ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্ব সেরা হল ভারতীয় নারী দল।
নাভি মুম্বাইয়ে আজ প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শেফালি ভর্মা ও দিপ্তি শর্মার ব্যাটে ভর করে ২৯৮ রান তোলে ভারতের মেয়েরা। মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফাইনালে এর আগে ১৬৭ রানের বেশি লক্ষ্য ছুঁয়ে জিততে পারেনি কোনো দল। তাছাড়া নারী ওয়ানডে ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকাও কখনোই এত বেশি রান তাড়া করে জিততে পারেনি।
সুপার সানডের এই ফাইনাল নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশ খানিকটা দেরিতে শুরু হয়। কারণ এই ম্যাচে বৃষ্টির পূর্বাভাস আগেই দিয়ে রাখে আবহাওয়া দফতর। সেই ম্যাচে সকাল থেকেই নবি মুম্বইয়ের আকাশের মুখ ভাড় ছিল। দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়। যার ফলে নির্ধারিত সময়ে টস করা যায়নি। প্রায় দু-ঘণ্টা দেরিতে ম্যাচ শুরু হয়। কিন্তু ওভার কমানো হয়নি। এদিন টসে জিতে প্রথমেই বল করার সিদ্ধান্ত নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক লরা উলভার্ট। বৃষ্টিস্নাত নবি মুম্বইয়ে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের দাপট বজায় রাখেন স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালি বর্মা। এই দুই ব্যাটার ১০৪ রানের পার্টনারশিপ তৈরি করেন। এই জুটি ভাঙলেও ঠিকই রেকর্ড গড়েছেন দুজন। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে এখন পর্যন্ত উদ্বোধনী জুটিতে ভারতের সর্বোচ্চ রান—মান্ধানা-শেফালির এই ১০৪ রান।
স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছুটা চাপে থাকে প্রোটিয়া শিবির। যদিও এদিন যার দিকে সবাই তাকিয়ে ছিলেন, সেই জামাইমা সেই ভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। মাত্র ২৪ রান করেন তিনি। তবে শেফালি ৮৭ রানের ইনিংস খেলেন। তাঁর এই ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারির সৌজন্যে।
শেফালি ছাড়াও দীপ্তি বড় রান করেন। এই অলরাউন্ডার ব্যাটার ৩টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন। পাশাপাশি বঙ্গ সন্তান রিচা ঘোষ ৩টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৪ রান করেন। নির্ধারিত ওভারে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান তোলে।
২৯৯ রানের টার্গেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওপেন করতে নামেন উলভার্ট ও তাজমিন ব্রিটস। যদিও তাদের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। ব্রিটস ২৩ রানে ফিরে যান। একই সঙ্গে বসচ খাতা না খুলেই পরপর। পরপর উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে প্রোটিয়া শিবির। সেই মুহূর্তে দলকে ভরসা দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলে শতরান করেন উলভার্ট। সাময়িক ভাবে বেশ চাপে পড়ে যায় ভারত। একটা সময় ভারতের হাত থেকে ক্রমশ ম্যাচ সরে যেতে থাকে। কারণ উলভার্ট ডার্কসেন (৩৫) ম্যাচটি ধরে নেন। সেই সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ক্যাচ মিস বিপক্ষকে অক্সিজেন দেয়। টান টান উত্তেজনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে মাস্টার স্ট্রোক দেন দীপ্তি। ৪১.১ ওভারের মাথায় উলভার্টকে (১০১) তুলে নেন তিনি। দুর্দান্ত ক্যাচ নেন আমনজ্যোত। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। এরপর আর দাঁড়াতেই পারেনি প্রোটিয়া শিবির। পরপর উইকেট হারাতে থাকে তারা। তাতেই ভারতের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। ৪৫.৫ ওভারে ২৪৬ রানে থামে প্রোটিয়াদের ইনিংস। প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেলেন ভারতীয় মেয়েরা।
