ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৪৫:১০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া মাছুমার লড়াই শেষ হয়নি

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৫৪ পিএম, ৩ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মাছুমা আক্তার মীমের বাবা পেশায় দিনমজুর। তার পক্ষে মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাওয়া কঠিন। তাই প্রতিবেশীদের চাপে মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মতিয়ার রহমান। কিন্তু মেধাবী মীমের ইচ্ছে পড়াশুনা চালিয়ে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডার হওয়ার। তাই অনেক চেষ্টা করে তার বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দেয়। সেই মাছুমা আক্তার মীম এবারের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তবে এখনো লড়াই শেষ হয়নি তার।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার সোনাতলি এলাকার দিনমজুর পরিবারের মেয়ে মাছুমা আক্তার মীম। মীমের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পথটা মসৃন নয়। বাবার দিমজুরের টাকায় চলে সংসার। ফলে দুই বোন, এক ভাইসহ ৫ জনের খাবার জোটাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। 

মীমের পরিবারের কেউ এসএসসির গণ্ডি পেরোতে না পারলেও মীম এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। দিনমজুর পরিবারে টানাটানির সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। তারপরও মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকার লোন নিয়ে রংপুরে ভার্সিটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি করিয়েছে তার বাবা। তবে রংপুরে মেস ভাড়া, যাতায়াত ও তিনবেলা খাবারের টাকা জোগাড় করতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে তার পরিবারকে। 

মীমের মা আয়েশা খাতুন বলেন, মেয়েটা আমার অনেক কষ্ট করেছে। জুতা দিতে না পারায় শিক্ষকরা ক্লাসে ঢুকতে দেয়নি। ঋণ করে জুতো কিনে দিয়েছি। ড্রেস কিনে দিতেও কষ্ট হয়েছে, অনেক সময় যাতায়াতের টাকা দিতে পারিনি, মেয়ে ৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে স্কুলে গেছে-আসছে। ভালোমন্দ কিছু খাওয়াতে পারিনি। তারপরও মেয়েটি ভালো রেজাল্ট করেছে। আমাদের গরিব ঘরে এমন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার! ওর স্বপ্ন যেন পূরণ হয় এই দোয়াই করি।

মীমের বাবা মতিয়ার রহমান বলেন, মেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি ভীষণ খুশি। এখন রক্ত বিক্রি করে হলেও মেয়েকে পড়াব। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট করে বিসিএস দিতে চায়। আমিও তাই চাই। এখন রংপুরে কোচিং করছে।

মীম বলেন, টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। সবাই বলছিল মেয়ে ১৫/১৬ বয়স হয়েছে এখন বিয়ে দেওয়া দরকার। আমি খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। মামাকে কেঁদে কেটে বলায়, মামা বাবাকে বুঝিয়ে বিয়ে আটকে দেয়। আমার বাবা বিয়ে দিতে রাজি ছিল। আমার কান্নাকাটি আর মামার অনুরোধের কারণে আমার বিয়েটা বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমার পরিবার আমার পাশে আছে। তবে আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক কষ্ট করে এই পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আমার প্রতিমাসে শুধু কোচিংয়ের ফি দিতে হয় ৪ হজার টাকা। মেস খরচসহ খাবারের খরচ আরও ৩ হাজার ৫০০ টাকা লাগে। এমনও হয় রংপুরে মেসে থাকাকালীন খাবারের টাকা দিতে না পারায় রোজা রাখতে হয়েছে। এমন কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পড়াশোনা কতদূর চালিয়ে যেতে পারব, সেটাই এখন চ্যালেঞ্জের। 

প্রতিবেশী বদিয়ার রহমান বলেন, মিমের বাবা মিমের বিয়ে ঠিক করছিল। মিম রাজি না হওয়ায় তার বিয়েটা আর হয়নি। আমরা এলাকাবাসী মীম পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় অনেক খুশি। আজ যদি মিমের বিয়ে হতো তাহলে মেয়েটা লেখাপড়া করতে পারতো না। আমরা দোয়া করি সে আরও ভালো করুক।

মীমের শিক্ষক ভূরুঙ্গামারী মহিলা কলেজের কৃষি শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সফিয়ার রহমান বলেন, মীম গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থী। পরিবারে নাজুক অবস্থা। সরকারি বা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলে মেয়েটি নির্বিঘ্নে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবে। তার সহযোগিতা দরকার।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইউএনও দীপ জন মিত্র বলেন, আমি আপনার কাছে শুনলাম। খোঁজ খবর নিয়ে তাকে আর্থিক সহয়তা করা হবে।