ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:২০:১৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নিহত আবুল কালামের স্ত্রী মেট্রোরেলে চাকরি পাচ্ছেন কোন পদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫৩ পিএম, ৬ নভেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত পথচারী আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তার (পিয়া) মেট্রোরেলে চাকরি পেতে যাচ্ছেন। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে এ মাসেই তাঁকে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা করছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। তাঁর জন্য সম্ভাব্য তিনটি পদ বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব পদ ১৬তম গ্রেডের।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, আইরিন আক্তারের স্নাতক এখনো সম্পন্ন হয়নি। তাই উচ্চমাধ্যমিক পাসের সনদ দিয়ে তিনটি পদের চাকরি দেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে টিকিট মেশিন অপারেটর (টিএমও)। এর কাজ হচ্ছে স্টেশনগুলোয় কাচঘরের ভেতর টিকিট বিক্রি করা। স্থায়ী কার্ডে টাকা ভরা (রিচার্জ)। আরেকটি হচ্ছে কম্পিউটার অপারেটর। এটির কাজ মূলত ডিএমটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে। স্টেশনেও কিছু কাজ আছে। আরেকটি পদ হচ্ছে কাস্টমার রিলেশন সহকারী। এটির কাজও স্টেশনেই। সব কটি পদই ১৬তম গ্রেডের। এই পদের মাসিক বেতন সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকার বেশি।

ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সূত্র বলছে, গত রোববার আইরিন আক্তার ও আবুল কালামের পরিবারের সদস্যরা উত্তরার দিয়াবাড়ীতে ডিএমটিসিএলের প্রধান কার্যালয়ে এসেছিলেন। আইরিন আক্তারকে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি সে সময় নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুসারে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও অন্যান্য কিছু কাগজ ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৬ অক্টোবর মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশনের পশ্চিম প্রান্তের একটি পিলারের ওপর থাকা বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে যায়। এতে আবুল কালাম নামের ওই যুবক নিহত হন। আবুল কালামের মরদেহ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে সড়ক পরিবহন, রেল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে আবুল কালামের স্ত্রীকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন।

ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপদেষ্টার ঘোষণা দেওয়া পাঁচ লাখ টাকার সহায়তা এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। এখন চাকরি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া ফাওজুল কবির খান আরও কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায় কি না, সেই চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংকে রেখে মাসে মাসে যাতে নিহত ব্যক্তির পরিবার পেতে পারে, সেই চিন্তা চলছে। এ ছাড়া একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিহত আবুল কালামের পরিবারকে পর্যাপ্ত ও অবিলম্বে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত আবুল কালামের পরিবারকে যতভাবে সহায়তা করা যায়, সেটা তাঁরা করবেন। আবুল কালামের স্ত্রী আইরিন আক্তারকে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। মহামান্য আদালতের নির্দেশনাও তাঁরা মেনে চলবেন। তিনি আরও বলেন, কোনো মানুষের প্রাণের বিনিময় হতে পারে না। তাঁরা যা করছেন, সেটা সহায়তা। এ ছাড়া আর যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করাই তাঁদের লক্ষ্য।

ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, আনুষ্ঠানিকতার জন্য আইরিন আক্তারের কাছ থেকে একটি আবেদনপত্র নেওয়া হবে। সেটির ওপর ভিত্তি করে শিগগিরই একটি নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। ডিএমটিসিএল শতভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। এটি ১২ সদস্যের একটি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই বোর্ডের চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব। আইরিনের নিয়োগের বিষয়টি পরে বোর্ডেও অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হবে।

ডিএমটিসিএলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, রোববার আইরিন আক্তার ডিএমটিসিএলের কার্যালয়ে আসার পর তাঁকে দুটি বিষয় জানানো হয়। এখন তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী ১৬তম গ্রেডে চাকরি দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে স্নাতক পাসের সনদ জমা দিলে উচ্চতর পদে চাকরি দেওয়া হবে। তখন মাসিক বেতন ৮০ হাজার টাকার বেশি হবে বলে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আইরিন আক্তার জানিয়েছেন, তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ মহিলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। স্নাতক পরীক্ষা তিনি সম্পন্ন করতে পারেননি।

আইরিন আক্তারের সঙ্গে গতকাল সোমবার রাতে মুঠোফোনে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। একপর্যায়ে আইরিন কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘চাকরি, টাকাসহ সারা দুনিয়া দিলেও তো স্বামীকে ফেরত পাব না। এখন দুটি সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সহায়তা প্রয়োজন। তবে কারও গাফিলতির কারণে যদি দুর্ঘটনা হয়ে থাকে, তা চিহ্নিত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হলে আরও খুশি হব।’

আবুল কালামের বাড়ি ছিল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। কিশোর বয়সে মা–বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। এরপর ভাই–বোনদের সংসারে বেড়ে ওঠেন। কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে চেষ্টা করছিলেন। স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জে থাকতেন।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটেই মেট্রোরেলের আরেকটি পিলারের বিয়ারিং প্যাড নিচে পড়ে যায়। রোববার আবার বিয়ারিং প্যাড পড়ার ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়) প্রকৌশলী শেখ মইনউদ্দিন। কমিটিতে বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। মেট্রোরেলের পিলার ও উড়ালসড়কের (ভায়াডাক্টের) সংযোগস্থলে বিয়ারিং প্যাড থাকে। এগুলো রাবার ও স্টিলের মিশ্রণে তৈরি। একেকটির ওজন ৫০ থেকে ৮০ কেজির মতো। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমন ২ হাজার ৪৮০টি বিয়ারিং প্যাড রয়েছে।