জয়েসদের গল্প...
ক্রীড়া ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:১২ এএম, ১২ নভেম্বর ২০২৫ বুধবার
ছবি: সংগৃহীত
ক্রিকেটে ভাইদের গল্প কম নয়। পাকিস্তানের চার মোহাম্মদ ভাই দুনিয়াজুড়ে বিখ্যাত। চ্যাপেল, হ্যাডলি, আকমল, মার্শ অথবা রানাতুঙ্গা ভাইদের গল্পেরও আলোচনা ক্রিকেট মহলে নিয়মিতই হয়।
কিন্তু একটা জায়গায় তাঁদের থেকে আলাদা আয়ারল্যান্ডের জয়েসরা। তিন ভাই এড, ডম ও গাস জয়েসের পাশাপাশি যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন তাঁদের দুই বোনও।
আয়ারল্যান্ড নারী দলে দীর্ঘ সময় একসঙ্গে খেলেছেন ইসোবেল ও সেসেলিয়া জয়েস। তাঁরা আবার যমজ। দুই বোনের মধ্যে অল্প সময়ের বড় ইসোবেল জয়েস এখন বাংলাদেশ–আয়ারল্যান্ড সিরিজে ধারাভাষ্য দিতে আছেন সিলেটে। সেখানেই ব্যস্ততার ফাঁকে তাঁর কাছে পাঁচ ভাই–বোনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা নিয়ে জানতে চাওয়া। বিষয়টি তুলতেই মুখের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তাঁর।
ইসোবেল বলতে শুরু করেন, ‘আয়ারল্যান্ডে তো ক্রিকেট পারিবারিক খেলাই। অনেকের নামই শুনে থাকবেন, গ্যাবি–রবিন লুইস, টেক্টর, ব্রায়ানরা। কিন্তু আমরা ৯ ভাই–বোনের মধ্যে ৫ জনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, এটা বেশ বড় ঘটনাই, আনন্দের তো বটেই।’
সেই আনন্দ ইসোবেলের জন্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল একই দলে আড়াই মিনিটের ছোট বোন সেসেলিয়াকে পাওয়ায়। র্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে থাকা আয়ারল্যান্ড নারী দলকে তখন প্রায় নিয়মিতই হারতে হতো। সেই সময়ে বোনের সঙ্গে সেই দুঃখ ভাগ করেই হালকা হতেন ইসোবেল। দেশেও যে পরিবারের বাইরে খুব একটা কাউকে ক্রিকেটীয় আলাপের জন্য পেতেন, তা–ও নয়।
সে রকমই একটা গল্প কাল শোনাচ্ছিলেন ইসোবেল, ‘যখন খেলতাম, তখন দেখা যেত বিদেশে গেলে মানুষ চেনে। কিন্তু দেশে কেউই চেনে না। আপনাকে একটা গল্প বলি—একবার বিশ্বকাপের সময় একদিন অ্যাসেম্বলিতে এক শিক্ষক দাঁড় করালেন ক্রিকেট নিয়ে বলতে। ওমা, দেখি কেউ এসব বিষয়ে কিছু জানেই না, হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!’
আয়ারল্যান্ডে সেই পরিস্থিতি এখন কিছুটা বদলেছে। ক্রিকেটের পরিচিতিও বেড়েছে। কিন্তু মনে জমা হওয়া দুঃখটা এখনো ভোলেননি ইসোবেল। কী সেই দুঃখ? কখনো যে পুরোদস্তুর পেশাদার ক্রিকেটারই হওয়া হয়নি তাঁর!
সেটা যে হবে না, তা–ও ইসোবেল বুঝে গিয়েছিলেন সেই ছোট্ট বয়সেই, ‘আমার বয়স তখন মনে হয় ১১ বছর, ইংল্যান্ডের সঙ্গে কোনো একটা দলের টেস্ট দেখছিলাম। হঠাৎ আমার মনে হলো, এখানে দেখি সবাই ছেলে, কোনো মেয়ে নেই! এত মন খারাপ হয়েছিল তখন—বুঝতে পেরেছিলাম, কখনোই এটা আমার পুরোপুরি পেশা হবে না!’
পরে সত্যিই তা হয়নি। খেলোয়াড়ি জীবনে থাকতেই ক্রিকেট ও হকির কোচিং শুরু করেন। এখন মন দিয়েছেন ধারাভাষ্যে। বাড়ির আঙিনায় ৬ বছর বয়সে ভাইয়ের আন্ডার আর্ম থ্রো দিয়ে যে ক্রিকেটে পথচলার শুরু, সেটির সঙ্গে থেকেই পরের বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান ইসোবেল।
আপনারা ভাই–বোনেরা যখন পারিবারিক আড্ডায় বসেন, তখনো কি ক্রিকেট নিয়েই সারাক্ষণ আলাপ হয়? প্রশ্নটি শুনে যেন একটু মজাই পেলেন ইসোবেল, ‘আরও চারজন আছে তো, যারা ক্রিকেট খেলেনি। তাদের মধ্যে তিনজনেরও অবশ্য ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ আছে। কিন্তু আমার বড় বোন ক্রিকেট খুব একটা পছন্দ করে না। আড্ডায় ক্রিকেট অবশ্যই থাকে, কিন্তু যতটা ভাবছেন, ততটা নয়!’
খেলোয়াড়ি জীবনে ইসোবেলের বড় দুঃখ ছিল ছেলেদের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে আইসিসির আর্থিক লাভের হিসাব হওয়া। কদিন আগেই শেষ হয়ে যাওয়া নারী বিশ্বকাপে সাড়া পড়তে দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত, ‘আমি সব সময়ই চাইতাম ভারত বিশ্বকাপ জিতুক। কারণ, জানি নারী ক্রিকেটে তার প্রভাব কেমন হবে। যদি ওরা ২০১৭ সালে বিশ্বকাপ জিতত, তাহলে নারী ক্রিকেট এখন আরও এগিয়ে থাকত।’
