১৫ বছর ধরে কুড়িয়ে আনা শাক বিক্রি করেন বৃদ্ধা সাহেরা খাতুন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১০:১৭ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ শুক্রবার
ছবি: সংগৃহীত
পথে–প্রান্তরে ঘুরে খুঁজে নেন নানা জাতের শাক। জঙ্গলে নিজ থেকে গজানো কলমি, বিলের শাপলা, কচু, কচুর লতি, হেলেঞ্চাসহ নানা জাতের শাক সংগ্রহ করেন দিনভর। বিকেল হলেই বাজারের একপাশে এসে বসে সবুজ শাকের পসরা সাজিয়ে বসেন। চাষ করা নয় বলে তরতাজা এই শাকের স্বাদ ও গুণাগুণ অনেক বেশি। তবু প্রতি আঁটি ২০ টাকায় বিক্রি করেন। ১৫ বছর ধরে এভাবেই শাক বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন বৃদ্ধা সাহেরা খাতুন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজারে প্রতি বিকেলেই শাক নিয়ে বসেন সাহেরা। নিয়মিত ক্রেতাদের অনেকেই চেনেন তাঁকে। তরজাতা কীটনাশকমুক্ত বলে বিক্রিও হয় তাঁর আনা নানা পদের শাকসবজি। এলাকায় ‘শাক কুড়ানো বুড়ি’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
গত বুধবার সন্ধ্যায় মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় সাহেরা খাতুনের সঙ্গে। তাঁর সামনে তখন কলমি, লাউ, হেলেঞ্চাসহ নানা রকম শাক সাজানো। বিক্রির এক ফাঁকে অনেকটা সময় নিয়েই তিনি কথা বললেন। জানালেন নিজের জীবনসংগ্রামের গল্প। বৃদ্ধা সাহেরার বাড়ি উপজেলার পশ্চিম সোনাপাহাড় গ্রামে।
সাহেরা জানান, মা–বাবার আদর-আহ্লাদেই তিনি বড় হয়েছিলেন। এরপর তাঁর বিয়ে হয় ফটিকছড়ি উপজেলার হেয়াকো এলাকার বড়ইতলি রাস্তার মাথার গোল টিলা গ্রামে। স্বামী আবুল কালাম বারোয়ারি কাজ করতেন। তবে তাঁর সংসারে মনোযোগ ছিল না। দেখতে দেখতেই এক ছেলে আর এক মেয়ের জন্ম দেন তিনি। তবে এর মধ্যে স্বামী আরও তিন বিয়ে করেন। এসবের মধ্যেই অনটনে তাঁর সংসার চলতে থাকে। একপর্যায়ে স্বামীও মারা যান।
সাহেরা খাতুন বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর মিরসরাইয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন। সেখান থেকে তাঁর মূল জীবনসংগ্রাম শুরু। শুরুতে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে ডেকোরেটরে ধোয়া-পালার কাজ করতেন। এরপর নিজের কিছু জমানো টাকা ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে মেয়েকে বিয়ে দেন তিনি। অনটনের কারণে ছেলে–মেয়ে কাউকেই পড়াশোনা করাতে পারেননি।
সাহেরার ছেলে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে কাজ নেওয়ায় কিছুদিন সাহেরা শাক বিক্রি বন্ধ রাখেন। তবে ছেলের বিয়ে ও সন্তান হওয়ার পর আবারও অনটন দেখা দেয়। এ কারণে শাক কুড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৫ বছর ধরে এভাবে চলছে তাঁর জীবন।
জানতে চাইলে সাহেরা খাতুন বলেন। ‘ভোরে বের হয়ে আশপাশের গ্রাম থেকে কলমি, হেলেঞ্চা, থানকুনি, কচু, লতি—যে শাক পাই, তা কুড়িয়ে আনি। কোনো ধরনের সার না থাকায় অনেকেই এসব পছন্দ করেন। শাক বিক্রি থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টাকা আয় হয় তাঁর। এ টাকা দিয়ে নিজের খরচ মেটাই। বাকি টাকা নাতি-নাতনির জন্য কেক-বিস্কুট নিয়ে যাই। কিছু বাঁচলে তুলে দিই ছেলের হাতে।’
জোরারগঞ্জ বাজারে সাহেরা খাতুনের থেকে নিয়মিত শাক কেনেন গৃহবধূ তাসলিমা আক্তার। তিনি বলেন, এখন তো বাজারের সব শাকসবজি সার-কীটনাশকে ভরা। সাহেরা খাতুনের আনা শাকের দাম কম, তবে স্বাদ ভালো। এ কারণে তিনি শাক কেনেন।
জোরারগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী বাহার আলী বলেন, ‘সাহেরা খাতুন এই এলাকারই মেয়ে। ১৫ বছর ধরে বাজারে শাক বিক্রি করেন। বয়স হলেও কাজপাগল এ নারী সব সময় হাসিখুশি থাকেন। সংসার-সন্তানের জন্য তাঁর নিবেদন সত্যিই অসাধারণ।’
