ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:০৫:১৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মৃত প্রেমিকের শুক্রাণু দিয়ে মা হলেন ইসরাইলি ডাক্তার

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩১ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

ছবি: সংগ্রহিত।

ছবি: সংগ্রহিত।

সবেমাত্র গাজা যুদ্ধে ক্যাপ্টেন নেতানেল সিলবার্গ-এর মৃত্যুর মর্মান্তিক খবর পেয়েছেন। কিন্তু সেই আঘাত সামলানোর মতো সময় নেই হাতে। মৃত্যুর মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে শুরু হয়েছিল সময়ের বিরুদ্ধে ডাঃ হাদাস লেভির এক অবিশ্বাস্য দৌড়। শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিযোগিতায় জয় হয়েছে ৩৫ বছর বয়সি এই ইসরাইলি নারী ডাক্তারেরই। হবু স্বামীর মৃত্যুর দেড় বছর পরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। শুধু ইসরাইলের নয়, সমগ্র চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসেই এটা এক অবিশ্বাস্য ঘটনা।

হবু স্বামীর মৃত্যুর দেড় বছর পরে তার ছেলের জন্ম দেওয়াটাকে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জয় বলে মনে করেন না ডাঃ লেভি। ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’কে তিনি বলেছেন, ‘এই শিশুটি শত্রুদের প্রতি আমার জবাব। আমি আমার বংশ রক্ষা করেছি।’ এই দৃঢ়তা নিয়েই সে দিন তিনি ছুটেছিলেন সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে— ‘পোস্টমর্টেম স্পার্ম রিট্রিভাল’ বা পিএসআর প্রযুক্তির মাধ্যমে নেতানেলের শুক্রাণু উদ্ধার করতে।

মাত্র ৯টি শুক্রাণুর জন্য ‘অকল্পনীয় যুদ্ধ’:

জেরুজালেমের হাদাসাহ হাসপাতালে মৃত নেতানেলের শুক্রাণু উদ্ধারের প্রক্রিয়াটা সহজ ছিল না। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেভি একে এক ‘অকল্পনীয় যুদ্ধ’ বলেছেন। সাধারণত জীবিত শুক্রাণু দাতার বীর্যে লক্ষ লক্ষ জীবিত শুক্রাণু কোষ থাকে। কিন্তু মৃত্যুর পরে অক্সিজেনের অভাবে নেতানেলের বীর্য প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।

হাদাসা হাসপাতালের গবেষকদের একটি বিশেষ দল র বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত শুক্রাণু কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। ১০ ঘণ্টার সেই কঠিন লড়াইয়ে মাত্র ৯টি কার্যকরী শুক্রাণু কোষ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন তারা।

মাত্র ৯টি শুক্রাণু দিয়ে কি মা হতে পারবেন ডাঃ লেভি? চিকিৎসকরাও সেই সময়ে সাফল্যের হার নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেননি। কেউ জানতেন না ওই সামান্য কোষ দিয়ে গর্ভধারণ সম্ভব কি না।

এ ছাড়া ছিল আইনি বাধাও। মৃত ব্যক্তির শুক্রাণু ব্যবহার করার আইনি এবং নৈতিক অধিকার আছে কি তাঁর সঙ্গিনীর? এই প্রশ্ন উঠেছিল। মনে রাখতে হবে নেতানেলের এবং ডাঃ লেভি, বিবাহিত ছিলেন না।

সমস্ত প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলেন লেভি। ২০২৪-এর অক্টোবরে গর্ভবতী হয়েছিলেন তিনি। লেভির কথায়, ‘এটা এক অলৌকিক ঘটনা... এটা একটা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনির মতো।’

পোস্টমর্টেম স্পার্ম রিট্রিভাল: কী এই প্রযুক্তি?

মৃত্যুর পরেও মৃত ব্যক্তির শুক্রাণু সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করার এই পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল গত শতাব্দীর আটের দশকে। ১৯৯৯ সালে প্রথম PSR পদ্ধতিতে কোনও শিশুর জন্ম হয়েছিল। আর এখন বিশ্ব জুড়ে আলোচনা চলছে এই পোস্টমর্টেম স্পার্ম রিট্রিভাল নিয়ে।

সাধারণত মৃত্যুর ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ব্রেন ডেড বা সদ্য মৃত ঘোষিত রোগীর কাছ থেকে এই শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। ত্বকের মধ্য দিয়ে সূঁচ ব্যবহার করে শুক্রাণু নিষ্কাশন করা হয়। একে এপিডিডাইমাল অ্যাসপিরেশন বলে।

এর পরে ওই শুক্রাণু হিমায়িত করে সংরক্ষণ করা হয়। ঠিক যে ভাবে ফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলিতে জীবিত দাতাদের বীর্য সংরক্ষণ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে যখন ওই মৃত ব্যক্তির সঙ্গী গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হন, তখন IVF পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণাগারে সেই সংরক্ষিত শুক্রাণু দিয়ে ডিম্বাণুর নিষেকের চেষ্টা করা হয়।

প্রক্রিয়াটি খুব একটা জটিল না হলেও এই প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু সংবেদনশীল আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। বিশ্বজুড়ে এখনও বিষয়টি বিতর্কিত।

পোস্টমর্টেম স্পার্ম রিট্রিভাল নিয়ে যতই আইনি এবং নৈতিক প্রশ্ন উঠুক না কেন, এই অত্যাশ্চর্য ঘটনা প্রমাণ করে দিয়েছে, ভালোবাসা এবং বিজ্ঞানের অদম্য ইচ্ছাশক্তি মিলে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে।