তফশিলের দ্বারপ্রান্তে ইসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:২৮ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ সোমবার
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্তি আজ। এদিন নির্বাচনের তফশিল কবে ঘোষণা করা হবে, সেই বার্তা দিতে পারে ইসি। এজন্য কমিশনের সভা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সভার পর তফশিলের তারিখ জানাতে পারে ইসি। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গণভোটের অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই খসড়ার কপি রোববার নির্বাচন কমিশনে পৌঁছেছে। দু-এক দিনের মধ্যে এই অধ্যাদেশ জারির কথা রয়েছে। অধ্যাদেশ জারির পরই গণভোটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করবে ইসি।
তফশিল ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার রোববার সন্ধ্যায় বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে ত্রুটি থাকলে সংশোধন করা যায়। এটা করা হচ্ছে তফশিল ঘোষণার জন্যই। আশা করছি, খুব দ্রুতই সবকিছু জানতে পারবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের এক বছর পূর্তি হচ্ছে। বছরপূর্তিতে কিছু মেসেজ পাবেন।
জানা যায়, ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে তফশিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ৪, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর আলোচনায় আছে। আর ভোটগ্রহণ হতে পারে ৫, ৭, ৮ বা ১২ ফেব্রুয়ারি। তফশিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত দুই মাস সময় রাখা হবে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার ভোটগ্রহণের জন্য বেশি উপযুক্ত মনে করা হচ্ছে। ১৯৭৯, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন রোববার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় প্রচুর ভোটার গ্রামে গিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ পান। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১২টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ (১২ জুন) সালের ভোটগ্রহণ হয় বুধবার।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করতে আদেশও জারি করেছে। নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয়-সন্দেহ রয়েছে। এমনকি ভোট হবে কি না-এমন সংশয় চাউর রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি রোববার বলেন, ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার বিষয়ে আমরা কনফিডেন্ট (আত্মবিশ্বাসী)।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, তফশিল ঘোষণার আগমুহূর্তের কাজগুলো দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে তফশিল ঘোষণার আগে নির্বাচন নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপ শেষ করতে চায় ইসি। এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো সংলাপের বাইরেই থেকে যাচ্ছে। যদিও এসব দলের নির্বাচনে অংশ নিতে আইনগত বাধা নেই। দলীয় কার্যক্রম ও নিবন্ধন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ভোটে অংশ নিতে পারবে না। তফশিল ঘোষণার পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে ২৭ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে কমিশন। ৩০ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ২২ জন সচিব ও বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে পৃথক আরেকটি বৈঠক করবে। ওই বৈঠকে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরিসহ নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেবে ইসি।
এছাড়া তফশিল ঘোষণার আগে মাঠের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিতে ‘মক ভোটিং’-এর আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি। আগামী সপ্তাহে এই মক ভোটিং আয়োজনের কথা রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কাছাকাছি কোনো এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি অনুষ্ঠিত হবে। মক ভোটিংয়ে একজন ভোটার ভোটকেন্দ্রে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, একজন ভোটারের ভোট দিতে কত সময়ের প্রয়োজন হবে, ভোটকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার-এসব বিষয় স্বচক্ষে দেখবেন নির্বাচন কমিশনাররা। একই সঙ্গে বয়স্ক, গর্ভবতী নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভোটকক্ষে কী ধরনের ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়, সেটাও পরীক্ষা করা হবে। ওই অভিজ্ঞতা থেকে আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে কতজন ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষ হওয়া উচিত, তা নির্ধারণের কথা রয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা আরও জানান, জাতীয় নির্বাচনের বড় প্রস্তুতির মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ উদ্বোধন অন্যতম। এর বেশির ভাগ কাজই শেষ হয়েছে। তবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে।
গণভোট নিয়ে প্রস্তুতি : গণভোটের অধ্যাদেশ জারির পর আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করবে ইসি। ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, অধ্যাদেশ অনুযায়ী গণভোটের বিধিমালা করবে ইসি। ওই বিধিমালায় ব্যালট কেমন হবে, ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়া বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের পৃথক রঙের ব্যালট থাকবে। সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে আগের মতোই সাদা-কালো। গণভোটের জন্য সবুজ বা গোলাপি রঙের ব্যালট চিন্তা করা হচ্ছে। রোববার পর্যন্ত এ বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, নির্বাচন ও গণভোটের ব্যালটে একই সিল নাকি পৃথক সিল ব্যবহার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত ইসি এখনো নেয়নি। নির্বাচনে দুটি সিল ব্যবহার করা হলে ভোটাররা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এজন্য একটি সিল ব্যবহার করা হতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সিল সংগ্রহ করা হয়েছে, সেখানে ‘১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ উল্লেখ রয়েছে। গণভোটের ব্যালটে ওই সিল ব্যবহার করার বিষয়ে কমিশনের নির্দেশনা পাননি ওই কর্মকর্তারা। কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সিল সংগ্রহ করলেও এক মাস প্রয়োজন হবে।
নির্বাচনে প্রতি ৫০০ নারী ও ৬০০ পুরুষের জন্য একটি করে ভোটকক্ষ হিসাবে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি করেছে ইসি। একই দিনে গণভোট ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় একজন ভোটারের দুটি ব্যালটে ভোট দিতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে। এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়তে পারে। ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়লে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়বে। এতে নির্বাচনি ব্যয়ও বাড়বে। প্রতিটি ভোটকক্ষের জন্য কমবেশি ১৪ হাজার টাকা ব্যয় বাড়বে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মক ভোটিংয়ের পর এ বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
