ভূমিকম্পের ১৫০ উদ্ধার যন্ত্র বাক্সেই পড়ে আছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:১৯ এএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৫ শুক্রবার
ছবি: সংগৃহীত
ভূমিকম্পে দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় কেনা ৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি তালাবদ্ধ পড়ে আছে। বেশির ভাগ যন্ত্রপাতির মোড়কই খোলা হয়নি। ব্যবহার না করায় সেগুলোর কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। একই প্রকল্পের আওতায় ১২৫ কোটি টাকা খরচায় তৈরি ১০ তলা ভবনটি দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ। সেখানে জমেছে ধুলোবালি। আশপাশে গজিয়েছে আগাছা।
জানা যায়, দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য সক্ষম পরিবেশ তৈরিতে ২০১৭ সালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ হেলালীকে। কারিগরি ও প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন ৮২ জনকে এ প্রকল্পের অধীনে পাঁচ দেশের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। চীনা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে রাজধানীর মহাখালীতে রাজউকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের পাশে এক একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয় ১০ তলা ভবন। ভবনটির প্রতি তলার আয়তন ১০ হাজার বর্গফুট। ২০২৩ সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর ভবনগুলোর ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা শনাক্তের জন্য কেনা হয় ২৫ ধরনের ১৫০টি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জাপান থেকে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়। এসবের কয়েকটি দিয়ে প্রকল্পে নিযুক্ত জনবলকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। পুরো প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, তুরস্ক ও ইরানের পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। কেনা হয় দুটি জিপগাড়ি, ৯টি ডাবল কেবিন পিকআপ, চারটি মাইক্রোবাস ও ১০টি মোটরসাইকেল। এ ছাড়া কেনা হয় কম্পিউটার, প্রিন্টার, এসি, চেয়ার-টেবিলসহ প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী।
তখন বলা হয়েছিল, আরবান সেফটি অ্যান্ড রিজিলিয়েন্স ইনস্টিটিউট (ইউএসআরআই) নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হবে। প্রকল্পের আওতায় তৈরি ভবনটিই হবে ইউএসআরআইর প্রধান কার্যালয়। রাজউকের মাধ্যমে সরকার এই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেবে। প্রতিষ্ঠানটির কাজ হবে রাজধানী ঢাকা ও সিলেটের ভবনগুলোর ভূমিকম্প সক্ষমতার মান যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়া। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করে তালিকা দেওয়া, যাতে সরকার সেগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি দেশের অন্য ভবন মালিকরাও যেন এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের ভবনের সক্ষমতা যাচাই করে নিতে পারেন।
২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে ইউএসআরআইর প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। আর যানবাহন, যন্ত্রপাতিগুলো ভেতরে রেখে দেওয়া হয়েছে। একদিনের জন্যও ওই ফটক খোলেনি। প্রশিক্ষণ নেওয়া ব্যক্তিরাও বেকার। আর গাড়িগুলো ব্যবহার করছেন রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি
প্রকল্পের আওতায় কেনা ১০টি স্ক্যানার মেশিনের মধ্যে মাত্র একটি খোলা হয়েছিল। বাকি ৯টি এখনও বাক্সবন্দি। স্ক্যানারের মাধ্যমে ভবনের কলামের ভেতরে থাকা রডের মান এবং কী পরিমাণ রড আছে তা শনাক্ত করা যায়। দুটি কেনেপেলিটেশন (সিপিটি) টেস্টার মেশিন কেনা হয়। এই যন্ত্র ট্রাকের ওপর বসানো থাকে। মাটির গুণাগুণ মান পরীক্ষার গবেষণাগার হিসেবে এটা ব্যবহৃত হয়। ক্যাপাটেস্ট মেশিন কেনা হয় ১০টি। এই যন্ত্রের মাধ্যমে কলামসহ যে কোনো কংক্রিটের মান যাচাই করা যায়। পাইল ইনটিগ্রিটি টেস্টার কেনা হয় দুটি। এটি দিয়ে ভবনের পাইলিংয়ের মান ও অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। আলট্রা পালস ভেলোসিটি মেশিন কেনা হয় ১০টি। এর মাধ্যমে রঞ্জনরশ্মি ব্যবহার করে ভবনের অন্য অবকাঠামোর মান যাচাই করা যায়। ভবনের সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হয়। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে সব যন্ত্রপাতিই তালাবদ্ধ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক যন্ত্রপাতির সঙ্গে ব্যাটারি ও বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস যুক্ত আছে। এগুলো নিয়মিত চার্জ ও ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে। সেটা না হলে এক সময়ে যন্ত্রটাই বিকল হয়ে যায়। ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এসব যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়। এর পর থেকে কার্যত সেগুলো পড়ে আছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত বছরের জুনে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালী সবকিছু রাজউককে বুঝিয়ে দিয়ে চাকরি থেকে অবসরে যান।
এ ব্যাপারে আবদুল লতিফ হেলালী বলেন, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর থেকে ভবনটি তালাবদ্ধ। যন্ত্রপাতি সেখানে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করা হয়েছিল, তা সফল হয়নি।
এ ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, আরবান সেফটি অ্যান্ড রিজিলিয়েন্স ইনস্টিটিউট চালুর বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। রোববার (গতকাল) গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি। ট্রাস্টের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাষিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা হবে। এরই মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুর্নগঠন করা হয়েছে। এমনকি রাজউক থেকে একটি তহবিলও তাদের দেওয়া হবে।
