ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:০৭:৪১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৪২ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন স্থগিত ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। ভিসা অপব্যবহার নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ ও ব্রিটেনের হোম অফিসের কঠোর নতুন নিয়মের পর দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের কমপক্ষে ৯টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘‘উচ্চ ঝুঁকির’’ দেশগুলোর শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করা নিয়ে কর্তৃপক্ষের বাড়তি চাপের মুখে রয়েছে।

ব্রিটেনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আশ্রয় আবেদন বেড়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালগুলো এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। দেশটির সীমান্ত নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ঈগল সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভিসা ব্যবস্থা যেন ব্রিটেনে স্থায়ীভাবে বসবাসের ‘‘পেছনের দরজা’’ হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।

যেসব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছে, তার মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি ২০২৬ সালের শরৎকাল পর্যন্ত স্থগিত করেছে। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি সাম্প্রতিক অপ্রত্যাশিতভাবে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে।

এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে স্নাতক পর্যায়ের আবেদন স্থগিত করেছে। আর ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তি স্থগিত করেছে।

অন্যান্য পরিবর্তন আনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আছে সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি; যারা পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তি স্থগিত করেছে। ইউনিভার্সিটি অব সান্ডারল্যান্ড বলেছে, কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘‘কোনো দুঃখ প্রকাশ’’ করছে না। বরং এটি শিক্ষার্থী ভিসা ব্যবস্থার ‘‘সততা রক্ষা’’ করার জন্য জরুরি।

কঠোর নতুন নিয়ম

চলতি বছরের শুরুর দিকে ব্রিটেনের হোম অফিস ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্টের (বিসিএ) তিনটি মানদণ্ডে পরিবর্তন আনে। যা পূরণ করতে না পারলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থী স্পন্সর লাইসেন্স হারাবে।

ভিসা ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ এবং নেট অভিবাসীর সংখ্যা হ্রাস করাই নতুন নিয়মের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ হোম অফিস। গত সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া পরিবর্তন অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না; আগে এটি ১০ শতাংশ ছিল।

কিন্তু ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২২ শতাংশ; যা নতুন সীমার চেয়ে অনেক বেশি।

প্রত্যাখ্যাত ২৩ হাজার ৩৬টি আবেদনের অর্ধেকই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের। পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদনের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে; যাদের বেশিরভাগই ব্রিটেনে চাকরি অথবা শিক্ষার্থী ভিসায় প্রবেশ করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংকট

আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষা বিশেষজ্ঞ ভিনসেঞ্জো রাইমো বলেছেন, এই কঠোরতা কম ফি-নির্ভর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ‘বাস্তব সমস্যা’। কারণ তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। তার মতে, অল্পসংখ্যক সমস্যা রয়েছে এমন ক্ষেত্রেও বিশ্ববিদ্যালয়ের হোম অফিসের নিয়ম মেনে চলার ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছে। ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ার পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভর্তিকে সেপ্টেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত স্থগিত করেছে।  বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়াকরণকে দায়ী করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটি বলেছে, আন্তর্জাতিক ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ছাড়া উপায় নেই। অক্সফোর্ড ব্রুকস ২০২৬ সালের জানুয়ারির স্নাতক ভর্তি থেকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশি আবেদন স্থগিত করেছে।

ব্রিটেনের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিপিপি ইউনিভার্সিটি পাকিস্তান থেকে ভর্তি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে।

লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে ভর্তি বন্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির মোট ভিসা প্রত্যাখ্যানের ৬০ শতাংশই বাংলাদেশি আবেদনকারীদের বলে জানা গেছে।

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও শিক্ষা পরামর্শকরা

পাকিস্তানের লাহোরভিত্তিক শিক্ষা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এডভান্স অ্যাডভাইজরসের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেন, এসব সিদ্ধান্ত অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। কারণ বহু সত্যিকারের শিক্ষার্থী আবেদন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে বাদ পড়ছে।

তিনি অভিযোগ করেন, কিছু ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই এমন প্রণোদনা তৈরি করেছে; যা ফাঁকিবাজ আবেদনকারীদের জন্ম দেয়। বিদেশে যেসব এজেন্সির মাধ্যমে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করে সেগুলোকে ভালোভাবে যাচাই করা উচিত তাদের।

তার ভাষায়, পাকিস্তানে শত শত এজেন্সি আছে, যাদের অনেকেই শিক্ষার্থী কোথায় যাচ্ছে, সেই বিষয়ে কোনো পরোয়া করে না। এটি এখন পুরোপুরি একটি ‘মুনাফাভিত্তিক ব্যবসা’ হয়ে গেছে।

আরও কঠোর হচ্ছে নিয়ম

ব্রিটেনের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশটির ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন বিসিএ মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে ১৭টি নিয়ম কঠোরভাবে মেনে শিক্ষার্থী স্পন্সরশিপ চালিয়ে যেতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় অন্তত এক বছরের জন্য স্প্সর অধিকার হারাবে; যা প্রায় ১২ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণে পরিণত হবে।

ইউনিভার্সিটিজ ইন্টারন্যাশনাল ইউকের পরিচালক জেমি অ্যারোস্মিথ বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানকে তাদের আবেদন প্রক্রিয়া ও ডিপোজিট নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি বলেন, কঠোর নিয়ম ‘‘চ্যালেঞ্জিং হলেও’’ ভিসা ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা বজায় রাখতে এটি প্রয়োজনীয়।

আর ব্রিটিশ হোম অফিস বলেছে, আমরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত মূল্যায়ন করি। যে কারণে আমরা নিয়ম আরও কঠোর করছি; যাতে যারা এখানে আসে তারা সত্যিকারের শিক্ষার্থী হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে।