ঢাকা, বুধবার ১০, ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৩০:৪০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শরিকদের সঙ্গে বিএনপির আসন বণ্টন শিগগিরই

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:১৯ এএম, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শরিকদের সঙ্গে শিগগিরই ‘আসন নিষ্পত্তি’ করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় বসছে দলটি। প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী এবং সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বিবেচনায় নিয়ে মিত্রদের মধ্যে বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থীদের আসন ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। 

দলটির অভিমত, শুধু আসন ছাড়লেই হবে না, মিত্রদের জিতিয়েও আনতে হবে। তাই জোটের বড় বা সিনিয়র নেতা; কিন্তু ভোটের মাঠে যাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম– সরকার গঠন করলে তাদের সংসদের উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যথাযথভাবে জায়গা করে দেওয়া হবে। 

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল বিএনপি। এর মধ্যে একটি আসনের প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়। এর এক মাস পর গত ৪ ডিসেম্বর স্থগিত আসনে নতুন প্রার্থীসহ ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে ২৭২ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে বিএনপি। এখনও ফাঁকা রয়েছে ২৮ আসন। এর মধ্যে চারটি আসনের সীমানা জটিলতা নিরসন হয়নি। এর বাইরে নিজ দলীয় কোন্দলের কারণেও প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি বিএনপি। শরিক দলগুলোর জন্য হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে ১৩টির মতো আসন ছেড়ে দিতে পারে বলে জানা গেছে। 

ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী দল ও জোটের প্রার্থী তালিকা জমা দিলেও তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তারা বিস্মিত, অনেকে ক্ষুব্ধও। দুই দফায় ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় অন্তত পাঁচটি আসনে ‘অনিবন্ধিত’ মিত্ররা জোরালোভাবে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আসনগুলো হলো কুষ্টিয়া-২, মৌলভীবাজার-২, নড়াইল-২, কিশোরগঞ্জ-৫ এবং যশোর-৫। তবে এসব আসনে বিএনপি দলের নেতাদের প্রার্থী করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে, শরিকদের কাঙ্ক্ষিত আসনগুলোতে যেখানে বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের দলীয় প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে দু-একটিতে ‘মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার’ চিন্তা-ভাবনা করছে দলটি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় যৌক্তিকভাবে ফ্যাসিবাদবিরোধী জোটের ঐক্য ধরে রাখতে চায় বিএনপি। তাই মিত্রদের মধ্যে যাদের শেষ পর্যন্ত আসন ছাড়া সম্ভব হবে না, সরকার গঠন করলে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন করবে দলটি।

জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচন সামনে রেখে মিত্রদের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা আসন বণ্টনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দূরত্ব বা সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন কমিটি যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বসে এই বিষয়টির সমাধান করবেন। এর অংশ হিসেবে আজ বুধবার ১২-দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গেও বসবে। 

অবশ্য শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনে সংশোধিত আরপিওর বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিএনপিকে। কারণ, সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও ভোট করতে হবে নিজ নিজ দলের প্রতীকে। অথচ আগে কোনো দল জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে তারা জোটের শরিক যে কোনো দলের প্রতীক নেওয়ার সুযোগ পেত। এ অবস্থায় নির্বাচনে প্রতীক একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। 

নেতাদের অভিমত, শরিক অন্য দলগুলোর প্রতীককে নির্বাচনী মাঠে পরিচিত করানও অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে। ধানের শীষের পক্ষে নেতাকর্মীদের যেভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নামানো যাবে, অন্য দলের প্রতীকের পক্ষে সেভাবে নামানো হয়তো সম্ভব হবে না। তার পরও জোটের ঐক্যের স্বার্থে শরিক দলগুলোর মধ্যে যারা খুব পরিচিত, মাঠ পর্যায়ে যাদের অবস্থান আছে, সর্বোপরি যারা বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন– তাদের সবাইকে আসন ছাড়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

অবশ্য স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এক নেতা বলেন, যেহেতু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে– সেহেতু নিশ্চিত পরাজয় জেনেও ধানের শীষবিহীন মিত্র দলের প্রার্থী করা সঠিক হবে না। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা যেতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মের নাম হতে পারে ‘ডেমোক্রেটিক রিফর্ম অ্যালায়েন্স’। এই প্ল্যাটফর্মে মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ক্ষমতায় গেলে উচ্চকক্ষসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তবে এই প্রস্তাব নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আসন বণ্টন বা সমঝোতা নিয়ে সব শরিকের সঙ্গে অসন্তোষ-সমস্যা হয়নি, কিছু কিছু শরিকের সঙ্গে হয়েছে। এলডিপিসহ দু-একটি ইসলামী দলের সঙ্গে তাদের মোটামুটি বোঝাপড়া আছে। সংশ্লিষ্ট আসনে বিজয়কেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তাই যারা বিজয়ী হতে পারবেন, তাদের আসন ছাড় দেওয়া হবে; বাকিদের অন্যভাবে সম্মান জানানো হবে।

জানা গেছে, বৈঠকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের যেসব প্রতিশ্রুতি আছে, সেগুলোর মধ্যে সরকার গঠন করলে সেক্টরভিত্তিক অর্থাৎ কৃষক কার্ড, ফ্যামিলি কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ড, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, ক্রীড়াসহ মোটাদাগে অন্তত আটটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। এসব প্রতিশ্রুতি যাতে প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়, সে জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে লিফলেট থেকে শুরু করে বিজ্ঞাপন, পেশাজীবীদের মাঝে বিতরণ এবং নেতাকর্মীদের ব্যাপকভাবে মাঠে নামানো হবে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের তপশিলের পরেই এ কাজে নেমে পড়বে বিএনপি।

বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য তপশিল নিয়েও আলোচনা হয়। চলতি সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ আজকালের মধ্যে এই তপশিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি মনে করছে, তপশিলের মধ্য দিয়ে দেশ পুরোপুরি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে যাবে। 

বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে স্থায়ী কমিটিকে ব্রিফ করেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন– তাঁকে কীভাবে সুস্থ করে তোলা যায়। আপাতত তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে না।

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।