ঢাকা, বুধবার ১৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৫২:৩৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

যমজ বোনদের মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন পূরণ

উইমেননিউজ ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৫৪ এএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

একসঙ্গে জন্ম, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে পড়েছেন একই প্রতিষ্ঠানে। সব ক্ষেত্রে চারজনের ফলাফলও প্রায় একই। রংপুর ও পঞ্চগড়ের এই যমজ বোনেরা এবার একসঙ্গে সুযোগ পেয়েছেন চিকিৎসাশাস্ত্র পাঠের। তবে আলাদা প্রতিষ্ঠানে। এদিকে নরসিংদীর মুদি দোকানি মিজানুর রহমানের বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কারণ, তাঁর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম শান্ত মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।

ভবিষ্যতে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হতে চান শান্ত। করতে চান এলাকার হতদরিদ্র মানুষের সেবা। ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম হওয়ার ব্যাপারে শান্ত বলেন, ‘মা-বাবাকে দেওয়া কথা রাখতেই মেডিকেলে ভর্তির প্রস্তুতি শুরু করি। যেহেতু ডাক্তার হতে চেয়েছি, এমন ফলের অপেক্ষাতেই ছিলাম। ফল জানানোর পর যে অনুভূতি হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।’

সাফল্যের পেছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি– এমন প্রশ্নে শান্ত জানান, মা-বাবা ও শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা সবসময় সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর আলম শান্ত নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের খামারেরচর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মুদি দোকানি মিজানুর রহমান ও গৃহিণী ফেরদৌসী বেগমের বড় ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে বড় শান্ত। তাঁর দুই বোন স্থানীয় বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং তারাও মেধাবী শিক্ষার্থী বলে জানান মা ফেরদৌসী বেগম।

পরিবার ও শিক্ষকরা জানান, ছোটবেলা থেকেই শান্ত পড়ালেখায় মনোযোগী ও শান্ত স্বভাবের। নামের সঙ্গে তাঁর জীবনচর্চার সুন্দর মিল রয়েছে। শান্ত ২০২৩ সালে বারৈচা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে এসএসসি ও চলতি বছর রাজধানীর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এইচএসসি পরীক্ষার পর তিনি ঢাকায় মেডিকেল ভর্তি কোচিং করেন।

শান্তর বাবা মিজানুর রহমান বলেন, খবরটি শোনার পর গর্বে বুক ভরে গেছে। মানুষ শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন। শান্ত যত বড় চিকিৎসকই হোক, গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার ইচ্ছা তাঁর।
এ ছাড়া রংপুরের যমজ বোন হাফসা ইসমাত নাজাহ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে এবং ও হাজ্জা ইসমাত নুবাহ নীলফামারী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। 

নাজাহ ও নুবাহ মিঠাপুকুর মডেল সরকারি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং রংপুর সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি শেষ করেছেন। 

তাদের বাবা-মা মোতাহার মণ্ডল ও শাহানাজ বেগম বলছেন, দুই মেয়ে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। তাদের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা। দুই বোনও জানিয়েছেন, তারা ভবিষ্যতে ভালো ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চান।
রংপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ফিরোজুর রহমান বলেছেন, কলেজের ধারাবাহিক ভালো ফলাফলের অংশ হিসেবে দুই বোন মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন, যা সত্যিই আনন্দের খবর।

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার খগের হাট এলাকার ভূপেন্দ্র নাথ রায় ও শান্তনা রানী মহন্ত দম্পতির যমজ কন্যা পূজা রানী রায় ও পলি রানী রায়ের সাফল্যে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। পূজা কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজে এবং পলি নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন।
পূজা পলির বাবা ভূপেন্দ্র নাথ রায় একজন কৃষক, মা শান্তনা রানী মহন্ত বিনয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। দুই বোনই শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন বিনয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। মাধ্যমিক বিনয়পুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে। 

পলি ২০২৩ সালে গোল্ডেন এ প্লাসসহ বৃত্তি অর্জন করে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হন। দুই বোনই ২০২৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস এবং ২০২৫ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাসসহ উত্তীর্ণ হন। এ ছাড়াও তারা ট্যালেন্টপুল বৃত্তিও লাভ করেন।

পূজা রানী রায় জানান, তাঁর স্বপ্ন একজন কার্ডিওলজিস্ট হওয়ার। পলি রানী রায় গাইনোকোলজিস্ট হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অধ্যয়ন করছেন। যমজ বোনদের বড় বোন যুক্তি রানী রায় বর্তমানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

দুই মেয়ের একসঙ্গে এই সাফল্যে মা-বাবা আবেগাপ্লুত। তারা বলেন, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলেই আজ তারা এই সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা অত্যন্ত গর্বিত।’