ঢাকা, শনিবার ২০, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:১৭:৪৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নির্বাচনের বাকি ৫৩ দিন, সামনের প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৫৭ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে আর মাত্র ৫৩ দিন। নির্বাচনের আগে এই সময়ের প্রত্যেকটি দিনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর গত এক সপ্তাহে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীকে গুলি করা, জুলাই যোদ্ধাদের হুমকি, ‘মব সন্ত্রাস’ ও গণমাধ্যমের ওপর হামলাসহ নানা ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে কিনা এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা।

চলতি ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল দেশের মানুষ। ১১ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দল ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনি মাঠেও নামেন। কিন্তু তফসিল ঘোষণার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরবর্তী ৭ দিনে দেশে ও বিদেশে তার চিকিৎসা চলাকালীন একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে; যাতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে।

হাদির ওপর হামলার দিনই প্রথমে হাসপাতাল থেকে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা শুরু হয়। স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। হাদি বাঁচবে কিনা-এ নিয়ে তখন থেকেই জনমনে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে টানা ৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান হাদি। এদিকে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীসহ সারা দেশ অস্থির হয়ে ওঠে। এই ঘটনার সূত্র ধরে ঘটনায় মব-সন্ত্রাস, গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ, উদীচী, ছায়ানটে হামলাসহ নানা ঘটনা ঘটে। এতে সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

ঘটনার আকস্মিকতায় সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সবাই হতবাক হয়ে যান। বিএনপির স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। সরকার তাদের অবস্থান ব্যক্ত করে বিবৃতি দেয়। এসব ঘটনায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা এ নিয়ে আরেক দফা গুঞ্জন ছড়ায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের মতে, এসব (হাদির মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা-প্রবাহ) কিছু করা হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করার জন্য। হাদিকে হত্যার ঘটনায় গভীর ষড়যন্ত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন বানচাল চেষ্টা করছে পতিত সরকার। দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা ব্যাহত করতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শহীদ ওসমান হাদির শাহাদতের পর দেশের ছাত্র-জনতার মধ্যে যে ক্ষোভ ও আবেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা ন্যায্য ও বোধগম্য। কিন্তু এই ক্ষোভকে পুঁজি করে কোনো পক্ষ যদি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্পষ্টভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করছি-এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, নির্বাচন হতে হবে। যত ধরনের শঙ্কা, সমস্যা আছে তা আমাদের অতিক্রম করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এর কোনো বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে সরকারকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে পরস্পর দোষারোপ ও হানাহানিতে লিপ্ত না হয়ে একটা পারস্পরিক সমঝোতার মধ্যে নিয়ে নির্বাচনি কাজ করতে হবে।

এদিকে, ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করার উদ্যোগ ও সংবর্ধনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। বাছাই শেষ ৪ জানুয়ারি, ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। ২১ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ হলে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার চলবে।

হাদির মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামনের এই ৫৩ দিনে আরও না জানি কি সব ঘটনা ঘটে! কারণ সরকার, বিএনপি ও জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তফসিল ঘোষণার পরেও নানা গুজব ডালপালা মেলছে। থামানো যাচ্ছে না মব সন্ত্রাস। ফলে নির্বাচনের আগের সময়টাতে আবার কি ঘটনা ঘটে, তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ঘটনা সামনে রয়েছে। মনোনয়নপত্র কেনা, যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনের জন্য চূড়ান্তভাবে নামার কথা রয়েছে দলগুলোর। এরপর নির্বাচনি মাঠে নামার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও আছে নানা শঙ্কা। কেউ বলছেন, জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে সংঘাতের কথা। আবার কারও কারও মতে, আওয়ামী লীগ নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টা করবে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি পদক্ষেপ নেয়, সেটি নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা রয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী ৫৩ দিন অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।