ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৪৭:৩৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

এসেছে হেমন্ত, নবান্ন উৎসবের সূচনা

সালেহীন বাবু

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ১২:৪৪ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার

"সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে"।কবি সুফিয়া কামালের "হেমন্ত" কবিতায় হলুদ গাঁদায় চিঠি লেখে এভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে হেমন্তকে। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে আবহমান বাংলায় ষড় ঋতুর পরিক্রমায় এলো হেমন্ত। আজ পয়লা কার্তিক।

 

হেমন্ত হল ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুই মাস নিয়ে হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর। শরতের কাশফুল মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই হেমন্তের আগমন ঘটে। এর পরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। হেমন্তে সকালবেলা আবছা কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারদিকের মাঠঘাট।

 

সকালে ধান শিষের ডগায় যে শিশির জমে থাকে তা হেমন্তের আগমণ জানান দেয়। সকালের প্রথম রোদের বর্ণচ্ছটায় গাছের পাতাগুলো খিলখিল করে হেসে ওঠে। দৃষ্টিসীমা যতদূর গিয়ে পৌঁছে দেখা যায়, আলোকজ্জ্বল সকাল তার অভাবনীয় সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষমান। গাছেদের নরম-কচি পাতাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টি রোদ আর সুনীল আকাশ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। হেমন্তের রাতে মেঘমুক্ত আকাশে জোৎস্নার আলো যেন অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি ঠিকরে পড়ে।

 

আর এই সময়ে হালকা শীত অনুভূত হয়। ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন ও আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ক হয়, আর তখনই ধান কাটার উপযোগী হয়। আর এই হেমন্তে শুরু হয় কৃষকের ঘরে ফসল তোলার প্রস্তুতি। কাস্তে হাতে কৃষকরা মাঠে মাঠে আমন ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর নতুন ফসল দেখে কৃষকের মুখে ফুটে ওঠে হাসি।

 

নবান্নের উল্লেখ ছাড়া হেমন্তের কথা শেষ হয় না। আবহমান বাংলার শস্যভিত্তিক বড় মাপের একটি লোকউৎসব হল নবান্ন। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়, নবান্ন অর্থ-নব নতুন আর অন্ন হলো ভাত।

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফসল তোলার সাথে সাথেই নতুন চালের ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। নবান্নে মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়। হেমন্তকে তাই উৎসবের ঋতু বললেও ভুল হবে না।

 

হেমন্তে বিভিন্ন ধরনের ফলের সমারোহ ঘটে হেমন্তের দুটি বিশিষ্ট ফল হল কামরাঙা ও চালতা।

 

নারিকেল এ ঋতুর প্রধান ফল। সুতরাং গৃহিণীর পিঠার তালিকায় থাকে নারিকেলে তৈরি রকমারি মুখরোচক খাবার। মহিলারা সারা রাত জেগে পিঠা তৈরি করে ,আর সে কষ্ট আনন্দময় হয়ে ওঠে সকালে তা পড়শিদের মাঝে বিতরণ করে।

 

হেমন্তে শিউলী, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, ধারমার, রাজঅশোক প্রর্ভতি নানা ধরনের ফুল ফোটে। হেমন্তের সকালে শিউলীর সৌরভ বাঙালির প্রাণে আনে উৎসবের মেজাজ।


অনুভবের ঋতু হেমন্ত, ম্লান, ধূসর, অস্পষ্ট, তাকে যত অনুভব করা যায় তাত দেখা যায় না; শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষার মতো হেমন্ত এমন তীব্র, প্রখর, উন্মোচিত নয়, বসন্তের মতো তার বর্ণ, গন্ধ, গরিমা নেই, হেমন্ত মৌন, শীতল, অন্তর্মূখী।

 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার "হিমের রাতে" কবিতায় হেমন্তের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে লিখেছেন-
হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে,
হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।
ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো
‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,
জ্বালাও আলো,
আপন আলো,
সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।