দু’দিনব্যাপী নবান্ন উৎসব আজ শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:১০ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
দু’দিনব্যাপী ‘জাতীয় নবান্ন উৎসব ১৪২৫’ আজ বৃহস্পতিবা শুরু হবে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজিত এই চলবে আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত।
বরাবরের মতো এবারও উৎসব হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের বকুলতলায়। কাল সকাল ৭টা ১ মিনিটে উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি ব্যাক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। ঢাক-ঢোল বাদনের ও নৃত্যের মধ্যদিয়ে উৎসবের সূচনা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উৎসব পর্ষদের চেয়ারম্যান লায়লা হাসান। বক্তব্য রাখবেন সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, শাহরিয়ার সালাম ও ডা. এ এম শামীম। পরে বের হবে শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে পুনরায় বিকেল তিনটায় বকুল তলায় শুরু হবে গান, আবৃত্তি, নাটক, আলোচনা। চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।
নবান্ন উৎসব পর্ষদের আহবায়ক শাহরিয়ার সালাম এ সব তথ্য জানান। তিনি জানান, এবারের উৎসবে ক্ষুদ্র নৃÑগোষ্ঠির বিভিন্ন পরিবেশনা থাকছে। নবান্নের নানা কর্মসূচির সঙ্গে এই আয়োজন দর্শক-শ্রোতাদের ভাল লাগবে।
তিনি জানান, উৎসবের দ্বিতীয় দিন ১৬ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত নবান্নের শিশু প্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে ২২টি শিশু সংগঠন তাদের নিজ-নিজ পরিবেশনায় অংশ নেবেন। একই সঙ্গে শিশুরা উৎসব প্রাঙ্গণে দিনভর চিত্রাঙ্কণে অংশ নেবেন। তাদের আঁকা ছবিগুলো নিয়ে উৎসবে প্রদর্শনী চলবে। শিশুদের আঁকা ছবির ভিউকার্ড প্রকাশ করা হবে। দু’দিনের উৎসবে বিভিন্ন ইভেন্টে ১২ শত শিল্পী অংশ নেবেন।
নবান্ন কি : নবান্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। "নবান্ন" শব্দের অর্থ "নতুন অন্ন"। নবান্ন উৎসব হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।কোথাও কোথাও মাঘ মাসেও নবান্ন উদযাপনের প্রথা রয়েছে। নবান্ন অনুষ্ঠানে নতুন অন্ন পিতৃপুরুষ, দেবতা, কাক ইত্যাদি প্রাণীকে উৎসর্গ করে এবং আত্মীয়-স্বজনকে পরিবেশন করার পর গৃহকর্তা ও পরিবারবর্গ নতুন গুড়সহ নতুন অন্ন গ্রহণ করেন। নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা নবান্নের অঙ্গ একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কাকের মাধ্যমে ওই খাদ্য মৃতের আত্মার কাছে পৌঁছে যায়। এই নৈবেদ্যকে বলে "কাকবলী"। অতীতে পৌষ সংক্রান্তির দিনও গৃহদেবতাকে নবান্ন নিবেদন করার প্রথা ছিল
নবান্ন উৎসব হিন্দুদের একটি প্রাচীন প্রথা। হিন্দুশাস্ত্রে নবান্নের উল্লেখ ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, নতুন ধান উৎপাদনের সময় পিতৃপুরুষ অন্ন প্রার্থনা করে থাকেন। এই কারণে হিন্দুরা পার্বণ বিধি অনুযায়ে নবান্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করে থাকেন। শাস্ত্রমতে, নবান্ন শ্রাদ্ধ না করে নতুন অন্ন গ্রহণ করলে পাপের ভাগী হতে হয়।
এক সময় অত্যন্ত সাড়ম্বরে নবান্ন উৎসব উদযাপন হত। সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো।কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলায়,ঐতিহ্যবাহী এই নবান্ন উৎসব বিলুপ্তপ্রায়। তবে এখনও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু কিছু এলাকায় নবান্ন উৎসব অত্যান্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশের বগুড়া জেলার আদমদিঘি উপজেলার শালগ্রামসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে আবহমানকাল ধরে নবান্ন উৎসব অত্যান্ত উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে আসছে।
১৯৯৮ সন থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে নবান্ন উৎসব উদযাপন শুরু হয়েছে। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্যাপন পর্ষদ প্রতিবছর পহেলা অগ্রহায়ণ তারিখে নবান্ন উৎসব উদ্যাপন করে। ইদানীং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আনুষ্ঠানিক নবান্ন উৎসব উদ্যাপিত হচ্ছে।
