ভিকারুননিসার শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য চলছেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৪:০০ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
ছবি : উইমেন নিউজ
সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের লাগামহীন কোচিং বাণিজ্য চলছে। বেইলীরোডের ভিকারুননিসার প্রধান শাখার আশেপাশের পাড়াগুলোতে ব্যাঙের ছাদার মত গড়ে উঠেছে কোচিং সেন্টার। এসব অধিকাংশ কোচিং সেন্টারের মালিক ভিকারুননেসার স্কুল ও কলেজ শাখার শিক্ষকরা।
আজ শুক্রবার সকালে সরজমিনে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশের বেইলী রোড ও সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এই দুটি এলাকার প্রায় শখানেক কোচিং সেন্টার রয়েছে। এই সেন্টারগুলোতে অধিকাংশগুলোতেই ভিকারুননেসার বাংলা ও ইংরেজী ভার্সনের ছাত্রীরা কোচিং করছে। প্রতিটি সেন্টার মালিকও এই স্কুলের শিক্ষকরাই।
সিদ্ধেশ্বরী লেনের মনোয়ারা হাসপাতালের ঠিক বিপরিতে বই ঘরের গলি হিসেবে পরিচিত একটি ছোট্ট গলিতে গিয়ে দেখা গেছে ছোট্ট স্টোর রুম, বাড়ির পরিত্যাক্ত গ্যারাজ, সিড়ির ঘরসহ চকচকে ফ্ল্যাটবাড়ি ভাড়ার করে চলছে কোচিং সেন্টার। ছোট্ট ছোট্ট অন্ধাকারচ্ছন্ন রুমে বেঞ্চে গাদাগাদি করে ছাত্রীরা কোচিং করছে বাংলা, ধর্ম, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়নসহ নানা বিষয়ে।
পুরো গলিজুড়ে শিক্ষকদের ছবিসহ নানা রকম পোস্টার, ব্যানার ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষকদের বিশেষত্ব লেখা রংবেরংয়ের স্টিকারের ছেয়ে আছে গলির দুপাশের দেয়াল।
এই গলির ৬৪ নম্বর বাসায় ঢুকে দেখা গেছে, মাঝারি মাপের একটি রুমে প্রায় ৫০ মেয়েকে বাংলা কোচিং করাচ্ছেন ভিকারুননিসা নূন কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌসি বেগম। তিনি সাউন্ড স্পিকারে লেকচার দিচ্ছেন। আর ছাত্রীরা তা শুনছে।
ঠিক তার পাশের রুমে কোচিং করান ড. ফারহানা খানম। তিনি একই কলেজের পদার্থ বিভাগের প্রভাষক। তিনি নিজ কলেজের ছাত্রী ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছা্ত্রীদেরও কোচিং করিয়ে থাকেন। আজ সকালে তার কোচিং রুমে গিয়ে দেখা গেছে তিনি তখনও ক্লাসে আসেননি। তবে ছাত্র-ছাত্রীরা তার জন্য অপেক্ষা করছে।
এই কোচিং সেন্টারের সামনে বেশ কয়েকজন অভিভাবক নিজের সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের কেউ কেউ সন্তানকে কোচিংয়ে দিয়েছেন জানালেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
৪৬ নম্বর বিল্ডিংয়ের ঠিক বিপরিতে রয়েছে চমক একাডেমিক কোচিং। চারতলা এই ভবনে ইংরেজী ও বাংলা ভার্সনের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানের দুটি সাইনবোর্ডের একটি লেখা রয়েছে একাডেমিক কোচিং, ক্লাস টু থেকে ফাইভ। অন্যটিতে লেখা রয়েছে ক্লাস থ্রি থেকে টেন। লেখা রয়েছে এখানে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসি’র কোচিং করানো হয়।
এছাড়াও রায়হান একাডেমিক কোচিং, আইডিয়া কোচিং, বিটপসহ আরো নানা নামে কোচিং সেন্টার রয়েছে ওই একই গলিতে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নামেও রয়েছে কোচিং সেন্টার।
অভিযোগ রয়েছে, কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারি নীতিমালা না মেনেই গড়ে উঠেছে এসব প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধে সরকারি আইন শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ।
এদিকে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীতে এক ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বলেছেন, কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বই বন্ধে সরকার আইন করতে যাচ্ছে। যে শিক্ষকরা ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিংয়ে পড়াতে ব্যস্ত থাকেন, তাদেরও এ আইনের আওতায় আনা হবে।