ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮, এপ্রিল ২০২৪ ২২:৫৯:৩৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

স্টুডেন্ট চেঞ্জমেকাররাই পারে সমাজকে বদলে দিতে

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০৬ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রবিবার

স্টুডেন্ট চেঞ্জমেকাররাই পারে সমাজকে বদলে দিতে, শিশু ও নারী ওশিশু নির্যাতন বন্ধ করতে। চেঞ্জমেকাররা নারীর প্রতি নিজের চিন্তা-ভাবনাকে পরিবর্তন করে আশপাশের মানুষকে পরিবর্তন করবে এবং সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা করেন ‘স্টুডেন্ট চেঞ্জমেকার সম্মেলন ২০১৯’ এর আলোচকরা।  

গাজীপুরের আরণ্যক ইকো রিসোর্টে ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি  তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন আয়োজন করে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট। সম্মেলনে অংশ নেয় ৩৪ জেলার ৭৭ স্টুডেন্ট চেঞ্জমেকার। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠানে ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধসহ নানা বয়সী মানুষের মানসিকতা পরিবর্তনে কাজ করছে।

সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক বলেন, স্টুডেন্ট চেঞ্জমেকাররাই পারে সমাজকে বদলে দিতে, শিশু ও নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে। এসব নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সমাজে সুস্থ মানসিকতার চর্চা করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতার শিকার এদেশের নারীরাও মুক্তিযোদ্ধা । তাদের অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে। 

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে নারীরা অনেক পথ এগিয়েছে। তবে পথে পথে অনেক বাধা এখনো রয়েছে। নারীদের সকল জড়তা, বাধার শেকল ভেঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সাবলম্বী হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। 

পারিবারিক নির্যাতন ও নানা কারণে সম্প্রতি আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ায় চেঞ্জমেকারদের প্রশ্নের জবাবে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র কর্মসূচি সমন্বয়ক রেজয়ানুল করিম বলেন, আত্ম্যহত্যার ঘটনাগুলোতে দেখা যায় কোন একটা এলাকায় বেশি ঘটে। এলাকার পারিপার্শ্বিক অবস্থা আত্মহত্যার পরিবেশ তৈরি করে। 

তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে সহনশীলতার অভাব, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া, ভোগবিলাসী চিন্তাভাবনা মানসিক অশান্তি তৈরি করে এবং তা না পেয়ে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করে অনেকে। 

তিনি আরও বলেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব, মাদকাসক্তি, তথ্য প্রযুক্তির অপব্যাবহারও আজকাল আত্মহত্যার কারণ হচ্ছে। জীবনের প্রতি এমন নেতিবাচক মানসিকতা পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে স্টুডেন্ট চেঞ্জমেকাররা ।
 
তিনিআরও বলেন, এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে তরুণদের নিজেদের সুপ্ত গুণগুলো খুঁজে বের করওে তা চর্চা করতে হবে। সকল অন্যায়, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই হতাশা থেকে দূরে থাকা যাবে এবং মাদকাসক্তি ও আত্ম্যহত্যার ভয়াল থাবা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। 

উপস্থিত স্টুডেন্টদের আরেক প্রশ্নের জবাবে দৈনিক যুগান্তর এর সাব-এডিটর রিতা ভৌমিক বলেন, ধর্ষণের খবরগুলোর ফলোআপ করার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের ও সাংবাদিকদের উদাসীনতাও অনেকখানি দায়ী। তাছাড়া একটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি নতুন ঘটনা সংবাদের জায়গাটা নিয়ে নেয়। আবার অনেক সময়ই সাংবাদিকরা রিপোর্টের কাজ শেষ করার আগেই ধর্ষক এবং ধর্ষণের শিকার নারীর বা শিশুর পরিবার নিজেরা গোপনে আপোষ করে নেয়, তখন সেই ঘটনার ফলোআপ দেয়ার মত আর কোন সংবাদ থাকে না। আবার অনেক সময় এসব ঘটনা ও সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশে সাংবাদিকদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। 

সম্মেলনের স্টুডেন্টদের মুক্তিযুদ্ধ ও নেতৃত্বের বিকাশ, মৌলবাদ ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে আমরাই পারি জোটের কো- চেয়ার এম.বি. আখতার বলেন, পরিবর্তনশীল সমাজে পরিবর্তনই একমাত্র সত্য। এই পরিবর্তনকে যারা মেনে নিতে চান না তারাই মৌলবাদী মতাদর্শের অধিকারী। গণতন্ত্র মানুষের অধিকার সুনিশ্চিত করে। নিজে অধিকার পেতে হলে অন্যকে তার প্রাপ্য অধিকার দেবার মানসিকতাই হল গণতন্ত্র। যা গণতন্ত্রে অনুপস্থিত তাই হল মৌলবাদের মুলমন্ত্র। 

তিনি বলেন, মৌলবাদীরা ধর্মকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। মৌলবাদের কারণে গণতন্ত্র প্রতিহত হচ্ছে। মৌলবাদের নেতিবাচক প্রভাব যাতে মানুষের ওপর না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। 
 
সম্মেলনের বিশেষ অতিথি শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ ও নারী নির্যাতনের সম্পর্ক তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শত্রুপক্ষ নারীদের ব্যবহার করেছিল বাঙ্গালিদের দুর্বল করে দেয়ার অস্ত্র হিসাবে। বাঙ্গালিদের নির্বংশ করে, বাঙালি নারীদের ধর্ষণ করে গর্ভে সন্তান দিয়ে পাকিস্তানীদের নিজেদের বংশবিস্তার করার দুরভিসন্ধি এঁটেছিল। ধর্ষণের শিকার নারী অর্থাৎ বীরাঙ্গনারা ঠিক ততটাই সম্মান পাওয়ার যোগ্য যতটা সম্মান একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া হয়। 

বর্তমান সময়ে নারী নির্যাতন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগে নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। একে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। নারী আন্দোলন গুলোর মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নারী ও পুরুষকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ না করে, একে অপরের সহযোগী করে গড়ে তোলা। 

ভালবাসা ও চাওয়া পাওয়া নিয়ে তরুণদের মতামতের প্রেক্ষিতে আলোচনা পর্বে প্রতিষ্ঠানটির সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক ভালবাসার চারটি স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন।

প্রথমত, একটি সম্পর্ককে ভালবাসার সম্পর্কে রূপ দিতে দু’জন ব্যক্তির পারস্পারিক সম্মতি থাকতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, সম্পর্কটিতে পরস্পরের প্রতি মর্যাদা ও সম্মান দেখানোর মানসিকতা থাকা চাই। 

তৃতীয়ত, সম্পর্কে একে অপরের মতামতকে গুরুত্ব দিতে জানতে হবে।

চতুর্থত, ভালবাসায় পরস্পরের পছন্দ-অপছন্দকে মূল্যায়ন জরুরি এবং সে অনুযায়ী আচরণ করতে হবে।

তিনদিনের এ আয়োজনে চেঞ্জমেকার, সেচ্ছাশ্রম, বাল্যবিবাহ, পর্ণগ্রাফি, সাইবার ক্রাইম আইন নিয়েও আলোচনা হয়। এছাড়াও ছয়মাসের কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়। 

নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন বন্ধে জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি নারী ও কন্যাশিশু যেন রাষ্ট্রীয় সেবা ও আইনি সহযোগিতা পায় এবং নির্যাতনের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পাওে সে লক্ষ্যে কাজ করছে ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’।