এফ আর টাওয়ারে আগুন: যেভাবে বাঁচলেন পারভিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:২৬ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৯ শুক্রবার
চারদিকে কালো ধোঁয়া। কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে পুরো ভবনটি কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। তাই সেখান থেকে বের হয়ে আসা ছিল প্রায় অসম্ভব। এভাবেই সেই ভয়ার্ত মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ২২ তলা ফারুক রূপায়ন (এফ আর) টাওয়ারের ১৭ তলায় কাজ করা এক নারী।
বৃহস্পতিবার ভবনটির ষষ্ঠ তলায় সূত্রপাত হওয়া এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যু ও অসংখ্য মানুষ আহত হয়। আর সেখান থেকে কোনো রকমে জীবন নিয়ে ফেরেন সোনিয়া পারভিন (৩৯) নামের ওই নারী।
আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেডের ক্রেডিট কন্ট্রোল ম্যানেজার পারভিন বলেন, ‘আমরা ওই সময় একটা বিভাগীয় সভায় ছিলাম। হঠাৎ জানালা দিয়ে দেখলাম অনেক কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। খেয়াল করলাম, আমাদের ভবনেই আগুন লেগেছে।‘
‘তাৎক্ষণিকভাবে আমি অন্য সহকর্মীদের সাথে অফিস থেকে বের হয়ে সিঁড়ির কাছে যাই। সেখানে আমরা অসংখ্য মানুষের আত্মচিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম এবং সিঁড়িটি কালো ধোঁয়ায় ভরে ছিল’, যোগ করেন পারভিন।
মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে পুরো ভবনটি ধোঁয়ায় ভরে যায় জানিয়ে পারভিন বলেন, ‘আমরা ছাদে চলে যাই। আমিসহ প্রায় ৫০ জনের মতো আমরা ছাদে যেতে পেরেছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ার কারণে সেখানে বেশি সময় টিকে থাকা সম্ভব ছিল না।’
সিঁড়িতে ধোঁয়া থাকায় অন্য সহকর্মীদের সাথে ছাদে চলে যান পারভিন। কিন্তু সেখানেও বেশি সময় থাকতে না পারায় তারা তাদের পাশের ভবন আহমেদ টাওয়ারে লাফিয়ে যান এবং কোনো রকমে নিচে নামতে সক্ষম হন।
পারভিন জানান, তিনি অনেককে ভবনের জানালা ভেঙে লাফ দিতে দেখেছেন। তাদের ছাদে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না বলে জানালা ভেঙে লাফ দিতে গিয়ে অনেকে নিচে পড়ে যান।
অগ্নিদগ্ধ এফআর টাওয়ার ভবনে আটকা পড়া মানুষগুলো দুটি উপায়ে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। কেউ ছাদে গিয়েছেন এবং কেউ জানালা ভেঙে পাশের আহমেদ ভবনে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আগুন লাগার পর মাত্র ১৫ মিনিট পর্যন্ত ছাদে যাওয়া সম্ভব ছিল অর্থাৎ বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে আগুন লাগার পর ১টার পর আর ছাদে যাওয়া সম্ভব ছিল না জানিয়ে পারভিন বলেন, এরপর সিঁড়িতে ধোঁয়ার পরিমাণ এতটাই ছিল যে আর যাওয়া সম্ভব ছিল না।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া এই নারী আরও জানান, তাদের ফ্লোরে ৬৫ জন কর্মী থাকলেও চারজন বের হতে পারেননি। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে তাদের উদ্ধার করে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করেন।
২২ তলা ভবনটিতে প্রায় দেড় ডজনেরও বেশি বিভিন্ন অফিস থাকলেও কোনো জরুরি নির্গমন পথ ছিল না জানিয়ে পারভিন বলেন, ‘আমি এ ভবনে প্রায় সাত বছর ধরে কাজ করছি। কয়েক বছর আগে একটি ভূমিকম্পের সময়ও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল.. তখনও আতঙ্কে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছিলেন।’
